এখনো ৪২ ভাগ বেকার, ট্রমায় ৩০ ভাগ
২৪ এপ্রিল ২০১৭রানা প্লাজা ধসের চার বছরের ওপর অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে৷ সেই গবেষণায় দেখা গেছে, ওই ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪২.৪ শতাংশ এখনো বেকার৷ তার গত চার বছরে কোনো কাজ পায়নি৷ আর কাজ না থাকায় তারা এখন মানবেতর জীবন যাবন করছেন৷ সহায়তার নামে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে সামান্য তথ্য পেয়েছেন তাতে চিকিৎসা চালানোই কঠিন ছিল৷ অ্যাশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরা সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছেন৷ কেউ তাদের শেষ সম্বল দুই -তিন শতক জমি অথবা বসতবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন৷ অনেকেই দিন মজুরে পরিণত হয়েছেন৷''
কেন তারা কাজ পাচ্ছেন না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আহতদের কেউ কেউ পুরোপুরি কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, কেউ কেউ এখনো ট্রমায় আক্রান্ত৷ পোশাক কারখানায় কাজ করতে গেলে ভয় পান৷ আবার কেউ কাজ করতে সক্ষম হলেও কারখানাগুলো তাদের কাজ দিতে চায় না৷''
ফারাহ কবীর বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্নভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বা এনজিও তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করলেও সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই৷ ফলে ওই বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ তেমন কাজে আসছে না৷''
‘অবিস্মরণীয়, অমার্জনীয়: রানা প্লাজা' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,‘‘রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের ১৩.১ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে৷ ৩০.৮ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক নয়৷ আবার গত এক বছর ধরে ৯০ শতাংশ আহত শ্রমিক শারীরিক ও মানসিক কেনো ধরণের চিকিৎসাই পাচ্ছে না৷''
ফারাহ কবীর জানান, ‘‘অ্যাকশন এইড গত চার বছর ধরেই রানা প্লাজা ধসে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের পর্যবেক্ষণ করছে৷ তাদের সর্বশেষ গবেষণা পরিচালিত হয় দুঘর্টনায় আহত ১ হাজার ৪০৩ জন শ্রমিক এবং নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৬০৭ জনের ওপর৷ আর তাতে দেখা যায়, আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪২.২ শতাংশ এখনো বেকার৷ কাজে যুক্ত হয়েছেন ৫৭ শতাংশ শ্রমিক৷ এছাড়া ২৬ শতাংশ শ্রমিক পরিকল্পনার অভাবে কোনো কাজে যুক্ত হতে পারছেন না৷''
রানা প্লাজার অনেক শ্রমিকের এখানো খোঁজ মেলেনি৷ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেয়া তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা বলা হয়েছে, ৩৭৯ জন৷ তাদের মধ্য থেকে দুই দফা ডিএনএ টেস্টে ১৯৯ জনের পরিচয় মিলেছে৷ এখনো নিখোঁজ ১৬২ জন শ্রমিক৷
আর সেরকমই এক হতভাগ্যের বাবা আবুল কাসেম৷ রানা প্লাজা ধসে তার বড় ছেলে উজ্জ্বল আর ছেলের বউ খাদিজা নিহত হয়েছে৷ ছোট ছেলে আফজাল এখনো নিখোঁজ৷ ডিএনএ টেস্টের পরও ছেলের খোঁজ পাননি৷ তাই প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার সামনে আসেন৷ চোখের জলে ভাসান বুক৷ সোমবার সকালে রানা প্লাজার সামনে থেকেই তিনি টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু এপ্রিলের ২৪ তারিখ নয়, আমি প্রতি মাসের ২৪ তারিখই এখানে আসি৷ এখানে আমার সব শেষ হয়ে গেছে৷ সন্তানদের হারিয়েছি৷''
সন্তান হারানোর ব্যথা নিয়ে তিনি জানান, ‘‘সরকারের দিক থেকে কোনো সহায়তা পাইনি৷ বায়ারদের কাছ খেকে কিছু পেয়েছি৷ আর নিখোঁজ সন্তানের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি৷''
আবুল কাসেমের এখন দুই মেয়ে বেঁচে আছেন৷ কিন্তু দুই ছেলেকে হারিয়ে তিনি এখন অসহায়৷ শোক আর দারিদ্র্য তাঁকে পথে নামিয়েছে৷
এখনও ক্ষতিপূরণ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সুরাহা হয়নি৷ হতাহতদের ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে আইএলওর নেতৃত্বে ৩০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ সেখানে ২৪ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে৷ ৫ হাজার আবেদনের মধ্য থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে ২৯০৯ জনকে৷ তাদের আংশিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হরেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দেয়া ২২ কোটি টাকার অনুদানও এই তহবিলের আওতায় ধরা হয়েছে৷
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে সেখানে থাকা ৫টি তৈরি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন৷ ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে গুরুতর আহত ও পঙ্গু হন কয়েক হাজার শ্রমিক৷