1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমারের সময় ক্ষেপণের কৌশল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার যে চুক্তি হয়েছে তাতে এই সংকটের কোনো সমাধান দেখছেন না বিশ্লেষকরা৷ এটাকে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/2oHdu
রোহিঙ্গা শিশু
ছবি: Reuters/A. Abidi

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওই চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর ও এ বছরের ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার৷ দুই মাসের মধ্যে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা৷ কিন্তু কতদিনের মধ্যে ফেরত নেয়া হবে তা চুক্তিতে বলা নেই৷ মিয়ানমারের ফেরত নেয়ার পর প্রথমে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় কেন্ত্রে রাখা হবে৷ আর সম্মতিপত্রে সই করা হয়েছে ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের চুক্তির আলোকে৷

মিয়ানমার ঐ সম্মতিপত্র মেনে নিলে বাংলাদেশ থেকে তারা সাত লাখের মত রোহিঙ্গা ফেরত নেবে৷ কিন্তু বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে ১০ লাখেরও বেশি৷ ২০১৬ সালের আগে আসা তিন লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার কোনো কথা চুক্তিতে নেই৷ এছাড়া দিনে কত জন ফেরত নেয়া হবে আর কতদিনের মধ্যে ফেরত নেয়া হবে তার কোনো সময়সীমার উল্লেখ নেই এতে৷ এর আগে ১৯৯২ সালে দু'দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয় তার অধীনে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে মাত্র দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত নিয়েছে মিয়ানমার৷ তবে ১৯৭৮ সালে যে চুক্তি হয় তার অধীনে ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়েছিল তারা৷

১৯৯২ সালের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক মর্যাদা দেয়ার বিষয়টির উল্লেখ ছিল না৷ রোহিঙ্গাদের অধিকারসহ মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের উল্লেখ ছিল না এতে৷ 

এবারের চুক্তিতে ফেরত নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী পূনর্বাসন ক্যাম্পে রাখার কথা বলা হয়েছে৷ এরপর তাদের ফেলে আসা ঘড়বাড়ি বা অন্যকোথাও পুনর্বাসন করা হবে৷ মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী, পুড়িয়ে দেয়া ঘরবাড়ি সরকারি সম্পদ৷

২৩ নভেম্বর মিয়ানমার-বাংলাদেশ চুক্তির পর এর নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ তারা বলছে, যেহেতু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা হয় তাই তাদের এই অবস্থায় ফেরত পাঠানো ‘অচিন্তনীয়'৷ যেসব রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারে রয়ে গেছে তাদের অবস্থা বন্দি শিবিরে থাকার মত৷

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চুক্তি প্রসঙ্গে বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিচার্স ইউনিট(রামরু)-এর প্রধান অধ্যাপক সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই চুক্তি কোনো কার্যকর ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না৷ এটা মিয়ানমারের সময় ক্ষেপনের একটি কৌশল মাত্র৷ কারণ এখানে ফেরত নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়নি৷ বিশষ করে ভেরিফিকেশনের জন্য৷ রোহিঙ্গাদের ফাইনাল ভেরিফিকেশন কিন্তু মিয়ামারের হাতেই৷ এটা একপেশে৷''

‘২০১২ সালে যখন মিয়ানমারে ছিলাম তখন দেখেছি আগে ফেরত নেয়া ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে’

অধ্যাপক আবরার আরো বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার সঙ্গে তাদের নাগরিত্ব, নিরাপত্তা এবং সম্মানের বিষয়টি জড়িত৷ কিন্তু চুক্তিতে এই বিষয়গুলোর উল্লেখ নেই৷ বাংলাদেশ কেন তার আগের অবস্থান থেকে সরে এল তা আমার কাছে তা স্পষ্ট নয়৷''

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মেজর জেনারেল(অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ামারের ইমিগ্রেশন, পুলিশ ও সীমান্ত বাহিনী জড়িত৷ এই তিনটিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন একজন জেনারেল৷ মিয়ানমারে ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি সামরিক বাহিনীর হাতে৷ কিন্তু চুক্তি সইয়ের আগে বা সইয়ের সময় মিয়ানমার সেনা প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশ পক্ষের কোনো আলোচনা হয়নি৷ আর স্মারক সইয়ের সময় মিয়ানমারের সেনা প্রধান ছিলেন চীন সফরে৷ এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ সেনা বাহিনী এই চুক্তিকে আদৌ আমলে নেবে কিনা সেটাও ভাববার বিষয়৷''

তাঁর প্রশ্ন, ‘‘২০১৬ সালের অক্টোবরের পর এবং ২৫ আগস্টের পর পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার কথা বলছে তারা৷ তাহলে আগে থেকে যারা আছে, তাদের কি হবে? রোহিঙ্গাদের নিয়ে তারা কোথায় রাখবে?''

‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার সঙ্গে তাদের নাগরিত্ব, নিরাপত্তা এবং সম্মানের বিষয়টি জড়িত৷ কিন্তু চুক্তিতে এই বিষয়গুলো নেই’

তিনি জানান, ২০১২ সালে যখন মিয়ানমারে গিয়েছিলেন তখন দেখেছেন আগে ফেরত নেয়া ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে  বন্দি শিবিরে রাখা হয়েছে৷ এখনো তারা সেখানেই আছেন৷ মিয়ানমারকে বিশ্বাস করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

শহীদুল হক বলেন, ‘‘আমার মনে হচ্ছে মিয়ারমার এখন আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কৌশল হিসেবে এই চুক্তির আশ্রয় নিয়েছে৷ তারা আসলে এর মধ্য দিয়ে সময় পার করতে চায়৷ এরইমধ্যে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে৷ যা মিয়ানমারের পক্ষেই যাবে৷''

অধ্যাপক সি আর আবরারও একই কথা বলেন৷ তিনি বলেছেন,‘‘মিয়ামনার আসলে সমস্যাটাকে দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে চায়৷ তারা চায় এই ইস্যুটি নিয়ে বাংলাদেশ যেন আন্তর্জাতিক ফোরামে আর কথা না বলে৷ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধনের কোনো ইচ্ছা মিয়ানমারের আছে বলে আমার মনে হয় না৷''

২৫শে আগস্ট থেকে সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ছয় লাখ ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ উগ্রপন্থিরা রোহিঙ্গা পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ফলে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় বলে অভিযোগ রয়েছে৷

এ প্রসঙ্গে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷