বাংলাদেশে ‘ইভটিজিং'
১৭ মে ২০১২‘‘ইউ ল্যাব ইউনিভার্সিটির দিক থেকে কিছু উঠতি বয়সী ছেলে হেঁটে হেঁটে স্টার কাবাব যেদিকে, সেদিকে যাচ্ছে৷ একজন তরুণী দাঁড়িয়ে একটি সিএনজি অটোরিক্সার সঙ্গে কথা বলছিল৷ ছেলেগুলো তার থেকে অনেক কম বয়সী হওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ তারা মেয়েটির জামার নীচ দিয়ে হাত বাড়িয়ে পাজামার পেছন ধরে টান দিল....দিয়ে হাসতে হাসতে এগিয়ে চলল....ঘটনার আকস্মিকতায়, অপমানে তরুণীটি হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, লজ্জায় মুখে কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে৷''
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ই মে রাত প্রায় পৌনে দশটার দিকে, ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায়৷ মেয়েটিকে অপমানিত করার এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করে ওঠেন তিরিশ বছর বয়সী আরেকজন পথচারী৷ কিন্তু প্রতিবাদ করার অপরাধে সেই পথচারীকেই মেরে-পিটিয়ে আহত করে ছেলেগুলো৷
প্রতিবাদী সেই আহত যুবকেরই ছদ্ম নাম ‘একজন জুয়ারী'৷ এই নামেই তিনি সামহোয়ার ইন ব্লগে বিশেষ পরিচিত৷ মেয়েটিকে অপমান করার সেই ঘটনাটি সামহোয়ার ইন ব্লগে লিখে তিনিই প্রকাশ করেছেন৷ যেখান থেকে ঘটনাটি সবাই জেনেছে৷
‘ইভটিজিং'-এর ঘটনা এটাই বাংলাদেশে প্রথম নয়৷ বাংরাদেশের গ্রাম, শহর, নগর সবখানেই ‘ইভটিজিং'-এর ঘটনা ঘটছে৷ রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে, শপিং মলে, বাজারে, বিদ্যালয়ে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে ‘ইভটিজিং'৷ এরকমই আরেকটি ঘটনার কথা বলছিলেন, সিরাজগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল হক৷
সিরাগঞ্জ সদরে অবস্থিত হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়৷ সে বিদ্যালয়ের টয়লেটে মাঝে মধ্যেই লুকিয়ে ঢুকে বসে থাকে একজন ‘ইভটিজার'৷ তার পর স্কুলের ছাত্রীরা টয়লেটে ঢুকলে তাকে বিভিন্ন ভাবে ‘টিজ' করার চেষ্টা করে সে৷ কয়েক দিন এরকম ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে সে৷ তবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার সময় গত ৭ই মে ধরা পড়েছে সেই ইভটিজার৷
মো. মাহমুদুল হক বলেন, ‘‘ধরা পরার পর সেই অপরাধীকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে মোবাইল কোর্ট৷ সাজা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে৷''
‘ইভটিজিং' প্রতিরোধে বর্তমানে বিশেষ সোচ্চার হয়েছে বাংলাদেশ সরকারও৷ মেয়েদেরকে উত্ত্যক্ত করার অপরাধকে আনা হয়েছে মোবাইল কোর্টের আওতায়৷ এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, পরবর্তীতে সংশোধনী আইন- ২০০৩ এ ইভটিজার বা নারীদের উত্তক্ত্যকারীদের জন্য বিশেষ শাস্তির ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে৷
সরকারের এসব আইনি উদ্যোগ ‘ইভটিজিং' প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলেই মনে করেন তিনি৷
তবে মি. হক এর মতে, ‘ইভটিজিং' একটি সামাজিক সমস্যা৷ তাই, এটি বন্ধ করতে প্রয়োজন মানুষের প্রচলিত মানসিকতার পরিবর্তন৷ আর এ পরিবর্তনের জন্য ‘ক্যাম্পেইন' বা প্রচারকাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অর্থাৎ, একদিকে আইন এবং অন্যদিকে জনসচেতনতা মূলক উদ্যোগ- এই দু'য়ে মিলেই তৈরি হবে ‘ইভটিজিং' মুক্ত সামাজিক পরিবেশ৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ