1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজ্যপালের শাসনে কাশ্মীর কোন পথে?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৭ জুলাই ২০১৮

জম্মু-কাশ্মীরে পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার থেকে আচমকা বিজেপি বেরিয়ে এলে পিডিপি দলের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ইস্তফা দেন৷ফলে বলবৎ হয় রাজ্যপালের শাসন৷

https://p.dw.com/p/31b9v
Kaschmir Unruhen in Srinagar
ছবি: H. Naqash/AFP/Getty Images

কিন্তু বিধানসভা ভাঙা হয়নি৷ বিকল্প জোট সরকারের সম্ভাবনাও আপাতত দেখা যাচ্ছে না৷ এ অবস্থায় কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতির অভিমুখ কোন দিকে ?

বিজেপি বলছে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি তাঁর কাজে ব্যর্থ বলেই জোট সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয়া হয়েছে৷ দলটি মনে করে,  জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের সমর্থন এবং কেন্দ্র ও রাজ্যে বিজেপির সহযোগিতা সত্বেও পিডিপি সরকার অশান্তি ও রক্তপাত বন্ধে বিফল৷ রাজ্যে মেহবুবা সরকারের শরিক ছিল বিজেপি৷ মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্বেও উভয় দলই গত সাড়ে তিন বছর জোট সরকার গড়ে ক্ষমতায় ছিল৷ কিন্তু কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়নি৷ শান্তিপূর্ণ সমাধান অধরা রয়ে গেছে৷ রাজ্যে পিডিপি জোট সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়ে কী বার্তা দিতে চেয়েছে বিজেপি?  জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী তত্পরতার পেছনে শুধু পাকিস্তান নয়, চীনও ক্রমশ জডিয়ে পড়ছে৷ এই দুই শক্তির মোকাবিলা করা গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে বেশ কঠিন৷ সেক্ষেত্রে বিকল্প উপায় কেন্দ্রের হাত শক্ত করা৷ কঠিন সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অনেক সময়ে মতানৈক্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ বর্তমান কাঠামোয় কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ফলে অনেক সময় পরিস্থিতি হাতের বাইরেও চলে যায়৷ সেটা রোধ করতে হলে কেন্দ্রের দ্রুত হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে৷

এখন রাজ্যপালের শাসনে নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে ফ্রি-হ্যান্ড পাবে, এমনটাই বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছেন৷জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান এস.পি বৈদ্যবলেছেন একই কথা৷ রাজ্যপালের শাসনে সন্ত্রাস মোকাবিলার কাজটা আরও সহজ হবে৷ কাশ্মীর পরিস্থিতি আবার আগের মতোই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে৷ রমজানের সময় অস্ত্রবিরতি সফল হয়নি৷ ঈদের একদিন আগে হত্যা করা হয় নির্ভীক সাংবাদিক সুজাত বুখারিকে৷ কাজেই এরপর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বন্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না বলে মনে করে বিজেপি৷ কাশ্মীরি জনগণ আর স্থিতাবস্থা চাইছে না৷ চাইছে এসপার-ওসপার করতে৷ চাইছে তাঁদের আলাদা পরিচিতি৷ নিরাপত্তা বাহিনীর উপর পাথর বৃষ্টি তারই প্রকাশ৷ কথুয়ায় মুসলিম উপজাতির এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়৷ অভিযুক্তরা বিজেপি সদস্য বলে বিজেপি তাদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে৷ এতেও কাস্মীরে বিজেপি-পিডিপি জোটে তিক্ততার সৃষ্টি হয়৷ অন্যদিকে, কেন্দ্রের হিন্দু সরকারের বাস্তববর্জিত পেশিশক্তির অপব্যবহার, মানবাধিকার লংঘন, ন্যায়বিচার না পাওয়া, জঙ্গি দলের সঙ্গে যোগসাজস সন্দেহে আটক করা ইত্যাদি৷ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মিডিয়া এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির এমনটাই অভিযোগ৷

‘‘পিডিপি যেন এই ধরণের একটা সাইকো-ফোবিয়ায় ভুগছে’’

এ বিষয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রবীর কুমার দে মনে করেন, বলা হচ্ছে যে, বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করে মেহবুবা মুফতির পিডিপি তাদের মুসলিম ভোট ব্যাংক হারাচ্ছে৷ কাশ্মীরে মুসলিম ভোটব্যাংকই বেশি৷ ফলে ওমর আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স তার ফায়দা ওঠাচ্ছে৷ এটাই আসল কারণ৷ পাশাপাশি পিডিপির এটাও সন্দেহ, কাশ্মীরে জোট সরকারে বিজেপিরলাভ বেশি হচ্ছে, পিডিপি যেন এই ধরণের একটা সাইকো-ফোবিয়ায় ভুগছে৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটাই বললেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দে৷ রাজ্যপালের শাসনে কি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করার বেশি স্বাধীনতা থাকবে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, যাকে বলে ফেডারেল স্ট্রাকচার আছে, ঐ ভাবনাটা সত্যি হলেও তো চাপিয়ে দেওয়া যায় না৷ জঙ্গিবাদ সব সময়েই একটা ইস্যু, সন্দেহ নেই৷ কিন্তু রাজ্যের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েও তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না৷ এটা তো অভ্যন্তরীন বিষয়৷ অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে ভোট ব্যাংকের গুরুত্ব অপরিসীম৷ জঙ্গি অনুপ্রবেশে পাকিস্তান কিংবা চীনের ভূমিকার প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে বলা যায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য পরিসর আছে৷ কই কেন্দ্রে বিজেপি জোট সরকার তো জঙ্গি মোকাবিলায় সফল হতে পারছে না৷

রাজ্যে কোনো দলেরই নতুন সরকার গঠনে তেমন উত্সাহ চোখে পড়ছে না৷ কারণ, রাজ্য বিধানসভায় মোট ৮৯টি আসনের মধ্যে বর্তমানে পিডিপি ২৮টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল৷ বিজেপি ২৫টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল৷ ওমর আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স ১৫ এবং কংগ্রেসের ১২ জন বিধায়ক৷ রাজ্যপালের শাসন ছয়মাস পর্যন্ত স্থায়ী৷ এরমধ্যে যদি সরকার গঠিত না হয়, তাহলে নতুন নির্বাচন হবে৷ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয় সংবিধানের ৩৫৬নং ধারায়৷ কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা হয় না৷ সংবিধানের ৯২ ধারা অনুসারে রাজ্যপালের শাসন জারি হয়. তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে৷ রাজ্যে গত চার দশকে এই নিয়ে মোট আটবার রাজ্যপালের শাসন জারি হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য