যুবক হত্যা: কলকাতা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
৯ অক্টোবর ২০২২সেপ্টেম্বরের গোড়ায় বাগুইআটিতে দুই ছাত্রকে খুন করে দেহ ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা৷ বসিরহাটের মর্গে দিনের পর দিন দেহ পড়ে থাকলেও পুলিশ তা চিহ্নিত করতে অনেক দেরি করে৷ এ নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোষের মুখে পড়েন পুলিশকর্তারা৷ এর মাসখানেক পরেই আরেকটি রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটল৷ এবারও কাঠগড়ায় কলকাতা পুলিশ৷
গত বুধবার বিজয়া দশমীর রাতে বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলেন হরিদেবপুরের বাসিন্দা ২১ বছরের অয়ন মণ্ডল৷ তারপর থেকে তিনি বাড়ি ফেরেননি৷ পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে অয়নের দেহ উদ্ধার হয়৷ তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে৷ বান্ধবী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার৷ শনিবার পর্যন্ত এই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ পাঁচ জনকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আলিপুর আদালত৷ অয়নের বান্ধবীর ভাই নাবালক হওয়ায় তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে৷
অয়নের দেহ উদ্ধারের পর রমাকান্তপুরে তার বান্ধবীর বাড়িতে চড়াও হয় জনতা৷ ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়৷ নিহতের পরিজনরা বিক্ষোভ দেখান হরিদেবপুর থানায়৷ তারা পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন৷ থানার সামনে পথ অবরোধ করা হয়৷ পরিবারের অভিযোগ, বুধবার রাতে অয়ন বাড়ি না ফেরায় বৃহস্পতিবার নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়৷ ডায়েরি করার সময় হয়রানির মুখে পড়েন তারা৷ অয়নের বাবার দাবি, প্রথমে হরিদেবপুর থানা থেকে তাকে রিজেন্ট পার্ক থানায় পাঠানো হয়৷ পরে ফের হরিদেবপুর থানায় এসে ডায়েরি করেন তিনি৷ এরপর নিহতের বান্ধবীকে থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ৷ তদন্তে তৎপরতা দেখা যায়৷
অয়ন নিখোঁজ হওয়ার পরদিন সকালেই মগরাহাটের মাগুরপুকুরে অয়নের দেহ উদ্ধার হয়েছিল৷ এরপর দেহের ময়নাতদন্ত হয়৷ নিয়ম অনুযায়ী, দেহের ছবি তুলে ই-মেল করে আশপাশের থানায় পাঠানো হয়৷ বৃহস্পতিবার নিখোঁজ ডায়েরি করার পরও হরিদেবপুরের পুলিশ হাত গুটিয়ে ছিল, এমনই অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিজনরা৷ শুক্রবার দেহের ছবি অয়নের বাবাকে দেখায় পুলিশ৷ ছবি দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেন তিনি৷ প্রশ্ন উঠেছে, কেন পুলিশ ২৪ ঘণ্টা পর ই-মেল দেখল? বৃহস্পতিবারই মগরাহাট থানা ভবানী ভবনের মিসিং পার্সন স্কোয়াড থেকে শুরু করে অন্যান্য থানায় ই-মেল করার পরও কেন এমন সমন্বয়ের অভাব?
বাগুইআটির জোড়া খুনে বিস্তর হইচই হওয়ার পর কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল পুলিশকর্তা ও থানার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন৷ সূত্র অনুযায়ী, সেই বৈঠকে পুলিশ কমিশনার পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানান৷ কেন থানায় এলে অভিযোগকারীকে হয়রান হতে হচ্ছে, এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন৷ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর উপর জোর দেন তিনি৷ কিন্তু তাতে কাজ হয়নি বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷ অভিযোগও উঠেছে, অয়নের মোবাইলের সর্বশেষ টাওয়ারের অবস্থান চিহ্নিত করার পর পুলিশ বন্ধু-পরিজনদের খোঁজখবর করতে বলেছে৷
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতার প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান নজরুল ইসলাম পুলিশের কঠোর সমালোচনা করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শাসক দলের নেতাদের খুশি রাখা ছাড়া পুলিশ অন্য কোনো কাজে গুরুত্ব দেয় না৷ ফলে অভিযোগ জানাতে গেলে হয়রান হতেই হয়৷ অভিযোগই যারা নিতে চায় না, তারা তদন্ত কতটা তৎপরতার সঙ্গে করবে, সেটা বোঝাই যায়৷’’ বাগুইআটির পর হরিদেবপুর,শহরের অপরাধের চিত্রে বিচার ব্যবস্থার দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি৷ অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘অয়নকে যারা খুন করল তারা ধরা পড়লেও সাজা কবে পাবে? ২০ বছর ধরে মামলা চলবে৷ খুনি তার মধ্যে মারাই যেতে পারে৷ দুষ্কৃতীরা বুঝে গিয়েছে সহজে সাজা হবে না৷ তাই তারা অপরাধ করতে ভয় পায় না৷’’
যদিও আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই দাবির সঙ্গে একমত নন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতের বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা নতুন কোনো বিষয় নয়৷ বছরের পর বছর ধরে এমনটাই চলছে৷ সেজন্য অপরাধ বাড়ছে, এই ধারণা ভুল৷ অপরাধের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায়৷ একের পর এক ঘটনায় সেটাই বোঝা যাচ্ছে৷’’
২০২০ সালের ছবিঘর দেখুন...