রিভার্স গ্রাফিটি পদ্ধতিতে অভিনব শিল্পকর্ম
৮ জুন ২০১৮জার্মানির শিল্পী ক্লাউস ডাউফেন প্রেশার ওয়াশার নিয়ে সৃষ্টির কাজে মেতেছেন৷ ফ্রান্সের দক্ষিণে সেট শহরে বন্দরের প্রাচীরই এবার তাঁর পট হয়ে উঠেছে৷ সেখানে ১৩টি ‘রিভার্স গ্রাফিটি’ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ তার জন্য প্রাচীর পরিষ্কার করা হচ্ছে৷ ক্লাউস বলেন, ‘‘নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও চার দেওয়ালের বাইরে কাজ করতে দারুণ লাগে৷ একটি বিষয় নিয়ে ঠিক সমালোচনা নয়, আমাকে প্রশ্ন করা হয়৷ এই শিল্প অস্থায়ী হলেও আমাকে মোটেই পীড়া দেয় না, বরং আকর্ষণীয় মনে হয়৷’’
তাঁর সরঞ্জাম হলো প্রেশার ওয়াশার৷ ২ থেকে ৩ বার ইউনিট চাপে যন্ত্রটি প্রাচীরের উপর পানি নিক্ষেপ করে৷ চাপ আরও বাড়ালে প্রাচীরের কাঠামোর ক্ষতি হবে৷
ক্লাউস ডাউফেন ও ক্লিনিং টেকনিশিয়ান নিক হাইডেন বেশ কয়েক বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করছেন৷ যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরাসরি ভূমধ্যসাগর থেকে আনা হয়৷ নিক বলেন, ‘‘শুধু পানি দিয়ে এমন দারুণ আবহ ফুটিয়ে তোলা যে সম্ভব, সেটা সত্যি অসাধারণ৷ প্রাচীরের গায়ে গজানো গাছপালা আর লতাপাতা পরিষ্কার করলেই এমন স্পষ্ট রূপ সৃষ্টি করা সম্ভব৷ মুখচ্ছবিগুলির অভিব্যক্তি সত্যি অসাধারণ৷’’
ক্লাউস ডাউফেন-এর আরেকটি সরঞ্জাম হলো কাঠের স্টেনসিল৷ এগুলি দিয়ে বন্দরের প্রাচীরের গায়ে ১৩টি প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে৷ সেই সব মানুষ এই শহরেই বসবাস করেছেন৷ ক্লাউস বলেন, ‘‘আমি বেশ কয়েকটি বই কিনেছি, যাতে সিট শহরের পুরানো ছবির সংগ্রহ রয়েছে৷ সেখান থেকেই আমি কিছু অসাধারণ মুখচ্ছবি বেছে নিয়েছি৷ বিখ্যাত ব্যক্তিদের চাই নি, এমন মানুষ বেছে নিয়েছি, যাদের মুখচ্ছবি জীবনেরই কাহিনি তুলে ধরে৷ সেটাই একমাত্র শর্ত৷’’
সিট মঁপেলিয়ে শহরের প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত৷ ভূমধ্যসাগর উপকূলে মাছ ধরার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এটি৷ শহরের মূল নিদর্শন হলো বন্দরের প্রাচীর, যা প্রায় ৬৫০ মিটার বিস্তৃত ও ২ মিটার ৮০ সেন্টিমিটার উঁচু৷ ক্লাউস ডাউফেন বলেন, ‘‘বন্দরের এই প্রাচীরই শহরের প্রথম নির্মাণের চিহ্ন, যে কারণে সিট আদৌ শহর হয়ে উঠেছে৷ বন্দরই শহরের উৎস৷ ৩৫০ বছর আগে সেটি তৈরি হয়েছিল৷ মানুষের বসতি গড়ে উঠেছিল৷ সেটাই আমার সৃষ্টিকর্মের প্রেক্ষাপট৷’’
ক্লাউস ডাউফেন শিল্প নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ পেশায় তিনি শিক্ষক৷ অবসর সময়ে রিভার্স-গ্রাফিটি শিল্পচর্চা করেন৷ ২০০৭ সাল থেকে এক জার্মান কোম্পানির সঙ্গে তিনি এই কাজ করছেন৷
তাদের প্রথম বড় প্রকল্প জার্মানিরই এলাকায় এক বাঁধের প্রাচীরে রূপায়িত হয়েছিল৷ ২০০৮ সালে জাপানে এক প্রাচীরে ফুলের সম্ভার ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল৷ ২০১২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশাল বাঘের আবির্ভাব ঘটেছিল৷ ক্লাউস ডাউফেন বলেন, ‘‘রিভার্স-গ্রাফিটি আমার কাছে শিল্পের নিখুঁত রূপ৷ অঙ্কনশিল্পী হিসেবে চিরকালই আমার বড় ফরম্যাট পছন্দ৷ বাঁধের প্রাচীরে আমি নিজস্ব সৃষ্টি ফুটিয়ে তুলতে পারি৷ এর থেকে বড় চিত্রপট আর নেই৷’’
শিল্পসৃষ্টির ক্ষেত্রে কেয়ারশার কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতার কর্মসূচি রয়েছে৷ মনুমেন্ট বা স্মৃতিস্তম্ভ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে তাদের ৩৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ তাদের অন্যতম চমকপ্রদ প্রকল্প ছিল অ্যামেরিকার বিখ্যাত মাউন্ট রাশমোর৷ ২০০৫ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মুখের আদলে তৈরি সেই পাহাড় সাফাইয়ের দায়িত্ব পেয়েছিল এই কোম্পানি৷ ব্রাজিলের রিও শহরে যিশুখৃষ্টের মূর্তি ও জার্মানিতে হেয়ারমান মনুমেন্টও সাফাই করেছে তারা৷ এখনো পর্যন্ত এই কোম্পানি গোটা বিশ্বে ১৪০টিরও বেশি দর্শনীয় স্থান বিনামূল্যে সাফাই করেছে৷
তিন দিনেই কাজ শেষ করেছেন ক্লাউস ডাউফেন৷ সিট শহরের বন্দরের প্রাচীর সম্ভবত ফ্রান্সের দক্ষিণে খোলা আকাশের নীচে সবচেয়ে বড় গ্যালারি হয়ে উঠেছে৷ তবে প্রকল্পটি চিরস্থায়ী নয়৷ ক্লাউস বলেন, ‘‘প্রাচীর কতটা কাত হয়ে রয়েছে, তার অ্যালাইনমেন্ট বা বিন্যাস এবং জলবায়ু – এই তিনটি বিষয়ের উপর সবকিছু নির্ভর করছে৷ আমার অভিজ্ঞতা বলে, উত্তর দিকে অ্যালাইনমেন্টের কারণে এখানে আদর্শ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ কমপক্ষে ৫ বছর ধরে এই শিল্পকর্ম দেখা যাবে৷
এই সৃষ্টিকর্মের নাম ‘লোকজন’৷ ফ্রান্সের দক্ষিণের এই শহরের ১৩ জন বাসিন্দাকে নিয়ে এক মনুমেন্ট গড়ে তোলা হয়েছে৷ রিভার্স-গ্রাফিটির এই সৃষ্টি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে গেলেও ডাউফেন-এর এই শিল্পকর্মের স্মৃতি অমর হয়ে থাকবে৷
কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি