1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখনো ৪২ ভাগ বেকার, ট্রমায় ৩০ ভাগ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা 
২৪ এপ্রিল ২০১৭

রানা প্লাজা ধসের চার বছর পরও শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বেকার৷ পঙ্গুত্বের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷ তাঁদের ক্ষতিপূরণ বা পূনর্বাসনের সমন্বিত কোনো উদ্যোগও নেই৷ ৩০ শতাংশ শ্রমিক এখনো ট্রমায় আক্রান্ত৷

https://p.dw.com/p/2bmBW
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Abdullah

রানা  প্লাজা ধসের চার বছরের ওপর অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে৷ সেই গবেষণায় দেখা গেছে, ওই ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে ৪২.৪ শতাংশ এখনো বেকার৷ তার গত চার বছরে কোনো কাজ পায়নি৷ আর কাজ না থাকায় তারা এখন মানবেতর জীবন যাবন করছেন৷ সহায়তার নামে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে সামান্য তথ্য পেয়েছেন তাতে চিকিৎসা চালানোই কঠিন ছিল৷ অ্যাশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এরা সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছেন৷ কেউ তাদের শেষ সম্বল দুই -তিন শতক জমি অথবা বসতবাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন৷ অনেকেই দিন মজুরে পরিণত হয়েছেন৷''

কেন তারা কাজ পাচ্ছেন না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আহতদের কেউ কেউ পুরোপুরি কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, কেউ কেউ এখনো ট্রমায় আক্রান্ত৷ পোশাক কারখানায় কাজ করতে গেলে ভয় পান৷ আবার কেউ কাজ করতে সক্ষম হলেও কারখানাগুলো তাদের কাজ দিতে চায় না৷''

ফারাহ কবীর বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্নভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বা এনজিও তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করলেও সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেই৷ ফলে ওই বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ তেমন কাজে আসছে না৷''

‘অবিস্মরণীয়, অমার্জনীয়: রানা প্লাজা' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,‘‘রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের ১৩.১ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে৷ ৩০.৮ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক নয়৷ আবার গত এক বছর ধরে  ৯০ শতাংশ আহত শ্রমিক শারীরিক ও মানসিক কেনো ধরণের চিকিৎসাই পাচ্ছে না৷''

Farah Kabir - MP3-Stereo

ফারাহ কবীর জানান, ‘‘অ্যাকশন এইড গত চার বছর ধরেই রানা প্লাজা ধসে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের পর্যবেক্ষণ করছে৷ তাদের সর্বশেষ গবেষণা পরিচালিত হয় দুঘর্টনায় আহত ১ হাজার ৪০৩ জন শ্রমিক এবং নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৬০৭ জনের ওপর৷ আর তাতে দেখা যায়, আহত শ্রমিকদের মধ্যে  ৪২.২ শতাংশ এখনো বেকার৷ কাজে যুক্ত হয়েছেন ৫৭ শতাংশ শ্রমিক৷ এছাড়া ২৬ শতাংশ শ্রমিক পরিকল্পনার অভাবে কোনো কাজে যুক্ত হতে পারছেন না৷''

রানা প্লাজার অনেক শ্রমিকের এখানো খোঁজ মেলেনি৷ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেয়া তালিকায় নিখোঁজের সংখ্যা বলা হয়েছে, ৩৭৯ জন৷ তাদের মধ্য থেকে দুই দফা ডিএনএ টেস্টে ১৯৯ জনের পরিচয় মিলেছে৷ এখনো নিখোঁজ ১৬২ জন শ্রমিক৷

আর সেরকমই এক হতভাগ্যের বাবা আবুল কাসেম৷ রানা প্লাজা ধসে তার বড় ছেলে উজ্জ্বল আর ছেলের বউ  খাদিজা নিহত হয়েছে৷ ছোট ছেলে আফজাল এখনো নিখোঁজ৷ ডিএনএ টেস্টের পরও ছেলের খোঁজ পাননি৷ তাই প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার সামনে আসেন৷ চোখের জলে ভাসান বুক৷ সোমবার সকালে রানা প্লাজার সামনে থেকেই তিনি টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু এপ্রিলের ২৪ তারিখ নয়, আমি প্রতি মাসের ২৪ তারিখই এখানে আসি৷ এখানে আমার সব শেষ হয়ে গেছে৷ সন্তানদের হারিয়েছি৷''

ABul Kashem - MP3-Stereo

সন্তান হারানোর ব্যথা নিয়ে তিনি জানান, ‘‘সরকারের দিক থেকে কোনো সহায়তা পাইনি৷ বায়ারদের কাছ খেকে কিছু পেয়েছি৷ আর নিখোঁজ সন্তানের জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি৷''

আবুল কাসেমের এখন দুই মেয়ে বেঁচে আছেন৷ কিন্তু দুই ছেলেকে হারিয়ে তিনি এখন অসহায়৷ শোক আর দারিদ্র্য তাঁকে পথে নামিয়েছে৷

এখনও ক্ষতিপূরণ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সুরাহা হয়নি৷ হতাহতদের ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে আইএলওর নেতৃত্বে ৩০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ সেখানে ২৪ মিলিয়ন ডলার জমা পড়েছে৷ ৫ হাজার আবেদনের মধ্য থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে ২৯০৯ জনকে৷ তাদের আংশিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হরেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে দেয়া ২২ কোটি টাকার অনুদানও এই তহবিলের আওতায় ধরা হয়েছে৷

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে সেখানে থাকা ৫টি তৈরি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন৷  ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে গুরুতর আহত ও পঙ্গু হন কয়েক হাজার শ্রমিক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য