1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিউত্তর কোরিয়া

রাশিয়ায় যুদ্ধ করা উত্তর কোরীয় সেনাদের মনে পরিবর্তন আসবে?

১২ নভেম্বর ২০২৪

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পিয়ংইয়ং হাজার হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছে বলে জানা গেছে৷ তাদের বেশিরভাগই আগে কখনও বিদেশে যাননি৷

https://p.dw.com/p/4mvh2
উত্তর কোরিয়ার সেনাসদস্য
উত্তর কোরিয়ার জন্য বিপজ্জনক চিন্তাভাবনার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে রাশিয়ায় যুদ্ধ করা দেশটির সেনারাছবি: picture-alliance/Kyodo

রাশিয়া ভ্রমণে তাদের উপলব্ধি আসতে পারে যে, উত্তর কোরিয়া কতটা দরিদ্র৷

রাশিয়ার যুদ্ধে সৈন্য পাঠানোর ফলে পিয়ংইয়ং এর সঙ্গে মস্কোর অংশীদারত্ব শক্তিশালী হবে৷ তবে উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার সৈন্য এর ফলে বিদেশ এবং ভিন্ন জীবনধারার সংস্পর্শেও আসবে৷

সঠিক সংখ্যা যাচাই করা কঠিন৷ তবে পশ্চিমা গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, রাশিয়ায় ইউক্রেনের অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় কুরস্ক অঞ্চলে এরইমধ্যে উত্তর কোরিয়ার ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷

যদিও তারা একটি যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন, কিন্তু এশিয়ায় রাশিয়ার পূর্ব সীমান্ত এবং ইউরোপে এর পশ্চিম সীমান্তের মধ্যে দীর্ঘ যাত্রায় রাশিয়ার নানা শহর এবং শহরের সম্পদের প্রাচুর্যও তাদের নজরে পড়বে৷ নিজ দেশের চেয়ে ভালো খাবার এবং মজুরিও পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের৷

সিউলের কুকমিন ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের রুশ বংশোদ্ভূত অধ্যাপক আন্দ্রেই ল্যাংকভ ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এই সৈন্যদের অনেকেই গ্রামাঞ্চল থেকে আসা খামারির ছেলে বা জুনিয়র অফিসার, যারা প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বকে দেখতে পাবে৷ তারা এটা অবশ্যই বুঝতে পারবে যে তাদের দেশ বিচ্ছিন্ন এবং অত্যন্ত দরিদ্র৷''

তিনি বলেন, ‘‘যদিও তারা যা দেখবে তার বেশিরভাগই ফ্রন্টলাইন, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ইত্যাদি, তবুও তারা সেখানে যাওয়ার আগে রাশিয়ার গ্রামাঞ্চল দেখে থাকবে৷ তারা অনিবার্যভাবে নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে শুরু করবে কেন তাদের দেশ রাশিয়ার মতো ধনী নয়৷''

‘নায়ক' হিসেবে ফেরা

যারা সামনের সারিতে লড়াইয়ে বেঁচে যাবেন, তারা এমন সব ধারণা নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, যা শাসকদের প্রচারণার বিপরীত৷ দেশটির শাসকেরা জোর দিয়ে বলেন যে উত্তর কোরিয়া বিশ্বের অন্যতম সুখী এবং সবচেয়ে উন্নত দেশ৷ বিশ্লেষকেরা অবশ্য সতর্ক করেছেন যে সৈন্যরা তাদের পরিবার এবং এমনকি বন্ধুদের কাছেও সমালোচনামূলক বক্তব্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকবেন৷ উত্তর কোরিয়ার গোপন পুলিশ শাসকগোষ্ঠী বা সমাজের যে-কোনো সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে বিবেচনা করে এবং কঠোর শাস্তি দেয়৷

ল্যাংকভ বলেন, ‘‘এই ব্যক্তিরা (উত্তর কোরিয়ার সৈন্য) কী বলা নিষেধ, সেটা জেনেই বড় হয়েছে, তারা আত্মঘাতী নায়ক হতে চাইবে না এবং তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলবে না৷'' ল্যাংকভ বরং মনে করেন, ‘‘তারা জাতির নায়ক হিসাবে বিবেচিত হওয়া থেকেও উপকৃত হবে এবং কিম জং উন তাদের উদারভাবে পুরস্কৃত করবেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই সৈন্যরা রাশিয়ায় যা দেখবে এবং যা করবে, তার প্রভাব তাদের উপর পড়বে৷ তবে আমরা অন্তত কয়েক দশকের মধ্যে সেটা রাজনৈতিকভাবে অর্থবহ হওয়ার আশা করতে পারি না৷''

​​বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোরতা

বহু দশক ধরে, উত্তর কোরিয়ার সরকার তার জনগণকে যে-কোনো বিদেশি ধারণা থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য কাজ করে গেছে৷ এমন  প্রোপাগান্ডা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে৷ বিদেশি সিনেমা বা সংগীতসহ ধরা পড়লে কঠোরভাবে দমন করা হয় এবং চীনে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা নাগরিকদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে পাঠানো হয়৷ পোশাক বা চুলের স্টাইল বিদেশ থেকে প্রভাবিত বলে মনে করা হলেও গ্রেপ্তার করার ঘটনা ঘটে৷

ট্রয় ইউনিভার্সিটির সিউল ক্যাম্পাসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড্যান পিংকস্টন মনে করেন, কোনোভাবেই উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের রাশিয়ায় বিদেশি প্রভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা রাখা সম্ভব হবে না৷

ডিডাব্লিউকে পিংকস্টন বলেন, ‘‘উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিমানে পশ্চিমে পাঠানো হয়েছে৷ সম্ভবত এ সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হচ্ছে, তারা চায় না যে সৈন্যরা দেশটি অতিক্রম করার সময় ট্রেন থেকে রাশিয়ান শহরগুলো দেখতে পাক৷''

তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, খুব সম্ভবত তাদের মধ্যে অনেকেই এই প্রথমবার বিমানে চড়েছেন৷

পিংকস্টন বলেন, ‘‘তারা খুব দ্রুত উত্তর কোরিয়ার পশ্চাদপদতা উপলব্ধি করবে, যদিও আমি মনে করি যে অফিসাররা মেলামেশা সীমিত করার জন্য এই সৈনিকদের যতটা সম্ভব সাধারণ জনগণ থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করবে৷''

ক্যাপ্টেনরাও জেনারেল হবেন

রাশিয়ার নির্মাণ কাজ এবং কাঠ কাটার কাজ বা চীনের রেস্তোরাঁ ও কারখানায় কাজ করার জন্য পাঠানো উত্তর কোরিয়ানদের যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, এই সৈনিকদের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হতে পারে৷ প্রত্যাবর্তনকারী সৈন্যদের নির্দিষ্ট সময় ধরে মূল্যায়ন এবং পুনঃশিক্ষার সময়সীমা অতিক্রম করার পরই কেবল তাদের উত্তর কোরিয়ার সমাজে আবার মেলামেশার অনুমতি দেওয়া হতে পারে৷

কুকমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ল্যাংকভও এ বিষয়ে একমত যে ফিরে যাওয়া সৈন্যদের ‘নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে৷'

তিনি বলেন, ‘‘তারা রাশিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতিতে থাকা অবস্থায় এটি আরও কঠিন হতে পারে, কিন্তু যারা ফিরে যাবে তারা যা দেখেছে সে সম্পর্কে কথা বললে তাদের জন্য সেটা বিপজ্জনক হতে পারে৷''

ল্যাংকভ মনে করেন যে উত্তর কোরিয়ার বাইরে জীবনের অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য দেশের ‘সুস্পষ্ট সমৃদ্ধি' তাদের উদ্বেলিত করে তুলবে৷

তিনি বলেন, ‘‘তারা অবিলম্বে একটা বিপ্লব শুরু করবে এমনটা আমি আশা করি না৷ তবে ইউক্রেনে দায়িত্ব পালনকারী ক্যাপ্টেনরা কয়েক বছরের মধ্যে জেনারেল হয়ে যাবেন এবং তাদের এই বিষয়ে সন্দেহ অব্যাহত থাকবে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থা নিয়ে এই সন্দেহ অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে৷''

জুলিয়ান রিয়াল/এডিকে