রাশিয়া ফিরতেই গ্রেপ্তার নাভালনি
১৮ জানুয়ারি ২০২১গত অগাস্টে তাঁকে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল। তবে ঠিক সময়ে জার্মানিতে আসতে পারায় তিনি বেঁচে যান। বেশ কয়েক মাস ধরে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছেন নাভালনি। কিন্তু রোববার জার্মানি থেকে রাশিয়া পৌঁছতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাশিয়ার একটি টিভি চ্যানেলের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর নাভালনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যা ও বানানো। তবে তিনি আর কোনো কিছুকেই ভয় পান না। তাঁর দাবি, রাশিয়া ফেরা নিয়ে তাঁর মনে কোনো দ্বিধা ছিল না। কারণ, রাশিয়াই তাঁর ঘর।
এরপর নাভালনি পাসপোর্ট কন্ট্রোলে যেতেই তাঁকে আটক করে পুলিশ। তাঁর সহযোগীর তোলা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নাভালনি পুলিশকে বলছেন, তাঁর আইনজীবীকে আসতে দিতে হবে। পুলিশ অবশ্য সেই অনুরোধ মানেনি। এরপর নাভালনিকে কাছের একটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তাঁর স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া বলেছেন, ''কর্তৃপক্ষ আমার স্বামীকে ভয় পায় বলেই তিনি মাতৃভূমিতে ফেরার পর এই ধরনের কাজ করল। তবে সব চেয়ে বড় কথা, আমার স্বামী বলেছেন, তিনি ভয় পান না। আমিও ভয় পাই না। আমি আপনাদেরও বলছি, ভয় পাবেন না।''
জার্মানি থেকে একটি রুশ এয়ারলাইন্সের বিমানে করে নাভালনি মস্কো ফিরেছেন। কিন্তু যে বিমানবন্দরে তাঁর নামার কথা ছিল, শেষ সময়ে তা বদল করা হয়। বিমান নামার কয়েক মিনিট আগে জানানো হয়, ওই বিমানবন্দরে নামা যাবে না, কারণ, তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাই অন্য বিমানবন্দরে বিমানটি নামবে। ওই বিমানেই ছিলেন রয়টার্সের প্রতিনিধি। তিনি জানিয়েছেন, পাইলট জানান, টেকনিক্যাল কারণে নির্ধারিত বিমানবন্দরে নামা যাচ্ছে না।
কেন বিমানবন্দর বদলানো হলো, রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ তার কোনো কারণ দেখায়নি। নাভালনি ফিরলে তাঁকে যে গ্রেপ্তার করা হবে তা রাশিয়া আগেই জানিয়েছিল। ৪৪ বছর বয়সী নাভালনি অবশ্য তাঁর সমর্থকদের বিমানবন্দরে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন। আর কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরে অনুমতি ছাড়া কোনো সমাবেশ সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও তাঁর সহযোগী ও সমর্থকরা বিমানবন্দরের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন। বেশ কিছু সহযোগীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সমর্থকদের সরিয়ে দেয়া হয়।
বিমানবন্দরের বাইরে থাকা ডিডাব্লিউয়ের প্রতিনিধি এমিলি সেরউইন জানাচ্ছেন, বিমানবন্দরের বাইরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। মাইনাস ২২ ডিগ্রির তাপমান উপেক্ষা করে প্রচুর লোক এসেছেন। তাঁরা সমানে স্লোগান দিচ্ছেন, 'রাশিয়া আবার মুক্ত হবে'।
রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জালিয়াতির অভিযোগে নাভালনির বিচার চলছে। আদালত রায় দেয়া পর্যন্ত তাই তাঁকে জেলে থাকতে হবে। তিনি যখন জার্মানিতে ছিলেন, তখন সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি আসেননি। ফলে তিনি নিয়ম ভেঙেছেন।
জার্মানিতে বিমানে ওঠার আগে নাভালনি বলেন, ''রাশিয়া আমার দেশ। আমার সেখানে ফেরার অধিকার আছে। রাশিয়ায় ফিরলে আমার আর কী ক্ষতি হতে পারে?''
অ্যামেরিকা, ইইউ-র নিন্দা
নাভালনিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে বলে দাবি জানালো অ্যামেরিকা এবং ইইউ। অ্যামেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শদাতা বলেছেন, এটা শুধু মানবাধিকার ভঙ্গের ঘটনাই নয়, রাশিয়ার প্রতিবাদী মানুষকে অপমান করা। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া উচিত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে দেখছি, নাভালনির মুখ বন্ধ করার জন্য রাশিয়া কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেছেন, নাভালনিকে এ ভাবে গ্রেপ্তার করাটা মেনে নেয়া যায় না। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)