লাদাখে ভারত-চীন সেনা মুখোমুখি, উত্তেজনা
২৬ মে ২০২০মে মাসের প্রথমে একবার দুই দেশের সেনার মধ্যে হাতাহাতি হয়ে গিয়েছে। ভারত ও চীনের আড়াইশ সেনা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলো। তারপর কম্যান্ডাররা আলোচনা করে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু উত্তেজনা কমেনি, বরং বেড়েছে। সম্প্রতি দুই দেশই পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিশেষ করে প্যাংগং ও গালয়ান উপত্যকায় সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে। চীন বাঙ্কার তৈরি করেছে। অস্থায়ী পরিকাঠামোও তৈরি করেছে। সেখানে তারা দুই থেকে আড়াই হাজার সেনা বাড়িয়ে নিয়েছে। ভারতও একই রকমভাবে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে। দুই দেশের সেনা একেবারে মুখোমুখি। উত্তেজনা রয়েছে। ২০১৭ সালে ডোকলামের পরেও এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যেটা এ বার পূর্ব লাদাখে হয়েছে।
সূত্র জানাচ্ছে, ভারতও সেনা সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়েছে। চীনের সেনার তুলনায় ভারতের সেনার সংখ্যা বেশি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে উদ্বেগের বিষয় হলো, গালয়ান উপত্যকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চীনা সেনার উপস্থিতি ও সংখ্যা বাড়ানো। অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''প্যাংগং লেকের দুই তৃতীয়াংশ চীনের অধিকারে, এক তৃতীয়াংশ ভারতের। চীন তাদের অধিকারের এলাকা বাড়াতে চায়। তার পাশে যে পাহাড় আছে, সেগুলির নামকরণ হয় ফিঙ্গার দিয়ে। ফিঙ্গার ওয়ান, টু, থ্রি। আমদের দাবি, ফিঙ্গার পাঁচ পর্যন্ত আমাদের। আবার চীন বলে ফিঙ্গার নয় থেকে তিন পর্যন্ত তাঁদের। এ নিয়ে বিরোধ আছে। যা খবর বেরচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, চীন ওখানে এক ব্যাটেলিয়ান সেনা অতিরিক্ত নিয়ে গিয়েছে। কামান নিয়েছে। আমাদেরও ফিল্ড গান, মাউন্টেড গান নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা চাই না উত্তেজনা বাড়ুক। বেশি উত্তেজনা হলে ফ্ল্যাগ মিটিং হচ্ছে।'' অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল ডিএস হুডার মতে পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক নয়। বরং চিন্তাজনক।
কোনও দেশ যখন সীমান্তে বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এ ভাবে শক্তি দেখায়, আগ্রাসনের চেষ্টা করে, তখন তার পিছনে কোনও না কোনও কারণ থাকে। করোনার মধ্যে চীনের এ হেন সিদ্ধান্তের পিছনেও কোনও কারণ থাকবে। লেফটানান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ''করোনা নিয়ে অ্যামেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতও চীনকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। তাই চীনা সেনাবাহিনীর লাদাখে এই ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার একটা কারণ এটা হতে পারে।''
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''অর্থনৈতিক কারণে এটা হচ্ছে না। সব দেশ একই রকমভাবে চীনা জিনিসের ব্যবহার কমাবার চেষ্টা করছে। ভিয়েতনাম করেছে, কম্বোডিয়া করেছে। জাপানও করেছে। চীন তাতে রাগতে পারে। প্রত্যাঘাতও করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেনা পাঠিয়ে রক্তচক্ষু দেখানোর চেষ্টা করছে না। আমার ধারণা এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে যা মনে হয়েছে, চীন অনেক বেশি চিন্তিত আমাদের কাশ্মীর নীতি নিয়ে। ভারত সম্প্রতি জাতি সংঘে একটা ম্যাপ দিয়েছে, যেখানে আকসাই চীন সহ গোটা কাশ্মীরকে ভারতের এলাকা বলে দাবি করা হয়েছে। চীনের বরাবরের দাবি আকসাই চীন তাদের। এখনও এলাকাটা তাদের অধিকারে। এ ছাড়া তাদের মনে হতে পারে, ভারত হয়তো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই তারা এ ভাবে চাপ দিচ্ছে।''
উৎপল ভট্টাচার্যের দাবি, ''এই চাপ দেওয়ার নীতি চলতে থাকবে। তবে চীন ভালো করেই জানে ১৯৬২-র ভারত এবং ২০২০-র ভারতের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। ওরা জানে আমাদের শক্তি কতটা। ওরা ব্লো হট, ব্লো কোল্ড নীতি নিয়ে চলছে। আমরাও তাই করছি।''
এর মধ্যে নেপালের সঙ্গেও ভারতের মতবিরোধ হয়েছে। ভারত আসলে মানস সরোবরে যাওয়ার একটা রাস্তা বানাচ্ছে উত্তরাখণ্ডে। তা নিয়ে আপত্তি নেপালের। তাতে ভারতের সেনা প্রধান বলেছেন, অন্য একটা দেশের নির্দেশে নেপাল এই কাজ করেছে। তাতে নেপালও কড়া বিবৃতি দিয়েছে। আসলে ভারত-নেপাল সীমান্তে কালী নদী এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। ভারত বলছে এক নম্বর কালী নদী থেকে আমাদের এলাকা। নেপাল বলে, তিন নম্বর কালী নদী থেকে ভারতের এলাকা। উৎপলবাবুর বক্তব্য, চীনও এখানে নেপালকে উসকাচ্ছে। তাই তারা রাস্তা বানানো নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে।
পাকিস্তানের সঙ্গেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলি চলছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান জঙ্গিদের ঢোকাতে চাইছে বলে গোলা-গুলি চালাচ্ছে। মোট কথা, করোনাকালেও ভারতের সীমান্ত বেশ অস্থির। তবে সব চেয়ে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে লাদাখে চীনের সঙ্গে।