‘লোকসংগীতকে কেউ বাঁচাতে চায় না’
৮ জানুয়ারি ২০১৩আব্বাস উদ্দিন নেই, তবে তাঁর গান আছে, অনেক অনুসারী শিল্পী এবং শ্রোতার পাশাপাশি সংগীতের সেবায় নিয়োজিত একটি পরিবারও আছে তাঁর৷ মেয়ে ফেরদৌসি রহমানকে কে না চেনেন? অন্যদের কথা বাদ দিলেও আব্বাস উদ্দিনের পরিবারের অন্যতম সদস্য, তাঁর ছেলে মুস্তাফা জামান আব্বসীর কথাও বলতে হবে৷ ৭৫ বছরের জীবনে এ পর্যন্ত শুধু যে গানই গেয়েছেন তা তো নয়, গবেষণাও করেছেন গান নিয়ে৷ লোকসংগীতের হালচাল তাঁর চেয়ে ভালো জানা লোক খুব বেশি আছে কিনা সন্দেহ৷ যখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো, মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে নেমে এলো রাজ্যের হতাশা, বললেন, ‘‘(লোকসংগীতের) অবস্থা ভালো না, কারণ, ব্যান্ড এসে গেছে, এরা গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে বড় বড় যন্ত্র নিয়ে৷ ফলে আগে যে বাউল গান, ভাটিয়ালি গান, বিচ্ছেদি গানের বড় বড় আসর হতো সেগুলো এখন আর হয় না৷'' তার মানে হলো, গ্রাম বংলার লোকও আজকাল লোকগান শোনে কম, ফলে নতুন শিল্পী উঠে আসাও ক্রমে বন্ধ হওয়ার পথে৷
তারপর কথা যত এগিয়েছে, দীর্ঘতর হয়েছে দীর্ঘশ্বাস৷ আব্বাস উদ্দিন, আব্দুল আলীম মারা গেছেন, রথীন্দ্র নাথ রায়, নীনা হামিদের মতো কেউ কেউ চলে গেছেন বিদেশে৷ তাতে তৈরি হয়েছে বড় রকমের শূন্যতা৷ এ মুহূর্তে টিভি-রেডিওতে যাঁরা গাইছেন তাঁদের অধিকাংশেরই শিল্পী হিসেবে যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুস্তাফা জামান আব্বাসী বললেন, ‘‘আমাদের পরে যাঁরা এসেছেন তাঁদের অনেকেই এখন দলীয় পরিচয় নিয়ে গান৷ আমাদের দেশে দলের প্রতাপ খুব বেশি৷ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের লোকেরা জুটে যায়৷ তাঁরা যে খুব নামকরা শিল্পী তা-ও নয়, তাঁরা একদম ‘অর্ডিনারি'৷ এখন যাঁরা গান, তাঁরা এই নেতার কথা, ওই নেতার কথার পর হাবিজাবি কিছু গেয়েই ভাবছেন না জানি কোথায় উঠে গেলেন৷''
তাহলে লোকসংগীতকে বাঁচানোর উপায়? মুস্তাফা জামান আব্বাসী বললেন, ‘‘বাঁচাতে হলে ভাই, প্রথমে মনটাকে ঠিক করতে হবে যে আপনি বাঁচাবেন কিনা৷ কেউ তো বাঁচাতেই চায় না, মরে গেলেই ভালো এরকম একটা ভাব!''