1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনৈতিক দলকে টাকা দেয় কোন গৌরী সেন?

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
২২ মার্চ ২০২৪

ভোট এলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজনৈতিক দলগুলি। এত টাকা তারা পায় কোথা থেকে, কেনই বা তারা টাকা পায়?

https://p.dw.com/p/4e28D
ভারতের মুজাফফরনগরে বিজেপির সমাবেশ
২০২২ সালে নির্বাচন কমিশন প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে একজন প্রার্থীর খরচের সীমা বড় রাজ্যের ক্ষেত্রে ৯৫ লাখ ও ছোট রাজ্যের ক্ষেত্রে ৭৫ লাখ করে দিয়েছেছবি: Rajesh Kumar Singh/AP Photo/picture alliance

কথাটা আমায় বলেছিলেন প্রয়াত জর্জ ফার্নান্ডেজ। দিল্লিতে জর্জই ছিলেন একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যার বাড়ি ছিল অবারিত দ্বার। ঢুকতে গেলে কারো কোনো জবাবদিহি করতে হত না। বাইরে একজন রক্ষী থাকতেন ঠিকই, কিন্তু সেটা বাধা দেয়ার জন্য নয়। কট্টর সমাজবাদী জর্জের বাড়িতে সবসময় মানুষের ঢল লেগে থাকত। তার নির্বাচনকেন্দ্র বিহারের মুজফফরপুর তো বটেই, তাছাড়া হাজারো মানুষ তার সঙ্গে দেখা করতেন আসতেন। সাংবাদিকcরা তো যেতেনই। 

তখন সাংসদদের বেতন বাড়ানো নিয়ে খুব হইচই হচ্ছিল। সেসময় জর্জ বলেছিলেন, ''বাইরে থেকে দেখতে ওরকম লাগে, সাংসদরা প্রচুর টাকা পান। আমার বাড়িতে যারা আসেন, তাদের তো এককাপ চা দিতে হবে। সম্ভব হলে দুটো বিস্কিট। দিনে কয়েকশ কাপ চা দেয়ার খরচটা একবার ভেবে দেখুন। সেই সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রের অনেকে চিকিৎসার জন্য এসে থাকতেন। তাদের তো না বলা যায় না। তাদের সব খরচ দিতে হয়। সেটাও হিসাবে ধরুন। তারপর পার্টি চালাবার খরচ ধরুন। তা টাকাটা আসবে কোথা থেকে?''

এটাই হলো আসল কথা। টাকাটা আসবে কোথা থেকে, কে দেবে? রাজনৈতিক দল যে চলবে, ভোটের সময় এলে সভা-সমাবেশ হবে, হেলিকপ্টার ভাড়া করতে হবে, প্রতিটি জনসভায় মঞ্চ তৈরি হবে, বিশাল বিশাল স্ক্রিনে টিভি চলবে, একাধিক মঞ্চ হবে, প্রচার হবে, খবরের কাগজে, টিভি-তে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য প্রচারে অন্তত গোটা ৩০ গাড়ি ভাড়া করতে হবে। কর্মীদের জন্য খরচ করতে হবে। সেজন্যই । 

মাঝেমধ্যেই অভিযোগ আসে বিভিন্ন রাজ্যে বড় দলের প্রার্থীরা এই সীমার বাইরে গিয়ে খরচ করেছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, সবাই সীমার মধ্যে থেকেই খরচ করেছে। কেউ এক পয়সাও বেশি খরচ করেনি। তা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থীরা ৯৫ লাখ টাকা খরচ করলো, আর বাম, কংগ্রেস, নির্দলরা মিলে আরো ৫০ লাখ টাকা খরচ করলো, তাহলে আড়াই কোটি টাকা খরচ হচ্ছে প্রতিটি কেন্দ্রে। ৪২টি কেন্দ্রে রাজনৈতিক দলগুলি একশ কোটির বেশি টাকা খরচ করছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় স্তরে দল আলাদা করে খরচ করছে। এখন তো পেশাদার ভোটকুশলী সংস্থাকে ভাড়া করতেই কোটি কোটি টাকা লাগে।  দলগুলি এত টাকা পাবে কী করে? আমি তো ওই নিন্দুকদের কথা ধরছি না, যারা বলেন, কোনো কোনো দল নাকি লোকসবা নির্বাচনে দশ হাজার কোটি টাকাও খরচ করে। আমার 

একসময় বামপন্থিরা বলতেন, তারা নাকি মানুষের টাকায় ভোটে লড়েন। তাদের চাঁদার কৌটা নিয়ে ঘুরতেও দেখা যেত। কিন্তু মানুষ আর কত টাকা দেবে? ভয়ে বা ভক্তিতে কিছু টাকা তারা দিলেন। তা দিয়ে কোনোদিন ভোটে লড়া যায়? এককথায় জবাব, যায় না। বামেরাও এখন আর কৌটা নিয়ে চাঁদা তোলেন না। হতে পারে, তারা অন্যদের থেকে কম টাকা খরচ করেন। কিন্তু ব্রিগেডে একটা মিটিং করতে গেলেই তো লাখ লাখ টাকা লাগে। সেই টাকাটাও আসতে হবে। দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ একসময় হিসাব দিত, তাদের কে কত টাকা দিয়েছে। এখন সেসব বন্ধ। কে আর সেধে রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেয়!

তাহলে টাকাটা আসবে কী করে? এর জবাবও অজানা নয়। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কাছ থেকে। তারা ক্ষমতাসীন দলকে বেশি টাকা দেবে। অন্যদেরও সন্তুষ্ট রাখতে কম দেবে, তবে একেবারে হাত গুটিয়ে নেবে না। বলা তো যায় না, কে কবে ক্ষমতায় এসে যায়! আর বিভিন্ন রাজ্যে তো কংগ্রেস-সহ অনেকগুলি দল ক্ষমতায় আছে।

এই যে সারা দেশে ৫৪৩টি কেন্দ্র আছে, তার জন্য যদি প্রার্থীরা ৯৫ ও ৭৫ লাখ টাকা খরচ করে, তার উপর দলগুলি কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর, হেলিকপ্টার ভাড়া, জনসভার আয়োজনের জন্য টাকা খরচ করে, তাহলে অঙ্কটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? এ তো আর এক-দুই কোটির ব্যাপার নয়। শয়ে শয়ে কোটি টাকার বিষয়। 

নির্বাচনী বন্ডের বিষয়টি হয়ত খারাপ ছিল না। কিন্তু যেটা ছিল, সেটা হলো স্বচ্ছ্বতার অভাব। যে টাকা দেবে তিনি জানাবেন না, কাকে টাকা দিচ্ছেন। যারা টাকা পাচ্ছে, তারাও জানাবে না, কোথা থেকে টাকা আসছে। এমন ব্যবস্থা তৈরি হলো, যার মধ্যে স্বচ্ছতা নেই। যত বিষয় গোপন করে রাখার চেষ্টা হয়, ততই মানুষের মনে সন্দেহ হতে তাকে, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। 

আর ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও তো দানছত্র খুলে বসেননি, তারা তো টাকা দেবেন, লাভ-সহ ফিরে পাওয়ার জন্যই। বা বিনিময়ে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য। নাহলে নির্বাচন আসবে, আর এই বিপুল খরচের একটা ভার তারা বহন করবেনই বা কেন? না হলে ভোটের আগে-পরে কেন দেখা যায়, জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কেনই বা অভিযোগ ওঠে, বড় শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের পাইয়ে দেয়া হচ্ছে? এ তো সেই 'দিবে আর নেবে, মেলাবে, মিলিবে'র কাহিনি। 

ভারতে অনেক বিতর্ক হয়েছে, দাবি উঠেছে, সরকারি খরচে দলগুলি প্রচার করুক। সে ব্যবস্থা হয়নি। সরকার কোনো দলকে আর্থিক সাহায্য করে না। দলগুলির টাকা আসে অন্য সোর্স থেকে। আর শেষপর্যন্ত বোঝাটা চাপে সাধারণ মানুষের ঘাড়েই। তাদেরই তো বাড়তি দাম দিয়ে জিনিস কিনতে হয়, তাদের টাকা দিয়েই তো ঋণখেলাপিদের অর্থ মকুব করে দেয়া হয়। আয়-ব্যয়ে যতদিন স্বচ্ছ্বতা না থাকবে, ততদিন এই ব্যবস্থাই চলতে থাকবে। রাজনীতিতে কালো টাকা ঢুকে যাচ্ছে বলে হাহুতাশ করারও কোনো অর্থ থাকবে না। 
 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য