রাশিয়াপন্থি শক্তির উত্থানে জার্মানিতে দুশ্চিন্তা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪জার্মানিতে পর পর তিনটি রাজ্যের নির্বাচনে উগ্র দক্ষিণপন্থি এএফডি ও সদ্য গঠিত পপুলিস্ট বামপন্থি দল বিএসডাব্লিউ দলের সাফল্য দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে৷ বিশেষ করে দুটি ‘রাশিয়া-বান্ধব' ও ন্যাটো-বিরোধী দলই যেভাবে ইউক্রেনের জন্য জার্মানির সামরিক সাহায্য কমানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছে, তা বর্তমান সরকারের নীতি সম্পর্কে ভোটারদের একাংশের সংশয়ের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে৷ মূল স্রোতের দলগুলি এখনো পর্যন্ত এএফডি দলের সঙ্গে জোট সরকার গড়তে অস্বীকার করে এলেও বিরোধী পক্ষে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে সেই দল৷ তবে বিএসডাব্লিউ দল একাধিক রাজ্যে জোট সরকারের শরিক হতে পারে, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷ জার্মানির ফেডারেল কাঠামোয় ১৬টির মধ্যে তিনটি রাজ্যে এমন পট পরিবর্তন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব রাখতে পারে৷
গত রোববার ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যের নির্বাচনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের এসপিডি দল সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি হিসেবে নিজস্ব অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও এবার জোট সরকার গড়তে বিএসডাব্লিউ দলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে৷ কিন্তু সেই দল পূর্বশর্ত হিসেবে রাশিয়া সংক্রান্ত নীতির ক্ষেত্রে এসপিডি-র অবস্থান বদলের দাবি করছে৷ ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে অবিলম্বে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার দাবি এবং জার্মানির ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের তীব্র বিরোধিতা করছে মাত্র নয় মাস আগে গঠিত এই দল৷
পূর্বাঞ্চলের তিন রাজ্যে দুই চরমপন্থি দলের এমন সাফল্য এবং বেড়ে চলা প্রভাব জার্মানির বাকি দলগুলিকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে৷ সামরিক জোট ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা এবং আক্রান্ত দেশকে সামরিক সহায়তার বিষয়ে শলৎস সরকারের তিন শরিক দল এবং প্রধান বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের অবস্থান অভিন্ন৷ ঐ তিন রাজ্যে সরকারের শরিক হিসেবে বিএসডাব্লিউ এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এএফডি সেই মৌলিক ঐকমত্যে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে৷
জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করে চরমপন্থি শক্তির সমর্থকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মতবদল করতে পারবে, এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ চ্যান্সেলর হিসেবে শলৎসের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে৷ এমনকি তাঁর এসপিডি দলের মধ্যেও তাঁকে আর নতুন করে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী না করার পক্ষে অনেকে সওয়াল করছেন৷ সরকারের বাকি দুই শরিক দলেরও বেহাল অবস্থা৷ একের পর এক নির্বাচনে সমর্থন হারাচ্ছে তারা৷ রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এফডিপি দলের মধ্যে সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য দাবি বাড়ছে৷
প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে ইউনিয়ন শিবির সমর্থনের বিচারে জাতীয় স্তরে শীর্ষে থাকলেও তাদের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের নিজস্ব জনপ্রিয়তাও প্রায় শলৎসের কাছাকাছি৷ ফলে জার্মানির মূল স্রোতের এই চার প্রধান রাজনৈতিক শিবির আগামী নির্বাচনে কতটা ভালো ফল করতে পারবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ দুর্বল চ্যান্সেলর ও তিন রাজনৈতিক দলের জোট সরকার আদৌ অবশিষ্ট এক বছর টিকে থাকবে কিনা, সে বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে৷
এসবি/জেডএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)