পুটিনকে ঘিরে জার্মানিতে অস্বস্তি
২ মার্চ ২০২২ইউক্রেনের উপর রুশ হামলা পশ্চিমা বিশ্বের রাজনীতি জগতকে অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছে৷ ভ্লাদিমির পুটিনের প্রকৃত মতলব সম্পর্কে পূর্বাভাস সত্য প্রমাণিত হওয়ায় জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে জ্বালানি নীতি সম্পর্কে একেবারে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে৷ গত রবিবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের সেনাবাহিনীর জন্য বাড়তি অর্থায়ন ও জ্বালানি নীতির ক্ষেত্রে বড়সড় রদবদলের ঘোষণা করেন৷ সরকারের শরিক সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দল যে সেই নীতির পক্ষে জোরালো সমর্থন জানাবে তা বলাই বাহুল্য৷ প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সাবেক চ্যান্সেলের ইউনিয়ন শিবিরও দেশের কঠিন সময়ে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সরকারের রাশিয়া নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে৷
কিন্তু জাতীয় স্তরে ঐক্যের এই সুরে তাল মেলাতে প্রস্তুত নয় জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দল ও বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে৷ রাজনৈতিক আদর্শের দুই মেরুতে অবস্থান সত্ত্বেও ‘অন্ধ রাশিয়া-প্রীতি'-র প্রশ্নে এই দুই দলের মধ্যেই অদ্ভুত মিল রয়েছে৷ কোনো প্ররোচনা ছাড়াই ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা অবশ্য দুই দলের একাংশে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে৷
সাবেক পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টির উত্তরসূরি ‘ডি লিংকে' দলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোন্দল দেখা যাচ্ছে৷ সারা ভাগেনক্নেশট-সহ দলের সাত জন সংসদ সদস্য এক যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেনে জার্মানির অস্ত্র সরবরাহ ও রাশিয়ার উপর জার্মানির নিষেধাজ্ঞার কড়া সমালোচনা করেন৷ দলের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র গ্রেগর গিসি এক খোলা চিঠিতে তাঁদের ‘গোঁড়া' ও ‘আবেগহীন' অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন৷ আক্রান্ত দেশ হিসেবে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি অবজ্ঞারও অভিযোগ করেছেন তিনি৷ ভাগেনক্নেশট অবশ্য গিসির অভিযোগ উড়িয়ে তার পালটা সমালোচনা করেছেন৷ তিনি সামরিক সংঘাত মেটাতে কূটনৈতিক স্তরে আরও উদ্যোগের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের মধ্যেও পুটিনের কাণ্ড নিয়ে অস্বস্তি কম নয়৷ দলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে ক্রেমলিনের বর্তমান শাসক মহলের ঘনিষ্ঠতার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর দলের একাংশ ভোল বদলে প্রকাশ্যে এমন পদক্ষেপের নিন্দা জানানোর পক্ষে সওয়াল করছেন৷ জার্মান সেনাবাহিনীর প্রাক্তন জেনারেল হিসেবে দলের অন্যতম নেতা ইওয়াখিম ভুন্ডরাক বলেন, বর্তমানে একমাত্র নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমেই রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব, যদিও তার পরিণতি এখনো স্পষ্ট নয়৷
বাম ও ডানপন্থি দুই দলের পাশাপাশি ‘রাশিয়া প্রীতি' ঝেড়ে ফেলার জন্য চাপের মুখে রয়েছেন জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার৷ পুটিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এসপিডি দলের এই প্রাক্তন নেতা রাশিয়ার একাধিক বড় কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য৷ তার দফতরের প্রধানসহ চারজন কর্মী শ্র্যোডারের মুখে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দার কোনো লক্ষণ না দেখে পদত্যাগ করেছেন৷ এসপিডি দলের একাংশ তাকে বহিষ্কারের দাবি জানালেও দলের সাধারণ সম্পাদক কেভিন ক্যুনার্ট সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)