জার্মানিতে অভিবাসন
১৪ অক্টোবর ২০১২মাত্র ৭৮ জন, এই ছিলো জার্মানিতে দুই বছর আগে সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা৷ আর সেপ্টেম্বর মাসেই এই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৪৩৫ জনে৷ জার্মানিতে রোমা ও সিন্টিদের আগমন রকেট গতিতে বাড়ছে৷ যে ভিসা পদ্ধতি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়ার জন্য সেটা নিয়ে এখন নতুন করে ভাবছেন জার্মানির রাজনীতিকরা৷ ২০০৯ সাল থেকে এই দুটি দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করছে৷ আর এই সুযোগে দিন দিন বাড়ছে সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়া থেকে আসা রোমা ও সিন্টিদের সংখ্যা৷ এই ব্যাপারে জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিভাগের প্রেসিডেন্ট মানফ্রেড শ্মিট বলেন, আমাদের মতে, সার্বিয়া ও মেসিডোনিয়াকে যে ভিসামুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে তার অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং এটি এই ভিসামুক্ত নীতির পরিপন্থী৷ এই নিয়মের একটি ফলাফল তো দেখা যাবেই৷
বলকান অঞ্চলের দুই দেশ মেসিডোনিয়া ও সার্বিয়ার আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়৷ সেই দেশের রোমা এবং সিন্টিদের অবস্থা আরও খারাপ৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, সার্বিয়ার শতকরা ৬০ ভাগ রোমা এবং সিন্টিরা দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে৷ তারা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভোগে৷ বিশেষ করে শীতের সময় তাদের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায় কারণ বাড়িগুলোতে ঠান্ডা ঠেকানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে না৷ এই অবস্থাতে তাদের অনেকেই জার্মানিতে পাড়ি জমায় এবং এখানে কিছুদিন কাটিয়ে যায়৷ এতে তাদের আর্থিক লাভও হয়ে থাকে৷ এটি আবার জার্মানির জন্য আর্থিক ক্ষতি, যেমনটি জানালেন মানফ্রেড শ্মিট৷
আমরা দেখছি পরিবার পরিজন নিয়েই অনেকে চলে আসছে৷ আর তারা যে পরিমাণ টাকা এখানে আয় করে সেটি তাদের একমাসের আয়ের তিনগুণ৷ সমস্যা হলো তারা কয়দিনের জন্য জার্মানিতে থাকে সেটি৷ কারণ তারা এখানে আট সপ্তাহ কিংবা তিন মাসের মতো থাকে৷ এবং সেই টাকা দিয়েই সার্বিয়া কিংবা মেসিডোনিয়াতে বছরের বাকি সময় পার করে দেয়৷
জার্মানির সাংবিধানিক আদালতের এক রায়ের কারণে বর্তমানে এই সুবিধা ভোগ করছে রোমা এবং সিন্টিরা৷ আদালতের রায়ের কারণে তারা বাকিদের মতো সমান সামাজিক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হান্স পেটার ফ্রিডরিশও এই নিয়মের বিরোধিতা করছেন৷ তিনি মত ব্যক্ত করেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত এই ভিসামুক্ত ব্যবস্থা স্থগিত করা৷ কারণ এর ফলে এই সুযোগের অপব্যবহার বাড়ছে৷ তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছে জার্মানির হেসে এবং বাভারিয়া রাজ্যও৷
তবে জার্মান সরকারের এই মনোভাবের সমালোচনাও রয়েছে৷ যেমন জার্মানিতে আশ্রয় নিতে আসা অভিবাসীদের জন্য কাজ করেন মারি পেলৎসার৷ তিনি বলেন, জার্মান সরকারের এই ধরণের একগুঁয়েমি মনোভাব পুরোপুরি ভুল৷ এটি জার্মান সমাজে বর্ণবিদ্বেষের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ রোমা এবং সিন্টিরা তাদের দেশে শীতকালে ঠিকমত বেঁচে থাকতে পারে না বলেই জার্মানিতে আসে৷ মারি পেলৎসারের মতে, আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সেটি খুব বেশি হয়ে যায় নি৷ আর এদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার হারও প্রায় শূন্য৷
প্রতিবেদন: স্টেফানি হ্যোপনার / আরআই
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই