ব্রেক্সিট নিয়ে জটিলতা
১৬ নভেম্বর ২০১৮ঘরে বাইরে কোণঠাসা হয়েও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে৷ ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়ার প্রতি সমর্থন আদায় করতে তিনি ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর ইইউ-র সঙ্গে যে বোঝাপড়া হাসিল করা সম্ভব হয়েছে, তা ব্রিটেনের স্বার্থরক্ষা করবে বলে দাবি করেন মে৷ এর ফলে চাকরি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি প্রক্রিয়াসহ অনেক বিষয়ে অনিশ্চয়তা দূর করা সম্ভব হয়েছে৷
ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়া অনুমোদন করেও ব্রিটেনের মন্ত্রিসভায় আরো দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন৷ সংসদে ক্ষমতাসীন টোরি দলের একাংশই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার তোড়জোর শুরু করেছে৷ ৩১৫ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৫ শতাংশ চাইলেই এমন প্রস্তাব আনা হতে পারে৷ সেই প্রস্তাব পাস হলে প্রধানমন্ত্রী পদ খোয়াবেন টেরেসা মে৷ তখন ব্রেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তা নতুন মাত্রা পেতে পারে৷ অনাস্থা প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত সম্ভব না হলেও টোরি দলের ৮৪ জন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি সংসদ সদস্য ও জোটসঙ্গী উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি পার্টির ১০ জন সদস্য ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়ার বিরোধিতা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন৷ টোরি ও অন্যান্য দলের ইউরোপপন্থি সংসদ সদস্যদের একটা বড় অংশ ব্রেক্সিট খসড়া চুক্তি নিয়ে গণভোটের দাবি জানিয়েছেন৷
এই অবস্থায় ব্রেক্সিট খসড়া চুক্তির ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ নানা রকম সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা শোনা যাচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টেরেসা মে টিকে গেলে এবং কোনোরকমে তিনি সংসদের সম্মতি আদায় করতে পারলে সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে পারে৷ কিন্তু তাঁকে পদত্যাগ করতে হলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে৷ সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়া পাশ না হলে নতুন গণভোট অথবা আগাম নির্বাচন ডাকা হলেও একই পরিস্থিতি দেখা যাবে৷ ইইউ ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী বা নতুন সরকারের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করবে, সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে৷ সে ক্ষেত্রে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের আশঙ্কা বেড়ে যাবে৷
ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়ায় ইইউ সার্বিকভাবে তার স্বার্থরক্ষা করতে সফল হলেও ব্রিটেনের জলসীমায় মাছ ধরার অধিকার নিয়ে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ ব্রেক্সিটের পর তারা সেই অধিকার হারাতে চায় না৷
এমন প্রেক্ষাপটে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের জন্য দুই পক্ষই প্রস্তুত হচ্ছে৷ ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ ব্রিটেনে যাতায়াতের পথে আবার নিয়ন্ত্রণ চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রস্তুত করছে৷ একই সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষর করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী ২৫শে নভেম্বর বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন ডেকেছে৷ তবে তা সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চ থেকে ব্রিটেন ও ইউরোপের মধ্যে পরিবহণ ও বাণিজ্যসহ একাধিক ক্ষেত্রে চরম অরাজকতার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)