রাশিয়া-ইউক্রেন: এর্দোয়ানের মধ্যস্থতায় কাজ হবে?
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুজনেরই সম্পর্ক ভালো। দুই দেশের সঙ্গেই তুরস্কের বাণিজ্য সম্পর্ক খুবই জোরদার। তাই রাশিয়া যদি ইউক্রেন আক্রমণ করে, তাহলে তুরস্ক বিপাকে পড়বে।
সেজন্যই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এখন দুই দেশের বিরোধে মধ্যস্থতা করতে চাইছেন। তিনি বৃহস্পতিবার কিয়েভ যাচ্ছেন। তিনি দেশে ফেরার পর ভ্লাদিমির পুটিন তুরস্কে আসবেন। তখন পুটিনের সঙ্গে এর্দোয়ানের আলোচনা হবে। প্রশ্ন হলো, এর্দোয়ান কি বিরোধ মেটাতে পারবেন? তিনি কি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারবেন?
কূটনৈতিক সাফল্যের আশা কম
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, এর্দোয়ানের সফল হওয়ার আশা কম। রাজনীতি ও রাশিয়া বিশেষজ্ঞ আইডিন সেজারের মতে, ''এর্দোয়ানের পক্ষে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা অসম্ভব। কারণ, তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য এবং ন্যাটো ইতিমধ্যেই অবস্থান নিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া মস্কো আজ পর্যন্ত তুরস্কের যাবতীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।''
ইস্তাম্বুলের আইডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক কারাকাও মনে করেন, ''এর্দোয়ানের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ তুরস্ক ও ইউক্রেনের মধ্যে শেষ যে শীর্ষ বৈঠক হয়েছে, সেখানে এর্দোয়ান ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন। সেখানে এর্দোয়ান রাশিয়ার দাবি মানেননি।''
তুরস্ক ইউক্রেনকে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন ড্রোন দিয়েছে। তাতে রাশিয়া ক্ষুব্ধ। কয়েক সপ্তাহ আগেই পুটিন বলেছিলেন, রাশিয়া সমর্থিত বাহিনী (বিচ্ছিন্নতাবাদী) যেখানে আছে, সেখানে এই ড্রোন দেখা গেছে। এছাড়া পুটিনের অভিযোগ ছিল, তুরস্ক খুব বেশি করে ইউক্রেনকে সমর্থন করছে।
রাশিয়ার গ্যাস চাই
তুরস্ক ও রাশিয়ার সম্পর্ক বেশ জটিল। তুরস্ক নিজেদের সুরক্ষার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনেছে। কিন্তু লিবিয়া, সিরিয়া, নাগর্নো-কারাবাখ ও ইউক্রেন প্রশ্নে তারা রাশিয়ার বিরোধিতা করেছে।
আবার দুই দেশের মধ্যে খুব ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। তুরস্ক গ্যাসের জন্য রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। বছরে তাদের ৪৮ বিলিয়ান কিউবিক মিটার গ্যাস লাগে। তার মধ্যে ৩৩ দশমিক ছয় বিলিয়ান কিউবিক মিটার গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। এই গ্যাস আসা বন্ধ হলে তুরস্ক বিপাকে পড়বে।
গ্যাজডে-র সিইও মেহমেত দোগানের মতে, ''যদি উত্তেজনা আরো বাড়ে এবং রাশিয়া তুরস্ককে গ্যাস দেয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে কী হবে? তুরস্কে গ্যাসের দাম আকাশ ছোঁবে। তুরস্ক ভয়াবহ অসুবিধার মধ্যে পড়বে।''
তুরস্কের কৃষিজাত জিনিস রাশিয়ায় যায়। রাশিয়া থেকে প্রচুর পর্যটক তুরস্কে আসেন। সেসব বন্ধ হলে তুরস্কের দুর্দশা বাড়বে।
ইউক্রেনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক
তুরস্কের কাছে ইউক্রেনও গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্ক-ইউক্রেন বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এবং গত ১২ বছর ধরে কিয়েবে বসবাসকারী বুরাক পেহলিভান বলেছেন, তুরস্কের সংস্থাগুলি ইউক্রেনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। গতবছর তুরস্ক ও ইউক্রেনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৫০ কোটি ডলার।
তাই তুরস্ক চাইছে, বর্তমান পরিস্থিতি যেন আর খারাপ না হয়। এর্দোয়ান তুরস্কে সুদের হার কম রাখায় সেখানে মুদ্রাস্ফীতি প্রবল আকার নিয়েছে। অর্থনীতি চাপে পড়েছে। এখন রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে তুরস্কের বাণিজ্য মার খাবে।
এর্দোয়ান এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এর্দোয়ানের ইউক্রেন সফরের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ পুটিনের তুরস্ক সফর। পুটিন কি এর্দোয়ানকে মধ্যস্থতা করার সুযোগ দেবেন, সেটাই দেখার।
জিএইচ/এসজি (ডিডাব্লিউ)