1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিভক্ত জার্মানির কট্টর ডান শিবির

৩১ মার্চ ২০২২

একদিকে রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী নেতা পুটিন, অন্যদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে উগ্র-ডানপন্থিরা৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে কাকে সমর্থন করা উচিত, এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে জার্মানির নব্য-নাৎসিরা৷

https://p.dw.com/p/49HpA
Ukraine | Kämpfe in Mariupol
ছবি: Maximilian Clarke/SOPA Images via ZUMA Press/picture alliance

গবেষণা বলছে, জার্মানির কিছু কট্টর ডান দল রাশিয়ার ন্যাটোবিরোধী নেতাকে সমর্থন করেছে, অন্যদিকে আরেক দল ইউক্রেনের আজভ ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আমাদিউ আন্তোনিও ফাউন্ডেশনের গবেষক এবং সাংবাদিক নিকোলাস পটার বলেছেন, ‘‘এসব দল এবং ব্যক্তি ও আন্দোলনগুলো এত গণতান্ত্রিক নয় যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে তারা ইহুদি জেলেনস্কির সরকারকে সমর্থন করবে৷ ইউক্রেনের জন্য যুদ্ধ করা ডানপন্থি গোষ্ঠী এবং সাধারণ ইউক্রেনবাসীদের আদর্শেও পার্থক্য রয়েছে।''

লাইপৎজিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এলসে ফ্রেঙ্কেল-ব্রুন্সভিক সংস্থার বিশেষজ্ঞ ইয়োহানেস কিসের মতে, ইউক্রেনপন্থি জার্মান নব্য-নাৎসি দলগুলো মূলত ইউক্রেনের ডানপন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে বেশী উৎসাহী। তিনি বলেন, "এই চক্রের ইউরোপজুড়ে নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ তাদের পোল্যান্ডেও যোগাযোগ রয়েছে৷ এটা কেবল জার্মানি-ইউক্রেনের বিষয় নয়৷”

ইউক্রেনপন্থি নাৎসি

ইউক্রেন সমর্থনকারী আরেকটি উল্লেখযোগ্য ডানপন্থি গোষ্ঠী ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া নব্য-নাৎসি সশস্ত্র বাহিনী "থার্ড পাথ” যার সদস্য সংখ্যা কয়েকশ জন। এই গোষ্ঠীটি গত অক্টোবরে জার্মান-পোল্যান্ড সীমান্তে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে টহল দিয়ে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলো। তাদের ওয়েবসাইটে সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া রাশিয়ান সাম্রাজ্যবাদকে প্রত্যাখান এবং ইউক্রেন থেকে পালানো জাতীয়তাবাদীদের সাহায্য করার কথা জানানো হয়েছে। পটারের মতে এই গোষ্ঠীটি মনে করে ইউরোপকে শ্বেতাঙ্গ জাতির জোট হিসেবে দেখে এবং ইউক্রেনেরও শ্বেতাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণে অধিকার রয়েছে বলে।

তিনি আরো বলেন, "এখানে বাম বিরোধিতা কিভাবে প্রধান ভূমিকা পালন করছে, সেটা খুবই মজার ব্যাপার। তারা পুটিনের উদ্দেশ্যকে যেভাবে ব্যাখ্য়া করছে সেটা খুবই অদ্ভুত। পুটিন বলেছেন যে তিনি ইউক্রেনকে নাৎসিমুক্ত করতে আসছেন এবং একারণে তারা পুটিনকে বামপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।"

আজোভ ব্যাটেলিয়ন ২০১৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনে প্রতিষ্ঠিত হয়। অত্যাচার এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে তাদেরকে ইউক্রেনের জাতীয় রক্ষাবাহিনীতে সংযুক্ত করা হয়।

কিন্তু জার্মান নব্য- নাৎসিরা আসলেই আজোভদের সাথে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে কিনা তার কোন প্রমাণ নেই। আমাদিউ আন্তোনিও ফাউন্ডেশনের সংবাদমাধ্যম বেলটাওয়ার ডট নিউজ গত সপ্তাহে জার্মান স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চান এবং জানা যায় মাত্র ২৭ জন ইউক্রেনের যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা পোষণ করে। কিন্ত মাত্র ৫ জন ইউক্রেনে গেছে বলে মনে করা হয় এবং আদতে কতজন যুদ্ধে নেমেছে তা জানা যায়নি।

পুটিনপন্থি জোট 

জার্মানির চরম ডানপন্থি অনেক গোষ্ঠীই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে সমর্থন করছে। ‘ফ্রি থুরিঙ্গিয়ান' নামের একটি চরম ডান সংস্থার টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকে দেখা যায়, "যখন পুটিন জিতে যাবে তখন পুরুষরা আবার পুরুষ হবে, নারী নয়। জ্বালানি এবং বিদ্যুতের মূল্য কমবে, ইসলামিকরনের অবসান হবে, এবং সবুজ বামপন্থিরা তালাবদ্ধ হবে।"

সবচেয়ে স্পষ্টভাবে পুটিনকে সমর্থন করে মাত্র এক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ফ্রাই জাখশেন নামের একটি ডান গোষ্ঠী।  এই সংস্থাটি এখন ন্যাটোকে বিশ্ববাদী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মনে করে যা যুদ্ধকে উসকে দিতে সাহায্য করেছিলো। কিস বলেন, "ফ্রাই জাখশেনের ক্ষেত্রে এটা খুবই স্পষ্ট যে তারা নিজেদেরকে আদর্শগতভাবে পুটিনের অংশীদার মনে করেন এবং আমি বলবো, ষড়যন্ত্রের আদর্শের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সত্য।"

মূলধারার ডানপন্থিরা এখন দ্বিধাগ্রস্থ

প্রতিষ্ঠিত জার্মান ডানপন্থি দলগুলি এই রাজনৈতিক দোটানার মধ্যে পড়েছে। দ্য অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) নিজেদেরকে যেকোন একটি দিকে আনতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছে। যেখানে তাদের চেয়ারম্যান, টিনো ক্রুপাল্লা প্রথম দিকে রাশিয়ান আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিলো, সেখানে অন্যান্য আঞ্চলিক প্রভাবশালী নেতারা এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলো।

কিস বলেন, "মতাদর্শের দিক থেকে তারা খুবই কাছাকাছি। তারা শুধুমাত্র একজন সমর্থবান ব্যক্তি চান, তারা সবাই গণতন্ত্র এবং লিঙ্গসমতার বিপক্ষে। কিন্তু তারা এটাও জানেন যে জনমতে এটা প্রতিষ্ঠা করা খুব কঠিন৷ বেশিরভাগ জার্মান জানেন যে এই যুদ্ধ কতটা ভয়াবহ এবং এটা কারা শুরু করেছে।"

কিস মনে করেন যে এএফডি সম্ভবত এই সঙ্কটকে সরকারবিরোধী বক্তব্যের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে। তিনি বলেন, "আমি মনে করি শীঘ্রই যখন জার্মানি শক্তি, সুরক্ষা এবং জ্বালানি মূল্যের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করবে তখন এএফডি এই যুদ্ধের সমস্যার ভয়াবহতা কে কমিয়ে এনে একে অতিক্রম করে যাবার চেস্টা করবে।"

বেন নাইট/এএস