1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হবে

২৭ অক্টোবর ২০১১

২০১১ সালের অক্টোবরে চারদিনের সফরে জার্মানি আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেসময় বার্লিনের ঐতিহাসিক হোটেল আডলনে ডয়চে ভেলে'কে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে তাঁর অভিমত জানান প্রধানমন্ত্রী৷

https://p.dw.com/p/12zk5
Ministerpräsidentin Sheikh Hasina in Interview mit eutsche Welle. Herr Abdullah Al-Farooq, CvD, Bengali-Redation, hat am 24.10.11 diese Bilder in Berlin aufgenommen.
ডয়চে ভেলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাছবি: DW

জার্মানিকে ঘিরে স্মৃতি

জার্মানির অনুষঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনের কোণে এই দেশটির জন্য একটি জায়গা রয়েছে৷ এবং তার কারণ অবোধ্য নয়৷ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান যখন ঘাতকদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হলেন সপরিবারে, তখন শেখ হাসিনা তাঁর স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার গবেষণাকাজের সূত্রে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন৷ তিনি এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা তাই প্রাণে বেঁচে যান৷ জার্মানিতে এলে কি সেই যন্ত্রণাকর স্মৃতি হানা দিতে চায়?

প্রধানমন্ত্রী অকপটে জানালেন, স্বাভাবিকভাবেই সেই স্মৃতি এসে উপস্থিত হয়৷ সেই সময় জার্মানিতেই তাঁরা প্রথম আশ্রয় পেয়েছিলেন৷ ভুলতে পারেননা সেই বেদনাদায়ক মুহূর্তটি যখন হঠাৎ জানতে পারলেন যে তাঁদের আর কেউ নেই৷ বললেন: ‘‘যখনই জার্মানিতে আসি তখনই সেই স্মৃতিগুলো মানসপটে ভেসে আসে৷''

Berlin/ Bundeskanzlerin Angela Merkel (CDU, r.) und die Ministerpraesidentin von Bangladesch, Sheikh Hasina Wajed, kommen am Dienstag (25.10.11) im Bundeskanzleramt in Berlin zu eienr gemeinsamen Pressekonferenz. Kanzlerin Merkel empfing Wajed zu einem Gespraech. (zu dapd-Text) Foto: Clemens Bilan/dapd
জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল’এর সঙ্গে শেখ হাসিনাছবি: dapd

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশ জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আরো প্রসার ঘটবে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আশাবাদী৷ এ নিয়ে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে৷ তিনি যেভাবে সাহসের সঙ্গে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার উল্লেখ করতে ভোলেননি জার্মান চ্যান্সেলর তাঁদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে৷ এই সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে গিয়ে শেখ হাসিনা স্বীকার করেন যে স্বাধীনতার সূচনা থেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে, তার উন্নয়ন প্রক্রিয়া জার্মানি সবসময় সাহায্য দিয়ে এসেছে৷ জার্মানির উদার সমর্থন বাংলাদেশ পেয়েছে বলেই তিনি উল্লেখ করেন৷ জার্মান উদ্যোক্তাদের প্রতি বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান৷ সন্তোষ প্রকাশ করেন এই বলে যে জার্মান উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণের নতুন খাতেও বিনিয়োগ করার দিকে ঝুঁকছেন৷ তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে সরকার নানা ব্যবস্থা নিয়েছেন৷

বিরোধী দল প্রসঙ্গে

বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, সংসদ বর্জন করার কোন যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারছেননা বিরোধী নেত্রী৷ তিনি বলেন, এই বর্জন গণতন্ত্রকে হেয় করারই নামান্তর৷

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ অব্যাহত থাকবে বলেই প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দৃঢ় বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ তাঁর সরকার শুরু করেছে৷ এটা জাতির দাবি ছিল৷ দাবি ছিল দেশের যুবসমাজের৷ তিনি বলেন: ‘‘বিচার যখন শুরু হয়েছে তা চলতে থাকবে এবং বিচার শেষও হবে৷''

প্রধানমন্ত্রী কড়া ভাষায় অভিযোগ করেন যে বিরোধী দলীয় নেত্রী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদের, তাদের মুক্তির পক্ষে বক্তব্য রাখছেন৷ এটাকে তিনি দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন৷ তিনি বলেন: ‘‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে৷ তারা চায় এই অপরাধীদের বিচার হোক৷ এবং ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই হবে৷''

The Prime Minister of Bangladesh Sheikh Hasina addresses a news conference with German Chancellor Angela Merkel, not seen, after a meeting at the chancellery in Berlin, Tuesday, Oct. 25, 2011. (Foto:Markus Schreiber/AP/dapd)
বার্লিনে বক্তব্য রাখছেন শেখ হাসিনাছবি: dapd

চ্যান্সেলরের সঙ্গে বৈঠক

জার্মানি সফরের শেষ দিনে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে আলোচনা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ আলোচনার পর এক যুক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি এবারকার সফরকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি মাইল স্টোন বলে অভিহিত করেন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ যে-ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে তা প্রশমিত করা এবং শিক্ষার মত খাতে জার্মানির সহযোগিতা ও সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশ সফর করারও আমন্ত্রণ জানান৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসের সঙ্গে যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তিনি তার প্রশংসা করেন৷ বলেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার আরও প্রসার ঘটবে৷

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জার্মানিতে এটা ছিল শেখ হাসিনার তৃতীয় সফর৷ চারদিনের এই সফর ছিল পূর্ণ৷ বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে শুরু হওয়া বাংলা স্কুল ‘পাঠশালা’র ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিলিত হন প্রধানমন্ত্রী৷ প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই ছেলেমেয়েরা নাচ ও গানের এক অনুষ্ঠান করে তাঁকে স্বাগত জানান৷ জার্মানিতে জন্ম নিয়েও তারা যেভাবে বাংলা ভাষার চর্চা করছে, লালন করছে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, তাতে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন৷

ব্যস্ত সফরসূচি

জার্মানিতে প্রবাসী বিশিষ্ট বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর৷ জার্মানিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শাখা ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে সম্বর্ধনা জানান৷ তিনি তাঁদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন৷

এই সফরে তিনি বার্লিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সামিটের উদ্বোধনী দিনে কি-নোট ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা৷ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করতে তিনি স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ও গবেষণা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান জানান৷

তাঁর এই সফরেই বার্লিনে আয়োজিত হয় বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বিনিয়োগ ফোরামে বক্তব্য রেখেছেন৷ এতে অংশ নেন বাংলাদেশ ও জার্মানির শিল্প ও উদ্যোক্তা মহলের শতাধিক প্রতিনিধি৷

ডয়চে ভেলের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী চলতি নানা বিষয় নিয়ে তাঁর মত প্রকাশ করেন৷ তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের মত বিষয় নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি৷

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান