‘ফ্রি’ ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার?
১৮ মে ২০১৬শুধু বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার নয়, প্রায় সব ধরণের সরকারি সেবাও পাওয়া যায় অনলাইনে৷
বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মার্কোস ইসোটাম প্রোগ্রামিং করছে পাঁচ বছর বয়স থেকে৷ সেসময় মিনি রোবট নিয়ন্ত্রণের সফটওয়্যার তৈরি করেছে সে৷ মার্কোস বলছে, ‘‘সফটওয়্যার বানাতে চাইলে আপনাকে এমন পারদর্শী হতে হবে, যেন আপনি যা চান, রোবট ঠিক তাই করে৷ আমি এস্তোনিয়ার সেরা প্রোগ্রামার হতে চাই৷''
এস্তোনিয়ার এই অবস্থার পেছনে আছেন সরকারের আইটি উপদেষ্টা সিম সিকুট৷ ডিজিটাল আইডি দিয়ে তিনি তাঁর সব ডিজিটাল তথ্য দেখতে পারেন৷ যেমন ব্যক্তিগত তথ্য ও চিকিৎসা, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আয় সংক্রান্ত তথ্য৷ মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আয়করও দাখিল করতে পারেন৷
তবে সমস্যা হলো, আগে থেকে ব্লক না করলে অন্যরাও এ সব তথ্য দেখতে পান৷ সিম সিকুট বলেন, ‘‘আমরা নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ দিয়েছি৷ কে বা কারা তথ্য দেখছে লগবুকের মাধ্যমে তা জানা যায়৷ যেমন এখানে আমি দেখতে পাচ্ছি, আমার পারিবারিক ডাক্তার ও দাঁতের চিকিৎসক আমার তথ্য দেখেছেন৷
সেটা ঠিক আছে৷ কিন্তু যদি দেখি, এমন কেউ আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য দেখছে, যার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে আমি ব্যবস্থা নিতে পারি৷ এভাবে পুলিশ ও নার্সদের শাস্তি পাওয়ারও উদাহরণ আছে৷''
সব কিছু অনলাইন হওয়ার কারণে বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরো বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি৷
তবে এমন ডিজিটাল ব্যবস্থা অরক্ষিতও বটে৷ ২০০৭ সালে একবার সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল এস্তোনিয়া৷ এখন তারা দেশের বাইরের সার্ভারে ব্যাকআপ স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাড়াতে চাইছে৷
সিম সিকুট বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংঘাত কিংবা অন্য কোনো কারণে ডিজিটাল ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিলেও আমাদের সরকার পুরোপুরি কাজ করতে পারবে, নাগরিকরা সব সেবা ব্যবহার করতে পারবেন৷ কারণ ভবিষ্যতে দেশের বাইরে স্থাপিত সার্ভারে সব তথ্য জমা থাকবে৷ ফলে আমরা সব সেবা দিতে পারবো৷''
এমন পরিবেশ পেয়ে একের পর এক স্টার্টআপ কোম্পানি গড়ে উঠছে৷ আলভার লুমবার্গ ও তাঁর এক সহকর্মী মাত্র ১৮ মিনিটে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন৷ এ জন্য তাদের কারও সঙ্গে কথা বলতে হয়নি কিংবা জটিলতা পোহাতে হয়নি৷
তাদের কোম্পানি অনলাইনে অর্থ প্রেরণ সুবিধা দিয়ে থাকে – ব্যাংকের চেয়ে কম দামে৷
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হয় এস্তোনিয়া৷ এরপর একেবারে নতুন করে শুরু করে দেশটি৷
বিদেশি কোম্পানিগুলো যেন এস্তোনিয়ার ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করতে পারে সেজন্য সরকার তাদেরও ‘ই-রেসিডেন্সি' সুবিধা দিচ্ছে৷ এই বিষয়টিকে অন্যায় হিসেবে দেখছেন না তাঁরা৷ উদ্যোক্তা লুমবার্গ বলেন, ‘‘আমাদের দেশ ছোট৷ তাই, শুধু এস্তোনিয়ার বাজারের জন্য কিছু বানানোর মানে নেই৷ এ কারণে শুরু থেকেই আপনাকে বৈশ্বিক পরিসরে ভাবতে হবে৷ আর সেটা শুরু করা মানেই আপনি বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে গেছেন৷''