1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনেও গণধর্ষণ

গৌতম হোড়
২৭ এপ্রিল ২০২০

লকডাউন, ঘরবন্দি পুরো দেশ, করোনার আতঙ্কের মধ্যেও চলছে গণধর্ষণ।

https://p.dw.com/p/3bTD8
ছবি: Reuters/A. Fadnavis

করোনা থামিয়ে দিচ্ছে মানুষের জীবন, থামিয়ে দিচ্ছে কল-কারখানার চাকা, দেশের অর্থনীতি, ১৩০ কোটি লোকের স্বাভাবিক জীবনযাপন। শুধু থামাতে পারছে না ধর্ষকদের। লকডাউনের বাজারে গোটা দেশ যখন ঘরবন্দি, তখনও ধর্ষণ হচ্ছে, এমনকী গণধর্ষণও হচ্ছে। যার শেষতম উদাহরণ রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুর জেলার ঘটনা। সেটাও বলা যায়, কার্যত প্রশাসনের চোখের সামনে।

কী হয়েছিল সওয়াই মাধোপুরে তা একবার দেখে নেওয়া যাক। এক মহিলা লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার পর তিনি জয়পুরে নিজের ভাড়াবাড়িতে একা ফেরার জন্য হাঁটতে শুরু করেন। কিন্তু রাস্তা হারিয়ে ফেলে একটা গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হন। তিনি পুলিশ-প্রশাসনকে জানালে তাঁরা গ্রামবাসীদের বলেন, মহিলার থাকার জায়গা ঠিক করে দিতে। গ্রামবাসীদের ভয় ছিল, মহিলা করোনায় আক্রান্ত। তাঁরা তাঁকে একটি ফাঁকা স্কুলবাড়িতে রাতে থাকতে দেন। প্রশাসনের আপত্তিও তারা মানেনি। তারপর রাতে তিনজন বছর ২৭ এর যুবক  মহিলাকে গণধর্ষণ করে। মহিলা থানায় অভিযোগ করেন। তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে, করোনা পরীক্ষাও। তাঁকে গ্রামে রাখা হয়েছে। তিনজন ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভারতে লকডাউন ঘোষণার দিন কয়েক আগেই ফাঁসি হয়েছে নির্ভয়ার চার ধর্ষকের। তারপর প্রথমে ২১ দিনের লকডাউন, সেটা শেষ হওয়ার পর লকডাউনের সময়সীমা আরও ১৯ দিন বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ, প্রথম ২১ দিনের লকডাউনের পরেও করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এখনও একই অবস্থা। সওয়াই মাধোপুরেই আটজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখান থেকে জয়পুরের দূরত্ব ১৭৭ কিলোমিটার। সেখানে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, চারজন মারা গিয়েছেন।

এই তথ্য দেওয়ার উদ্দেশ্য একটাই, ওই যুবকদের করোনায় মারা যাওয়ার ভয়ও ঢেকে গিয়েছে বিকৃত যৌন তাড়নায়। যে মহিলা করোনায় আক্রান্ত ভেবে গ্রামের লোকেরা তাঁকে স্কুলে একা রেখে দেয়, নির্ভয়ে তাঁকেই গণধর্ষণ করে তিন যুবক। ভারতীয় সংসদে যখন আইন বদল করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে ফাঁসির বিধান দেওয়া হয়েছিল, তখন সাংসদদের দাবি ছিল, এ বার দেশে ধর্ষণের পরিমাণ কমবে। এখন লকডাউনের বাজারেও গণধর্ষণ ও বেপরোয়া ধর্ষণের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, তাঁরা হয় অবাস্তব আশাবাদী ছিলেন বা সেই সময় লোকের মনের ক্ষোভের কথা আঁচ করে শুধু আইন কড়া করে নিজেদের দায় সেরেছিলেন।

সওয়াই মাধোপুরের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। লকডাউনের মধ্যে উত্তর প্রদেশে খেতে ফসল তুলতে যাওয়া পরিবারের লোকেদের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে ধর্ষিতা হয়েছেন একজন। মধ্যপ্রদেশে ছয় বছরের একটি শিশুকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। তারপর একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে ধর্ষক। তার বিকৃত লালসার শিকার হয়ে শিশুটিকে বেঁচে থাকতে হবে। দিল্লির দিকে একবার চোখ ফেরানো যাক। ২২ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৩টি। দিল্লিতে লকডাউন নিয়ে খুবই কড়াকড়ি চলছে। বাড়ি থেকে পাস ছাড়া বেরনো যাচ্ছে না। তার মধ্যে ৩৩টা ধর্ষণ? আর শ্লীলতাহানি সহ মেয়েদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ হয়েছে ২৩টি। পুরোপুরি ঘরবন্দি দিল্লির যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে আর বলার কিছু থাকতে পারে না।

Goutam Hore
গৌতম হোড়, ডয়তে ভেলেছবি: privat

ভারতে মেয়েদের সুরক্ষার অভাব নিয়ে সংসদের প্রায় প্রতিটি অধিবেশনেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। তথ্যের বন্যা বয়ে যায়। সমালোচনার তীাব্রতা এবং তার মধ্যে 'শেম শেম' ধ্বনিতে মুখরিত হয় লোকসভা ও রাজ্যসভা কক্ষ।  কিন্তু সেখানেই রাজনৈতিক প্রয়াসের সমাপ্তি। তারপর? লকডাউনের মধ্যে হেঁটে ফিরতে গিয়ে পথ হারিয়ে গণধর্ষিতা হতে হয়, বাড়ির অঙিনায় খেলতে থাকা ছয় বছরের ফুলের মতো শিশুকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়, দিল্লিতে ৩৩ জন ধর্ষিতা হন। তাঁরা সবাই নিঃসন্দেহে গরিব ঘরের মানুষ বা একলা নারী। না হলে, এখন কী করে তাঁদের জীবনে নেমে আসে এরকম কালো মেঘ?

এতগুলি ঘটনা একটা কথাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, করোনার ভয় থাক বা না থাক, লকডাউন চলুক বা বন্ধ হোক, ধর্ষকদের যতই ফাঁসি হোক, ধর্ষণকারীদের কোনও ভয় নেই, চিন্তা নেই, চেতনা নেই। আর নারীদের কোনও সুরক্ষা নেই।