নারীর সুরক্ষায় আরেকটি উদ্যোগ
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭২০১২ সালে গোটা ভারতকে নাড়িয়ে দেওয়া নির্ভয়াকাণ্ড ঘটেছিল চলন্ত বাসে৷ তারপর সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা হয়েছে বহুবার৷ কিন্তু বাস, ট্যাক্সি অথবা মেট্রোতে নারী নির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ দিল্লি সরকার, মহিলা কমিশন, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক, দিল্লি পুলিশসহ প্রায় সব পক্ষই এই বিষয়ে চিন্তিত ছিল এতদিন৷ কারণ, চলন্ত গাড়িতে ‘চাইল্ড লক'-এর বোতাম থাকে চালকের কাছে৷ তবে গাড়ির প্রতিটি দরজায় অন্য ব্যবস্থাও থাকে৷ কিন্তু ওলা, উবেরের মতো বাণিজ্যিক ট্যাক্সিতে চড়া অনেকেই সেটা জানেন না৷ যার ফলে বিপদে পড়ে নিস্তারের উপায় খুঁজে পান না মহিলা যাত্রীরা৷ সেটাই শেখাবে ওই স্টিকার৷
ইদানীংকালের 'ওলা', ‘উবার'-এর মতো বেসরকারি অনলাইন পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা নিতে গিয়ে অনেকক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়ছেন মেয়েরা৷ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাব বুকিং করে কম সময়ে এবং অল্প খরচে গন্তব্যে পৌঁছানো এখন ফ্যাশন৷ এতগুলো ভালো দিকের পাশাপাশি অনেক সময় ক্যাবের চালকদের লালসার শিকার হতে হচ্ছে কলেজ পড়ুয়া থেকে সাধারণ গৃহবধূদের৷
এ সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিলো দিল্লি রাজ্য পরিবহন সংস্থা৷ নারী সুরক্ষার স্বার্থে রাজ্য পরিবহন দপ্তর নির্দেশ জারি করেছে, সমস্ত কমার্শিয়াল ট্যাক্সিতে কমপক্ষে ৪টি স্টিকার লাগিয়ে রাখতে হবে, যাতে স্পষ্ট উল্লেখ থাকবে, কীভাবে ‘চাইল্ড-লক' ব্যবস্থাকে অকেজো করে ফেলা যায়৷ চাইল্ড-লক স্টিকার সাঁটিয়ে রাখতে হবে৷ এবং যাত্রীদের পরামর্শ দেওয়া থাকবে, গাড়ি চলতে শুরু করার আগেই যেন ‘চাইল্ড-লক' ব্যবস্থা অকেজো করে দেওয়া হয়৷
দু'দিন আগেই দিল্লি রাজ্য পরিবহন সংস্থার পরিচালনা সমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে৷ খুব শীঘ্রই পরিবহন দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে, দিল্লির বুকে ট্যাক্সি চালানোর লাইসেন্স নিতে হলে গাড়ির ভেতরে অন্তত ৪টি স্টিকার লাগাতে হবে৷ তাতে থাকে ‘চাইল্ড-লক' খোলার পদ্ধতির বিবরণ৷ যে ট্যাক্সিতে এই বিবরণমূলক স্টিকার থাকবে না, সেই গাড়ি দিল্লির রাস্তায় চলতে পারবে না৷ এ জন্য দিল্লির ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন দপ্তরের অপরাধদমন শাখাকেও চিঠি দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ বলা হচ্ছে, নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও পরীক্ষা করে নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে৷
স্বভাবতই দিল্লির আম আদমি পার্টি পরিচালিত সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি ছাত্রী, চাকুরিজীবী মহিলা, গৃহবধূ, অবিভাবক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ৷ তবে প্রায় প্রত্যেকেরই অভিমত, ‘‘এই একটি উদ্যোগ নিয়েই নারী নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ নারী সুরক্ষা বাড়াতে সরকার ও পুলিশকে আরও অনেক কাজ করতে হবে৷ সেইসঙ্গে অভিভাবক, কর্মরত মহিলাসহ ছাত্রীদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে৷''
দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী জয়হিন্দ বলছেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রস্তাব ছিল৷ আলোচনা চলছিল৷ দিন হোক বা রাত, দিল্লির বুকে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গাড়িতে চড়ে যাওয়ার সময় অসৎ চালকের খপ্পরে পড়তে হয় মেয়েদের৷ ইচ্ছা থাকলেও গাড়ির দরজা খুলতে পারেন না৷ ফলে, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে যায়৷ তবে, এবার সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় বের করা গেছে৷ বাণিজ্যিক ট্যাক্সিতে চড়ার পর গাড়ি চলতে শুরু করার আগে ‘চাইল্ড-লক' অকেজো করে দিতে হবে৷ সেই জন্য সচেতনতার প্রয়োজন৷ সচেতনতা বাড়াবে ট্যাক্সিতে সাঁটিয়ে রাখা স্টিকার৷''
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী আগেই জানিয়েছেন, ‘‘‘গোটা দেশজুড়ে নারী সুরক্ষার স্বার্থে মোবাইল ফোনে স্বয়ংক্রিয় ‘আতঙ্ক বোতাম' চালু করতে চায় নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ সম্ভবত অক্টোবরেই এই পদ্ধতি চালু হয়ে যাবে ভারতে৷'' দিল্লি পরিবহন দপ্তরের এই ‘চাইল্ড-লক' উদ্যোগ সাধুবাদ কুড়াচ্ছে সব মহলেই৷ ক্যাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গার্গী কলেজের ছাত্রী কোমল শর্মা৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পাঠরত ছাত্রী খুশপ্রীত চাড্ঢাদের মতো অনেকেই৷
বন্ধু, প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷