1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোজায় ভোগ্যপণ্যের সংকট কি এড়ানো যাবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে ডিম, মুরগি, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী৷ অন্যদিকে রোজার জন্য ছয়টি আমদানি নির্ভর ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলায় গতি নেই৷

https://p.dw.com/p/4NO5T
আমদানিকারকরা বলছেন গত বছরের চেয়ে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছে
আমদানিকারকরা বলছেন গত বছরের চেয়ে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমেছেছবি: Abdullah Momin

বাংলাদেশে রমজান এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে৷ সেখানে এবার রোজার আগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি৷ রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের আমদানিও গত বছরের তুলনায় কমেছে৷ তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে৷ তাই সংকট তৈরি হবে না৷ একই আশ্বাস দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীও ভোক্তাদের একসাথে বেশি পণ্য না কেনার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ ভোক্তা অধিকারকর্মীরা মনে করেন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জরুরি৷

বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম 

মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে রোজা শুরু হচ্ছে৷ প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও গত দুই সপ্তাহে মুরগি ও ডিমের দাম শতকরা ২৫ ভাগ বেড়েছে৷ প্রতিদিনই তা ক্রমাগত বাড়ছে৷

দুই সপ্তাহ আগে মুরগির প্রতি ডিমের দাম ছিল নয় টাকা৷ এখন তা ১২ টাকা৷ এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিলো ১৬০ টাকা৷ তা বেড়ে হয়েছে ২১০ টাকা৷ একইভাবে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ৷

কাঁঠাল বাগান বাজারের মাছ বিক্রেতা রতন মিয়া জানান, মাছের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে৷ রোজায় আরো বাড়বে৷ কারণ তখন চাহিদা আরো বেড়ে যাবে৷ কম দামের পাঙ্গাস ও তেলাপিয়াও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে৷’’ তার দাবি, ‘‘সরবরাহ কম তাই মাছের দাম বাড়ছে৷ আর সব কিছুর দাম বাড়ায় মাছের দামও বাড়ছে৷ একটা বাড়লে আরেকটা বাড়ে৷’’

কলাবাগানের মুরগি বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘‘ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে, গত একদিনে বেড়েছে কেজিতে ১০টাকা৷ সোনালী মুরগির দাম এক সপ্তাহে ২৮০ টাকা কেজি বেড়ে ৩২০ টাকা হয়েছে৷”

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ১২ টাকা
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ১২ টাকাছবি: Samir Kumar Dey/DW

কমেছে আমদানি

রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজের৷ রোজার আগে তাই এই ছয়টি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে৷

কিন্তু চলতি অর্থবছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এসব পণ্য আমদানি কমেছে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি৷

ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলায় সমস্যা হওয়ায় কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে৷পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়ায় বাজারে সেগুলো দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

গত বছর রমজানে ছোলার দাম ছিলো প্রতি কেজি ৭০ টাকা৷ এখন রোজা শুরুর আগেই কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা৷

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে জানুয়াারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন৷ এক বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন৷

এলসি খোলার পর বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগে৷ গত তিন মাসে ছোলার আমদানি কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ৷ তবে চিনির আমদানি স্বাভাবিক আছে৷ তারপরও দাম বাড়ছেই৷

আমদানি কমেছে খেজুরেরও৷ গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয় ২২ হাজার মেট্রিক টন৷ গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিলো ৪০ হাজার মেট্রিক টন৷

বিশ্ববাজারে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে: মোস্তফা হায়দার

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস এবং পরবর্তী রোজার এক মাসের চাহিদা অনুযায়ী ওই ছয়টি পণ্য আমদানিতে ১৫৩ কোটি মার্কিন ডলারের প্রয়োজন৷ আর শুধু রোজার এক মাসের চাহিদা পূরণে এসব পণ্য আমদানিতে প্রয়োজন ৫৬ কোটি মার্কিন ডলার৷ কিন্তু ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ি আরোপে এবার ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারেননি৷

বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল কি মিলবে?

টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘‘পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে৷ রোজার পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে৷ আমরা আগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি খুলতে পারছি৷ তবে নভেম্বর জানুয়ারিতে এই সুবিধা ছিল না৷ ফলে রমজানে গতবারের মত আমদানি করা পণ্যের সরবরাহ থাকবে না৷”

তিনি জানান, বিশ্ব বাজারে ভোজ্যতেলসহ আরো কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে৷ তবে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি৷ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বাজারে দাম কেমন হবে তা নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের উপরে৷ চাহিদার তুলনায় পণ্য কম হলে দাম বাড়তি হবে৷''

এদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেখানেও আমদানি করা পণ্যের সবরাহ কম৷

বাংলাদেশ ব্যাংক যা বলছে

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রমজানে খেজুর, সয়াবিন তেল, চিনিসহ যেসব নিত্যপণ্য ভোক্তাদের বেশি প্রয়োজন হয়, সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক ২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের হিসেব দিয়ে এই কথা বলেছেন৷ তার মতে, ‘‘যদি পণ্য সরবরাহ ও সাপ্লাই চেইন নিবিড়ভাবে তদারকি নিশ্চিত করা যায়, পণ্যগুলো যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে সহজভাবে সরবরাহ করা যায়, তাহলে রোজার মধ্যে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না৷”

তিনি আরো বলেন," বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমরা বাজার মনিটরিং করছি৷ যখন যে জায়গায় যে ধরনের নীতি সহায়তা দরকার হচ্ছে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিচ্ছে৷ এলসির ক্ষেত্রে আরও কোনো সহযোগিতা দরকার হলে তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷”

সিন্ডেকেট বন্ধ করতে পারলে সংকটের আশঙ্কা নেই: নাজের হোসেন

সিন্ডিকেট বন্ধের আহ্বান

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য দিচ্ছে তাতে রমজানে আমদানি করা পণ্যের সংকট হওয়ার কথা নয়৷ তবে আমদানি পণ্যের সিন্ডিকেট আছে৷ কয়েকজন আমদানিকারক বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন৷ তাই তাদের এই সিন্ডিকেট বন্ধ করতে পারলে সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই৷ যখন ডলার সংকট বা এলসি খোলায় সংকট ছিল না তখনও তো তারা সংকট তৈরি করেছে৷ তাই এই সিন্ডিকেটকেই নজরে  রাখতে হবে৷''

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী রমজান মাসের জন্য সব পণ্য এক সঙ্গে না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রেতাদের৷ তিনি বলেছেন, "রমজানের প্রথম সপ্তাহে ক্রেতারা যেভাবে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েন, সেটা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে৷ দোকানে যখন ১০০ কেজি মাল থাকে, তখন যদি ১০ জন ক্রেতার প্রত্যেকে একসঙ্গে ১০০ কেজি করে কিনতে চায় তখন মনে হয় সংকট, যেটা আর্টিফিশিয়াল সংকট৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য