1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজ্যপালের 'পিস রুম' শান্তি ফেরাতে পারবে?

২০ জুন ২০২৩

পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ শুনতে রাজ্যপাল খুলেছেন ‘পিস রুম'। হিংসা থামাতে কাজে আসবে এই উদ্যোগ?

https://p.dw.com/p/4SpLD
রাজ্যপাল ভাঙড় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন।
রাজ্যপাল ভাঙড় গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। ছবি: Subrata Goswami/DW

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সহিংসতা থামাতে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।  মনোনয়নপর্বের সহিংসতার পর  দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ও ক্যানিং সফরে যান রাজ্যপাল। শান্তির বার্তা দেন তিনি। তার পর বোস সিদ্ধান্ত নেন, রাজভবনেই নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ শোনা হবে।

রাজভবনে ‘পিস রুম'

রাজভবনে খোলা হয়েছে ‘পিস রুম'। ফোন নম্বর ও ইমেল দেয়া হয়েছে। সেখানে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারেন। দিনভর বিরতিহীন ভাবে চলছে এই কাজ। ২৪ ঘণ্টাই ফোন, ইমেল আসছে। মোট আটজন কর্মী-আধিকারিক অভিযোগ নথিবদ্ধ করছেন। সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাজভবনের কর্মী সন্দীপ রাজপুত বলেন, "মূলত সহিংসতার অভিযোগ পাচ্ছি। মনোনয়ন জমা দিতে না পারার কথাও বলছেন অনেকে। অভিযোগ পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে রাজ্য সরকারের কাছে। রাজ্যের কাছ থেকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া আসছে।”

‘পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কাজ হলে এত ফোন, ইমেল কি আসতো?’

রাজ্যপাল বোস নিজেও এ কাজের তদারকি করছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন আধিকারিকদের। তাঁর বক্তব্য, "একাধিক জায়গায় গিয়ে আমি মানুষের কথা শুনেছি। সারা রাজ্যের মানুষ যাতে ভোট নিয়ে তাদের কথা জানাতে পারেন, সেই লক্ষ্যে এই পিস রুম খোলা হয়েছে। এর লক্ষ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা। রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজভবন তার সাংবিধানিক ভূমিকা পালন করবে।”

শনিবার পিস রুম খোলা হয়েছে। রবিবার-সহ ছুটির দিনও কাজ করবেন আধিকারিকরা। সোমবার পর্যন্ত সাড়ে ৩০০-র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। শুধু বিরোধী নয়, শাসক দলের পক্ষ থেকেও অভিযোগ আসছে। রাজ্যপাল বলেন, "ভোট সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত এই পিস রুম খোলা থাকবে। যদি তার আগে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়, তা হলে এর প্রয়োজন থাকবে না। তখন পিস রুম বন্ধ করে দেয়া হবে।”

তৃণমূলের কটাক্ষ

শাসক তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যপালের উদ্যোগের সমালোচনা করেছে। সাংসদ ও মুখপাত্র শান্তনু সেনের মন্তব্য, "নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর থাকার সময় বিজেপিকে খুশি করতে রাজ্যপাল শান্তির ঘর করেছেন। এর কোনো প্রয়োজন ছিল কি না বা আদতে এটা সাংবিধানিক ভাবে কতটা বৈধ, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।” যদিও রাজভবনের দাবি, সংবিধানের আওতায় থেকেই পিস রুম খোলা হয়েছে।

রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। অতীতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালরা হিংসার অভিযোগ সরেজমিনে দেখতে ঘটনাস্থল সফর করেছেন। সাবেক রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী নন্দীগ্রামের গুলিচালনার পর যে মন্তব্য করেছিলেন, তা ইতিহাস হয়ে রয়েছে। বোসের পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড় গত বিধানসভা নির্বাচনের পর হিংসার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জেলা সফরে গিয়েছিলেন। সেই ধারাতেই বোসের নয়া উদ্যোগ ‘পিস রুম'।

উদ্যোগের কার্যকারিতা

অভিযোগ গ্রহণের পর ‘পিস রুম'-এর কোনো কার্যকর ভূমিকা থাকবে বলে মনে করছেন না বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী উল্টে প্রশ্ন তুলেছেন, "যিনি নির্বাচন কমিশনারের পদে বসে পক্ষপাত করছেন, তাকে নিয়োগ দিলেন কেন রাজ্যপাল। নিয়োগ দেয়ার পর এখন অভিযোগ শোনার কী অর্থ? এ সব অভিযোগ রাজভবন পাঠাচ্ছে তো সেই কমিশন বা রাজ্যের কাছেই।”

তাই এ নিয়ে বিরোধীরা বিশেষ আশাবাদী বলে মনে হচ্ছে না। বিজেপি নেতা ও পর্যবেক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রাজ্যপালের চেষ্টায় কতটা লাভ হবে জানি না। তবে এখন যে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে গ্রাম বাংলায়, তাতে এই উদ্যোগ মানুষকে কিছুটা ভরসা জোগাবে। তারা অন্তত অভিযোগ জানানোর একটা জায়গা পেলেন।”

প্রবীণ সাংবাদিক আশিস ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এতো মানুষের রাজভবনে অভিযোগ জানানো প্রশাসন ও কমিশনের উপর এক ধরনের অনাস্থারই প্রকাশ। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কাজ হলে এতো ফোন, ইমেল কি আসতো? কিন্তু যদি দিনের পর দিন অভিযোগের সুরাহা না হয়, তা হলে রাজ্যপাল কী পদক্ষেপ নেন, সেটা দেখতে হবে।

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷