লিবিয়ায় অপহৃত হয়েছেন আরো এক বাংলাদেশি
১০ মার্চ ২০১৫বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনোয়ার হোসেনের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শুক্রবার হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে একই ঘটনায় অপহৃত হন আনোয়ার হোসেন৷ কিন্তু নামের মিল থাকায় প্রথমে তাঁকে সুদানি নাগরিক বলে ভুল করেছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ৷ পরবর্তীতে তাঁকে বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত করা হয়৷
সোমবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার লিবিয়ার সিরতে শহরের দক্ষিণে আল-ঘানি তেলক্ষেত্রে হামলা চালিয়ে ১১ জন প্রহরীকে হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা৷ এরপর স্থানীয় সরকারি বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে তাদের হটিয়ে দেয়৷ তখন যে নয়জন বিদেশি নাগরিককে আইএস অপহরণ এবং জিম্মি করে তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক হেলাল উদ্দিনও রয়েছেন৷ আর মঙ্গলবার আনোয়ার হোসেনের অপহরণের খবর জানা গেল৷
বিবৃতিতে বলা হয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশি দূতাবাস অপহৃত বাংলাদেশিদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে৷ তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি কী অবস্থায় আছেন সে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছে দূতাবাস৷ লিবিয়ার জাতীয় তেল কোম্পানি এবং ভিওএস নামে যে তেলক্ষেত্র থেকে অপহরণ করা হয়েছে তার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ত্রিপোলি দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে৷
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই৷ এখনো বাংলাদেশি নাগরিকদের অবস্থান জানা যায়নি৷ একজন কর্মকর্তা জানান, ‘‘অপহৃত দুই বাংলাদেশিকে উদ্ধারে বাংলাদেশের পক্ষে আলাদা কোনো উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ নেই৷ লিবিয়া সরকার এবং অন্যান্য দেশ যে উদ্যোগ নেবে সেই উদ্যোগের সঙ্গেই কাজ করবে বাংলাদেশ৷''
তবে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘দুই বাংলাদেশি নাগরিককে উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ঘটনার পরপরই পার্শ্ববর্তী আরেকটি তেলক্ষেত্রে কর্মরত আরো ২১ জন বাংলাদেশিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷''
অপহৃত একজন হেলাল উদ্দিনের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামে৷ মাদারগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কামরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, অপহরণের খবর পাওয়ার পর সোমবারই হেলাল উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে৷ প্রশাসন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ তাদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সরকারকে জানানো হয়েছে৷
জানা গেছে, দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত আমাজ উদ্দীনের পুত্র হেলাল উদ্দীন ৬ বছর আগে লিবিয়া যান৷ আটমাস আগে তিনি দুই মাসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন৷ গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে৷
হেলালের স্ত্রী আলেয়া বেগম ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে জানান, অপহরণের খবরে তাঁদের পুরো পরিবার শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে৷ আত্মীয়-স্বজন, এলাকা এবং প্রশাসনের লোকজন ছুটে আসছেন৷ কিন্তু কেউই তাঁর স্বামীকে উদ্ধারের আশ্বাস দিতে পারছেন না৷ কেউ জানাতেও পারছেন না যে তাঁর স্বামী কোথায় কী অবস্থায় আছেন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁর স্বামীকে উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান৷
হেলাল উদ্দিনের মেয়ে হেলেনা আক্তার ডয়চে ভেলেকে জানান, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন সোমবার বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছেন৷ পরিবারের বিস্তারিত তথ্যও নিয়েছেন৷ তাঁরা বলেছেন এই তথ্য তাঁরা ঢাকায় পাঠাবেন৷ কিন্তু তাঁরা তাঁর বাবাকে উদ্ধারের কোনো আশ্বাস বা তিনি কোথায় কীভাবে আছেন তা জানাতে পারেননি৷