লন্ডন অলিম্পিক
২ জুলাই ২০১২মাফিজুর রহমান৷ সেই ২০০৫ সালে, বয়স যখন তাঁর মাত্রই বারো বছর, তখন থেকেই একের পর এক প্রতিযোগিতা জিতে চলেছেন তিনি৷ ৫০, ১০০, ২০০, ৪০০ আর ১৫০০ মিটারের সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপের সবকটাতেই মাফিজুর রহমান প্রথম স্থানে৷ জাতীয় পর্যায়ে সকলেই জানে মাফিজুরের হাতেই পদক উঠবে৷ যার সূত্রপাত ২০০৭ সাল থেকে৷
‘কিন্তু সেই পদক বা মেডেলের দাম বড়জোর পঞ্চাশ টাকা৷' সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন ১৯ বছরের মাফিজুর৷ বলেছেন, ‘‘আমার বন্ধুরা সকলেই কেউ ক্রিকেট, কেউ ফুটবল খেলে বড়লোক হয়ে গেছে৷ কারণ তাতে অনেক টাকা৷ এমনকি গল্ফ খেলেও আজকাল বিস্তর অর্থ মেলে৷ এই তো সম্প্রতি বাংলাদেশি গল্ফার সিদ্দিকুর রহমান এশিয়ান ট্যুরস'এ রোজগার করেছেন ১৫০,০০০ মার্কিন ডলার৷''
সাঁতারে কিন্তু কোনো পয়সা নেই৷ কেউ ফিরেও তাকায় না তার দিকে৷ নেই পরিকাঠামো, প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ভালো সুযোগ৷ সুতরাং প্রশাসনিক স্তরে এই স্পোর্টস-এর দিকে তাচ্ছিল্য আর অবহেলা রয়েছে৷ সেসব সহ্য করেও সাঁতারকে ছাড়েন নি কোনোদিন মাফিজুর৷
ছাড়েন নি বলেই না আজ তিনি লন্ডন যাত্রী৷ ঘটনার সূত্রপাত গত বছরে সাংহাই ওয়র্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে৷ যেখানে মাফিজুরের সময় ছিল ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ২৪.৮২ সেকেন্ড৷ সোনাজয়ী সিজার সিয়েলোর সময় ২১.৫২ সেকেন্ডের থেকে অনেকটা দূরে হলেও সেই সময়ের মাপটাই অলিম্পিকের জন্য মাফিজুরকে ডাক দেয়৷ সে ডাকের কথা প্রথম তাঁকে এক কোচ জানান৷ মাফিজুরের বিশ্বাস হয়নি৷ তিনি সটান চলে যান বাংলাদেশ সুইমিং অ্যাসোসিয়েসনের কর্তাদের কাছে৷ তাঁরা খবরটা সুনিশ্চিত করার পর মাফিজুরের বিশ্বাস হয় সত্যিই লন্ডন অলিম্পিকে সাঁতার কাটবেন তিনি৷ স্বপ্নটা বাস্তবে পা দিয়ে দিয়েছে৷
ডাকনাম সাগর মাফিজুরের৷ যার ডাকনাম সাগর, জলের সঙ্গে তার বন্ধুতা হবে এ তো স্বাভাবিক ব্যাপার৷ কিন্তু সেই বন্ধুত্বের মর্যাদা এতটা সম্মান দেবে মাফিজুরকে এনে, এটা সত্যিই ভাবেন নি উনিশের এই তরুণ৷ সেইসঙ্গে সাগর এটাও প্রমাণ করেছেন, সাঁতার ফেলনা নয়৷
বাংলাদেশের খেলাধুলার কর্তাব্যক্তিরা হয়তো বা এরপরে এই সাঁতারকে আরেকটু মনোযোগ দিয়ে দেখবেন৷ ভবিয্যতের সাঁতারুদের জন্য এই প্রাথমিক কাজটুকু তো করে যেতে পারলেন মাফিজুর রহমান সাগর!
এসইউবি / ডিজি (রয়টার্স)