কবরখানায় আর জায়গা নেই
৫ নভেম্বর ২০১৫ছোট ছোট রবারের বোটে করে সঙ্কীর্ণ মিউতিলিনি প্রণালী পার হয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে আসার প্রচেষ্টায় গত এক মাসে যে ৮০ জন উদ্বাস্তু প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা কিছু কম ছিল না৷ গতকালও গ্রিক উপকূলরক্ষীরা যে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছে, তার মধ্যে ছিল একজন মহিলা ও দু'টি শিশুর লাশ৷
ওদিকে সপ্তাহান্তেই ঘোষণা করা হয় যে, দ্বীপের কবরখানায় আর জায়গা নেই, কাজেই কর্তৃপক্ষ একটি রেফ্রিজারেটেড কনটেনারে আরো ৫০টি লাশ রাখছেন৷ গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস আজ বৃহস্পতিবার লেসবসে যাচ্ছেন৷ গতকালই তিনি মন্তব্য করেন যে, ইউরোপীয় নেতৃবর্গ যে এই ধরনের নৌকাডুবি ও তার সঙ্গে জড়িত প্রাণহানি বন্ধ করতে পারেননি, সেজন্য তিনি ‘‘লজ্জিত''৷
ইউরোপ অভিমুখে উদ্বাস্তুর স্রোত অব্যাহত৷ উদ্বাস্তুরা আসছেন তথাকথিত বলকান রুট ধরে৷ অপরদিকে উত্তর আফ্রিকা থেকে বোটে করে আসা বন্ধ হয়ে যায়নি৷ একটি নতুন রুট খুলেছে রাশিয়া হয়ে নরওয়ে অভিমুখে৷ হালে নারী ও শিশুদের আগমন লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ওদিকে শীত এসে পড়ল৷ তাছাড়া এই উদ্বাস্তুদের দেশান্তরী হবার প্রক্রিয়ায় বহু শিশু কোনোরকম নাগরিকত্ব ছাড়াই জন্মাচ্ছে – অথবা একটি নাগরিকত্ব হারাচ্ছে, অথচ তাদের অন্য কোনো নাগরিকত্ব পাবার সম্ভাবনা নেই৷ কাজেই জাতিসংঘের উদ্বাস্তু ত্রাণ সংস্থা ইউএনএইচসিআর টুইট করেছে যে, সারা বিশ্বে ‘‘প্রতি দশ মিনিটে একটি করে শিশু বিনা নাগরিকত্বে জন্মগ্রহণ করছে৷''
ইইউ-এর ‘রিলোকেশন প্ল্যান'
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা তাঁদের বহুঘোষিত ‘পুনর্বাসন পরিকল্পনা' যে আদৌ শুরু হতে পেরেছে, তাই নিয়েই খুশি, বিশেষ করে বুধবার, যখন প্রথম ৩০ জন উদ্বাস্তুকে বিমানযোগে গ্রিস থেকে লুক্সেমবুর্গ পাঠানো হয়৷ সেপ্টেম্বরে ইইউ দেশগুলি গ্রিস ও ইটালি থেকে এক লাখ ষাট হাজার উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নেয়৷ সে যাবৎ ইটালি থেকে সাকুল্যে ৮৬ জন ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুকে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে৷ পরিকল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে এই ব্যাপক ফারাক ‘দ্য গার্ডিয়ান' সহ অনেক পত্রিকারই নজর এড়ায়নি৷
খোদ সুইডেন এবার জানিয়েছে যে, তারা সুইডেন থেকে ইইউ-র অন্যান্য দেশে কিছু উদ্বাস্তু ‘রিলোকেশন' করার অনুরোধ করবে, কেননা ‘‘আমরা যেভাবে এই সব মানুষদের গ্রহণ করতে চাই, সুইডেনের পক্ষে তা করা সম্ভব নয়'' – বলেছেন সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেন৷
জার্মানির সমস্যা
জার্মানির প্রথম সমস্যা নিঃসন্দেহে এই যে, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, এমনকি পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন, সেই সব উদ্বাস্তুদের কাছে জার্মানি হল তাদের ‘‘স্বপ্নের দেশ''৷ ওদিকে জার্মান জনগণের মধ্যে চাঞ্চল্য বাড়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে৷ তার কারণ অনুমান করা কঠিন নয়৷ ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট' লিখছে: ‘‘একশো বাসিন্দার একটি ছোট্ট জার্মান গ্রামকে ৭৫০ জন উদ্বাস্তুর বাসের ব্যবস্থা করতে বলা হচ্ছে৷''
জার্মান সরকারও জানেন যে, এবার সক্রিয় হবার সময় এসেছে, কিন্তু সিডিইউ-সিএসইউ-এসপিডি জোট সরকারের মধ্যে এখন প্রতিটি দলের মনোভাব ও অবস্থান স্বতন্ত্র৷ বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও সিএসইউ প্রধান হর্স্ট সেহোফার সীমান্তে ট্র্যানজিট জোনের দাবিতে অনড় থাকার পর প্রধানমন্ত্রী ও সিডিইউ প্রধান আঙ্গেলা ম্যার্কেল যদি বা তাতে নিমরাজি হলেন – তো বেঁকে বসেছে এসপিডি দল: তারা চায় দেশের অভ্যন্তরে রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র৷
বুধবার আবার বাভেরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইওয়াখিম হ্যারমান জানিয়েছেন যে, সিএসইউ দল সাংবিধানিক আদালতের এক সাবেক বিচারপতিকে খতিয়ে দেখতে বলেছে, বার্লিনের অভিবাসন নীতি সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাভেরিয়ার সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করছে কিনা৷ অর্থাৎ উদ্বাস্তু নীতি নিয়ে সেহোফার-ম্যার্কেল বা সিএসইউ-সিডিইউ কোঁদল মেটেনি৷ তাছাড়াও বাকি থাকছে ইউরোপীয় কোঁদল৷ কাজেই জার্মানির ‘‘ডেয়ার স্পিগেল'' পত্রিকা তার ইংরেজি টুইটে বলেছে: ‘‘উদ্বাস্তু সমস্যা সামধানের জন্য বার্লিনের একটা দারুণ সমাধান আছে৷ কিন্তু তা শীঘ্র বাস্তবায়িত হবার বিশেষ সম্ভাবনা নেই৷''
এসি/এসবি (ডিপিএ, এএফপি, এপি)