রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের চাপ
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিগত বছরগুলিতে বার বার বিড়ম্বনায় পড়ছে৷ এক দিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বেশ কিছু আচরণ বরদাস্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে, অন্য দিকে পূর্ব প্রান্তে এমন বিশাল ও শক্তিশালী প্রতিবেশীকে উপেক্ষা করাও কঠিন৷ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থও এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হচ্ছে৷ কিন্তু সম্প্রতি রাশিয়ার সরকার বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির বিষক্রিয়া ও গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে৷ রাশিয়ার উপর আরো শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর জন্য চাপ বাড়ছে৷ অন্যদিকে সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর পথও পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছেন না কিছু ইইউ নেতা৷
এমনই প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেপ বরেল মস্কো সফর করে রাশিয়ার নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা চালিয়েছেন৷ মূলত জার্মানি ও ফ্রান্সের উদ্যোগে তিনি বিতর্কিত এই কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ কিন্তু রবিবার বরেল বলেন, রাশিয়া ইইউ-র সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ চালাতে প্রস্তুত নয়৷ এক ব্লগ পোস্টে তিনি নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরেন৷ তাই ইউরোপকে নতুন নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপের কথা ভাবতে হবে৷ তাঁর দুই দিনের মস্কো সফরের সময় সে দেশ থেকে যেভাবে তিন জন পোল্যান্ড, জার্মানি ও সুইডেনের একজন করে কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে, তার ফলেই সেই মনোভাব স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে বরেল মনে করেন৷ তাঁর মতে, রাশিয়া ইউরোপ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হবার পথ বেছে নিয়েছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে৷
বরেল আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন৷ তারপর মার্চ মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে৷ বরেলের এমন মূল্যায়ন নরমপন্থিদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশই রাশিয়ার প্রতি আরও কড়া মনোভাবের পক্ষে সওয়াল করছে৷ সম্প্রতি রাশিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভে দশ হাজারের বেশি মানুষকে আটক হবার পর মস্কোর বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ বাড়ছে৷ ইইউ পার্লামেন্টও এমন ডাক দিচ্ছে৷
রাশিয়া ও ইইউ-র মধ্যে বেড়ে চলা উত্তেজনার জের ধরে সমুদ্রের নীচে রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক আরও দানা বাঁধছে৷ মার্কিন প্রশাসন এমনকি ‘নর্ড স্ট্রিম ২' প্রকল্পের উপর নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছে৷ সেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করার জন্য ঘরে-বাইরে চাপ বাড়ছে৷ অথচ শনিবারই আবার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে৷
শুক্রবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এই প্রকল্পের প্রতি আবার তার সমর্থন জানিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, তাঁর সরকার নাভালনিকে কেন্দ্র করে মস্কোর সঙ্গে উত্তেজনার সঙ্গে এই বিষয়টিকে জড়াতে চায় না৷ জার্মানির সবুজ দল খোলাখুলি এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে৷ অর্থাৎ চলতি বছরের সাধারণ নির্বাচনের পর এই দল আগামী জোট সরকারের শরিক হলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি, এপি)