1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তম এখনও নিখোঁজ

২৪ নভেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের ওপর প্রথম হামলাটি হয়েছিল ২০১২ সালে৷ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কক্সবাজার, রামু ও উখিয়ায় হামলা চালানো হয়, সেই উত্তম বড়ুয়ার এতদিনেও কোনো খোঁজ মেলেনি৷

https://p.dw.com/p/2oAhG
Bangladesch Dhaka Anschlag Tempel
ছবি: AFP/Getty Images

সম্প্রতি ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে, কয়েক দিন ধরে প্রচার চালিয়ে, সংগঠিত হয়ে রংপুর সদরের ঠাকুপাড়ায় হামলা চালানো হয়৷ এ সময় হিন্দুদের ৩০টি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়, ২৫টি বাড়িতে চলে ভাংচুর, চলে ব্যাপক লুটপাট৷ হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি মারাও যান৷ পরে কথিত অভিযুক্ত টিটু রায়কে আটক করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ৷ পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, টিটু রায় লেখাপড়া জানেন না৷ তাঁর পক্ষে ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দেয়া সম্ভব কিনা এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তাঁরা৷ রংপুরের এ ঘটনার পর আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে রামুর উত্তম বড়ুয়ার নাম৷ 

Jyotirmoi Barua Edited - MP3-Stereo

উত্তম পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ৷ তার স্ত্রী রিতু বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফিরে আসবে কিনা জানি না, বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই যোগাযোগ করতো এতদিনে৷'' পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটির ফিরে আসার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে যেন ফিকে হয়ে আসছে৷ ৯ বছরের ছেলে আদিত্যকে নিয়ে চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটছে রিতুর৷  ‘‘অনেকে এসেছিল, কিন্তু কেউ আমাদের এতটুকু সাহায্য করেনি৷ আমরা খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছি৷ ছেলেটা কত আশা করে থাকে বাবা আসবে, আদর করবে৷'' 

সরকার ইতিমধ্যে বৌদ্ধ মন্দির পুর্ননির্মাণ করেছে৷ তবে স্থানীয়রা বলছেন, ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত আসামীদের ধরার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা নেই৷ বিশেষ করে ‘নিখোঁজ' উত্তমের বিষয়ে প্রশাসনের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই৷ শুধু প্রশাসন নয়, উত্তমের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে তার নিজের সম্প্রদায়ের মানুষরাও নাড়াচাড়া করতে চাইছেন না৷স্থানীয় সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া বলেন, ‘‘সরকারের দিক থেকে ঘটনা নিয়ে পরিষ্কার কোনো বিবৃতি না আসায় উত্তমকে নিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধদের মধ্যেও সংশয় আছে৷ গত ৫ বছরে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও সবার ভিতর থেকে আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি৷ বিশেষ করে চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারীদের মধ্যে বেশিরভাগেরই নাম নেই মামলাগুলোর চার্জশিটে৷'' আর এ পরিস্থিতিতে উত্তম ফিরে এলে পরিস্থিতি আবার ঘোলাটে হতে পারে বলেও মনে করেন স্থানীয়রা৷

Local Shunil barua Edited - MP3-Stereo

পাঁচ বছর আগে কক্সবাজার, রামু ও উখিয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে যে ১৮টি মামলা করেছিল, তার মধ্যে একটি মামলায় উত্তম বড়ুয়া প্রধান আসামী৷ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ তবে রামু থানা থেকে জানানো হয়, তার সম্পর্কে কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি৷ ঘটনার পর রামু ও উখিয়াতে হামলার সময় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তাঁর মতে, পুলিশের দায়িত্ব ছিল উত্তমকে খুঁজে বের করা, তবে তারা সেটা করতে পারেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা উত্তমের হদিশ নিশ্চিত করতে হাইকোর্টে একটা মামলা করে নির্দেশনা চাইতে পারতাম৷ এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স বা নিখোঁজ হতে বাধ্য করার মতো ঘটনায় আমার এরকম অনেক মামলা করা আছে৷ মামলা করে স্টান্টবাজি করা যায়, কিন্তু মোটের উপর কোনো রেজাল্ট পাওয়া যায় না৷'' তিনি জানান, তাঁর করা রিট পিটিশনটির এখনও কোনো সুরাহা হয়নি৷

Wife of Uttom barua Edited - MP3-Stereo

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অন্যতম উদাহরণ রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা৷ উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পবিত্র কোরান শরিফ অবমাননা করা হয়েছে– এমন গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হামলা চালানো হয় বৌদ্ধপল্লিতে৷ ধ্বংস করা হয় বৌদ্ধ পুরাকীর্তি৷ সেই রাত থেকেই উত্তম নিখোঁজ৷