শোভন-রাব্বানী বাদ, বোয়ালদের ধরবে কে?
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯বিশ্লেষকদের মতে এসবের তুলনায় শোভন-রাব্বানী'র অপকর্ম ‘চুনোপুঁটির' পর্যায়ে। চুনোপুঁটি ধরেই কি প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব শেষ করবেন ? না বোয়ালদেরও ধরবেন?
বাংলাদেশে দুর্নীতির তিন কান্ড হালে বাজার গরম করছে। বালিশ কান্ড, হাসপাতালে পর্দা কাহিনি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বই কেনা। আরো যোগ হয়েছে এপিবিএন-এর লাখ টাকার ঢেউটিন। অবশ্য এই সব আলোচিত দুর্নীতিকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চুনোপুঁটি দুর্নীতি বলেছেন। তাঁর মতে, হাওয়া ভবনের মত ‘বোয়াল দুর্নীতি' এখন হচ্ছেনা। বিশ্লেষকরা বলছেন,‘‘কিন্তু হালে এই আলোচিত দুর্নীতির সাথে ব্যাংক ও আর্থিক খাতসহ আরো যেসব ধ্রুপদী দুর্নীতি অব্যাহত আছে তা তিনি কিভাবে অস্বীকার করেন! ''
গবেষক, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আফসান চৌধুরী মনে করেন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল যখন প্রকট হয় তখন দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ পায়৷ যা সরকারের জন্যেও বিব্রতকর হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার তখন কিছু ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন, ‘‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও ক্ষমতাসীন সরকারের লোক আর ছাত্রলীগও সরকারের। চাঁদাবাজিতো প্রতিষ্ঠিত, চাঁদাবাজি কখন না ছিল? যখন ভিসির বিরুদ্ধে বলা হলো তিনি দুর্নীতিতে অংশ নিয়েছেন তখন সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হলো। সরকারে দুর্নীতির দুইটা পক্ষ হয়ে গেল। ভিসিকে দুর্নীতিবাজ বলা সরকারের জন্য কঠিন।''
তিনি বলেন, ‘‘অনেক বড় বোয়ালরা দুর্নীতিতে জড়িত। আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক যে কাঠামো রয়েছে তাতে দুর্নীতির রাঘব বোয়ালদের ধরা সম্ভব নয়। কারণ তাদের ওপর কাঠামো নির্ভর করে। এটা দুর্নীতি দমন কমিশনও বলেছে। যখন রাজনৈতিকভাবে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। জনগণ চাপ সৃষ্টি করে তখন কাউকে হয়তো ধরা হয়।''
আফসান চৌধুরী বলেন, শোভন-রাব্বানীদের ওপর কোনো চার্জ আনা হয়নি। ছাত্রলীগের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া আর চার্জ আনা ভিন্ন ব্যাপার। ‘‘আমরা দেখি পুলিশ ক্লোজ হয়। তারপর কি হয় আমরা জানিনা। আমাদের ক্ষেত্রে এরকম দেখি। বিচারিক ব্যবস্থা এক জিনিস। আর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া আরেক জিনিস। তবে জনগণ এটা মোটামুটি মেনে নিয়েছে। দুর্নীতি কোনো দলের বা ব্যক্তির বিষয় নয়। দুর্নীতি গভর্নেন্স সিস্টেমের বিষয়।গভর্নেন্স সিস্টেমকে কী অস্বীকার করতে পারবে নাকি?''
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের(টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন দুর্নীতির বিচার হওয়া জরুরি সেটা যে পর্যায়েই হোকনা কেন। শোভন-রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া একটা পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রশংসার। কিন্তু তাদের আইনের আওতায় আনা হয় কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ তারা চাঁদা চেয়ে থাকলে সেটা ফৌজদারী অপরাধ। এর বিচার না হলেতো কিছু হবে না। আর এখানে শোভন-রাব্বানী শুধু নয়, এর উপরে আরো অনেক টায়ার আছে, যারা আরো বেশি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এখন তদন্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা দরকার। সেটা করা না হলে বড়রাতো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।''
তিনি বলেন, ‘‘এই রাজনৈতিক দুর্নীতি ছাড়াও আরো দুর্নীতি আছে। প্রশাসনে আছে, পুলিশে আছে,ব্যাংকিং খাতে আছে, শেয়ার বাজারে আছে। প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন। তাঁর কথা শুধুই কথা, না তিনি আসলেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিচেছন তা বুঝতে সময় লাগবে। তিনি যদি কার্যকর ব্যবস্থা নেন তাহলেই তাঁর কথার বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যাবে।''
ইফতেখারুজ্জামানের মতে দুর্নীতি ধরতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে দক্ষ করতে হবে। মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে, সোচ্চার হতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হয়েছিল বলেই দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এসেছে।''
শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগ থেকে বিদায় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কখনোই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেননা। বৈঠকে তিনি আবারো দুর্নীতি, অনিয়মের কিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন।''
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবারো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন কোনো ব্যক্তির দায় দল নেবেনা। যদি কেউ দুর্নীতি, অনিয়ম বা দলের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের বাইরে গিয়ে দলবিরোধী কোনো কাজ করেন তাকে শাস্তি পেতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছেন। তিনি দলের লোকদেরও ছাড় দিচ্ছেন না।''