পহেলা বৈশাখে যৌন নিপীড়ন
২০ এপ্রিল ২০১৫নববর্ষের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এক ঘণ্টার (সন্ধ্যা সাড়ে ছ'টা থেকে সাড়ে সাতটা) ফুটেজ দেখে নিপীড়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত অন্তত চারজনকে চিহ্নিত করে পুলিশ৷ কিন্তু তাদের নাম বা পরিচয় এখনো জানতে পারেনি তারা৷ ফলে গত ছয় দিনেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘যৌন নিপীড়নের সঙ্গে জড়িতরা কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, তারা বহিরাগত৷ পুলিশের উচিত হবে, যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা৷ সেটা করা হলে তাদের নাম পরিচয় জানা যাবে, তাদের আটক করা যাবে৷''
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার আব্দুল বাতেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি৷ তাতে পহেলা বৈশাখের দিন টিএসসিতে নারী লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত ৩-৪ জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি৷ তবে তাদের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ জানা গেলেই তাদের আটক করা হবে৷''
অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে তাগিদ
জানা গেছে, সোমবার বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ দপ্তরে এ নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ বৈঠকে পুলিশ কমিশনার দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে তাগিদ দিয়েছেন৷ এরই মধ্যে পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত শাহবাগ থানার এসআই আশরাফুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে৷
শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘টিএসসির ঘটনায় দু'জনকে ধরে সাধারণ মানুষ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল৷ কিন্তু পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ৷ ওই এলাকায় দায়িত্বে ছিলেন এসআই আশরাফ৷ তিনি এটা অস্বীকার করলেও অধিকতর তদন্তের জন্য তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে৷''
সেদিন যৌন নিপীড়কদের বাধা দিলে তাদের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দীসহ কয়েকজন আহত হন৷ লিটন নন্দী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সে সময় দুই নিপীড়ককে ধরে পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফের কাছে দেয়া হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়৷''
এদিকে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা জানাতে বলেছে পুলিশ৷ তথ্যদাতার নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়৷
পুলিশের গতানুগতিক ভূমিকা
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে টিএসসিতে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পুলিশের সার্বিক ভূমিকার ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘নববর্ষের এ হীন ঘটনায় পুলিশ গতানুগতিক ভূমিকা পালন করছে৷ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কয়েকজন ছাত্র সন্দেহভাজন দুজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিল৷ বলা হচ্ছে, পুলিশের অবহেলায় তারা পালিয়ে গেছে৷ পুলিশের এ ভূমিকা হতাশাজনক৷ এটি নিছক কর্তব্যে অবহেলার শামিল৷ এমনকি আমরা জেনেছি পুলিশ সংযুক্ত সিসি ক্যামেরা দেখে অভিযুক্তদের খুঁজে দেখার ক্ষেত্রেও শুরুতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন আমরা পুলিশের কিছু তৎপরতা দেখছি৷ তা যেন নিছক লোক দেখানো না হয়৷ কমিশন স্পষ্ট করে বলতে চায়, অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে৷ এক্ষেত্রে কালক্ষেপণ বা দীর্ঘসূত্রতা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না৷''
এরইমধ্যে হাইকোর্ট এক রুলে টিএসসিতে যৌন নিপীড়নকারীদের অবিলম্বে চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তার করতে বলেছে৷ আর এই নিপীড়নের প্রতিবাদে সারাদেশে নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই দিনের ঘটনার ছবি এবং ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে৷ বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসহ সংবাদ মাধ্যম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ধরে কয়েকজনকে চিহ্নিত করে তাদের ছবি প্রচার করেছে৷