রোবটের সাহায্যে মাইন দূর করছে আফগান মেয়েরা
১৯ জুলাই ২০২১আফগান রোবোটিক্স টিমের মেয়েরা নতুন এক প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে৷ মানুষের জীবন বাঁচানোই সেই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ল্যান্ডমাইন ও অবিস্ফোরিত বোমার সন্ধান করতে এই মেয়েরা রোবট তৈরি করে৷ রিমোট কনট্রোলের মাধ্যমে মোবাইল রোবট সেই বিপদ দূর করতে পারে৷ তবে এই উদ্যোগ সফল করতে যথেষ্ট ব্যবস্থাপনা ও অর্থ নেই৷ আফগানিস্তান রোবোটিক্স টিমের ক্যাপ্টেন সোমাইয়ে ফারুকি বলেন, ‘‘ডিমাইনিং ও ভেন্টিলেটর রোবটের মতো আমরা যন্ত্রমানব তৈরি করে সমাজের সমস্যা সমাধান করতে চাই৷ সে কারণে আমরা সরকার ও আন্তর্জাতিক সমাজের সাহায্য চাইছি৷ বড় আকারে উৎপাদন করে আমাদের সমাজের কিছু সমস্যা সমাধান করতে চাইছি৷
করোনা মহামারির শুরুর দিকে আফগান রোবোটিক্স টিমের মেয়েরা একটি ভেন্টিলেটর তৈরি করে৷ এই মূহূর্তে তাদের মাইন-নাশক রোবট পরীক্ষার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ কিন্তু সেই রোবট কীভাবে কাজ করে এবং সেটির দায়িত্বই বা কী? আফগানিস্তান রোবোটিক্স টিমের সদস্য
আইদা হাইদারপুর বলেন, ‘‘একই সময়ে দুটি ডিভাইস কাজ করে৷ একটি হলো ড্রোন, অন্যটি মাইন ডিটেক্টর বা মাইনসুইপার ডিভাইস৷ ড্রোন সবার আগে আকাশে উড়ে সম্ভাব্য মাইন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে ও তথ্য সংগ্রহ করে৷ তারপর ডিমাইনিং ডিভাইস মাইন চিহ্নিত করে মানুষকে সেগুলি নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে৷''
এই উদ্যোগ সফল হলে রোবট যুদ্ধে ব্যবহৃত ল্যান্ডমাইন ও অবিস্ফোরিত বোমা ভরা দেশটিতে বিপদ এড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে৷ অন্য কোনো দেশে ল্যান্ডমাইনের কারণে হতাহতের সংখ্যা এত বেশি নয়৷
বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি এনজিও দেশটিকে মাইন-মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ কিন্তু সীমিত সুযোগের কারণে সাফল্য আসছে না৷ আফগান মেয়েদের তৈরি রোবট মাইন-মুক্ত করার কাজে বড় সহায়তা করতে পারে৷ ডিমাইনার হিসেবে আলি আক বলেন, ‘‘এটা ভালো খবর৷ এই সব রোবটের প্রোগ্রাম ডিমাইনিং সংগঠনগুলির প্রয়োজন অনুযায়ী হওয়া দরকার, কারণ মূল সাইটে হাতেনাতে রোবটের পরীক্ষা হওয়া উচিত৷ ফল ভালো হলে সেটা হবে বড় সাহায্য৷ আমরা উচ্চ মূল্যে বিদেশ থেকে ডিটেক্টর কিনি৷ দেশের মধ্যে উৎপাদন করতে পারলে খুব ভালো হবে৷''
ডিমাইনিং অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ৷ বিশেষ করে যে দেশে যুদ্ধ এখনো চলছে এবং চারিদিকে অবিস্ফোরিত বোমা ছড়িয়ে রয়েছে, সেখানে ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি৷
গত বছর নভেম্বর মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু ২০১৯ সালেই ১,৫৬৮ জনেরও বেশি আফগান ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন৷ আহতের সংখ্যা আরও বেশি৷ আহমাদ মুখতার করিমি নিজে মাইন বিস্ফোরণের শিকার হয়েছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ফুটবল খেলার জায়গায় একটি মাইন পোঁতা ছিল৷ সেটি বিস্ফোরণের ফলে আমার ডান পা কেটে বাদ দিতে হয়েছে৷ রোবোটিক্স টিমের বোনেদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, ডিমাইনিং রোবট কর্মসূচির কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে ডিমাইনিং প্রতিষ্ঠানগুলির হাতে সেগুলি তুলে দেওয়া হোক৷''
বিশ্বের শীর্ষ নয়টি দেশের তালিকায় আফগানিস্তানে ল্যান্ডমাইন ও বিস্ফোরকের বিপদ সবচেয়ে বেশি৷ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অবিস্ফোরিত বোমা ও মাইন শনাক্ত করতে হয় এবং সাবধানতা অবলম্বন করে সেগুলি সরিয়ে ফেলতে অথবা ধ্বংস করতে হয়৷ ইন অ্যাকশন সমন্বয়কারী আব্দুল জলিল সাদগেহ বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যবশত অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ হওয়ায় কিছু ভুল হয়৷ ভুলের কারণে আমাদের সহকর্মীরা মাইনের শিকার হয়েছেন৷ দেশের পশ্চিমে চারটি প্রদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ১২১ জন ডিমাইনিং কর্মী মাইনের শিকার হয়েছেন৷ ৩০ জন নিহত ও ৯১ জন আহত হয়েছেন৷
এই মেয়েরা তাদের রোবট কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে৷ যতটা সম্ভব এলাকা থেকে আফগানদের অদৃশ্য শত্রু দূর করা এবং ডিমাইনিং কর্মসূচির আওতায় মানুষের মৃত্যুর হার কমানোর চেষ্টা তো চলছেই৷
মহম্মদ রেজা শিরমোহাম্মাদি/এসবি