রেন ফরেস্ট সংরক্ষণের কাজে দুই বোন
৫ মে ২০২১আনা পাউলা ও ফ্লাবিয়া বালদেরি নামের দুই বোন নিজেদের কিশোর বয়সের স্বপ্ন পূরণ করেছেন৷ তাদের কোপাইবা পরিবেশ সংগঠন অ্যাটলান্টিক উপকূলের রেন ফরেস্টের উদ্ভিদ জগত বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিচ্ছে৷
সেখানে প্রায় ১৩০টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে৷ এর মধ্যে কয়েকটির অস্তিত্ব লোপ পেতে বসেছে৷ কারণ অনেক বছর ধরে গাছ কাটার ফলে ‘মাতা আৎলান্তিকা' অরণ্যের একটা বড় অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷ সেই জঙ্গলের বিনাশ দেখে হয়রান হয়ে দুই বোন কিশোর বয়সেই এক পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠন গড়ে তোলেন৷ আনা পাউলা মনে করিয়ে দেন, ‘‘অ্যাটলান্টিক রেন ফরেস্ট গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ আবাসভূমিগুলির মধ্যে একটি৷ নানা প্রজাতি এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে৷ একই সঙ্গে অন্যতম বড় হুমকির মুখেও পড়েছে৷ সুরক্ষা, পুনর্গঠন ও বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে এই জঙ্গল অক্ষত রাখা আমাদের কাজের লক্ষ্য৷''
অনেক উৎসাহ ও কম অর্থ নিয়ে যে কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল, আজ তা বড় আকার ধারণ করেছে৷ দুই জীববিজ্ঞানী ইতোমধ্যে নিজেদের নার্সারি থেকে গোটা অঞ্চলে গাছপালা সরবরাহ করছেন৷ সেই অর্থ এনজিও-র আয়ের অন্যতম উৎস৷ প্রতি বছর প্রায় চার লাখ চারাগাছ প্রস্তুত করা হয়৷
আনা পাউলা একটি বৃক্ষরোপণ উদ্যোগে যোগ দিতে চলেছেন৷ ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বে ‘সেরা জা মান্তিকেইরা' পাহাড়ে কফির প্লান্টেশন ও চারণক্ষেত্র আরও সমৃদ্ধ করে তোলা হচ্ছে৷
মূল অরণ্যের সামান্য কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে৷ অথচ পানির অসংখ্য উৎসের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সেই অরণ্যের বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে৷ তবে পুনর্বনায়নের সাফল্য জমির মালিকদের মনোভাবের উপর নির্ভর করে৷ আনা পাউলা বলেন, ‘‘এস্টেটের পানির উৎসগুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে৷ যেমন কয়েকজন মালিকের আর কোনো পানি নেই৷ পুনর্বনায়নের মাধ্যমে আমরা জমিতে গাছপালা ফিরিয়ে এনে জমির সংস্কার করতে চাই, যাতে সেখানে আবার পানি ফিরে আসে৷''
ক্ষুদ্র কৃষকরা কিছুকাল আগেই সেই জমি কিনেছেন৷ প্রায় ৩০ বছর আগে আলু চাষের লক্ষ্যে জমি সাফ করা হয়েছিল৷ পরে গবাদি পশুর চারণভূমি হিসেবে সেটি ব্যবহার করা হয়েছে৷
এস্টেটের প্রায় অর্ধেক অংশে অরণ্য রয়েছে৷ এখন অরণ্যের সীমা চাষের জমির প্রান্ত পর্যন্ত আনার উদ্যোগ চলছে৷ এক দম্পতি সেখানে অরগ্যানিক চাষ করছে৷ কয়েকদিন আগে আনা পাউলা নিজের এনজিও-র মাধ্যমে প্রায় সাড়ে চার হাজার চারাগাছ পুঁতেছেন৷ এবার কয়েকটি ফলের গাছও সরবরাহ করেছেন৷
মাঠের মাঝে চারাগাছ প্রায় চেনাই যাচ্ছে না৷ অথচ মাত্র দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সেখানে ছোটখাটো একটি জঙ্গল সৃষ্টি হবার কথা৷ চাষি আন্দ্রে জি রেজেন্ডে মনে করেন, ‘‘গাছগাছালির একটা স্তর থাকলে মাটির সুরক্ষা হয়, ভূমিক্ষয় হয় না৷ বৃষ্টি হলে পানির একটা বড় অংশ মাটিতে প্রবেশ করে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভরিয়ে দেয়৷ তখন আমরা পানির উৎস নতুন করে চালু করতে পারি৷''
গাছগুলি বড় হওয়া পর্যন্ত আনা পাউলা দুই বছর ধরে চাষিদের সাহায্য করবেন৷ চাঁদা এবং বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এনজিও অর্থ পায়৷ চাষিদের অবশ্য কোনো অর্থ দিতে হয় না৷ আনা পাউলা বলেন, ‘‘এখন আমরা চারাগাছের চারিপাশের জমি ঘাস দিয়ে ভরে দিচ্ছি৷ এভাবে আর্দ্রতা ধরে রেখে গাছ আরও ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারবে৷''
আনা পাউলা ইতোমধ্যে দুইশ-রও বেশি জমির মালিককে পুনর্গঠনের কাজে অংশ নিতে রাজি করিয়েছেন৷ প্রায়ই তাঁদের যথেষ্ট বোঝানোর প্রয়োজন পড়ে৷ সে কারণে এই এনজিও বড় আকারের এক পুনর্বনায়ন প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে৷ আন্তর্জাতিক জলবায়ু সুরক্ষা উদ্যোগ সেই কাজে মদত দিচ্ছে৷
বিয়াংকা কপ্চ/এসবি