শরণার্থীদের সাহায্য করে বিপাকে জার্মানরা
১৯ নভেম্বর ২০১৮বউয়ের বারণ সত্ত্বেও ক্রিস্টিয়ান ওস্টারহাউস এক সিরীয় শিশু ও নাবালিকার খরচের দায়িত্ব নেন৷ এ বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রণালয়ও তাঁকে উৎসাহিত করে৷ অবৈধভাবে জার্মানিতে আসার বদলে দু'জনকে বৈধভাবে জার্মানিতে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করবার সুযোগ করে দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ান৷ কিন্তু তিনি জানতেন না, তাঁর খরচের ভার শুধুমাত্র এই দুই সিরীয়র আশ্রয় গৃহীত হওয়াতেই শেষ হবে না৷
‘‘এই দু'জনের জন্য আমরা বিমান ও বাসার ভাড়া দিয়েছি৷ সাথে কিছু টাকাও দিয়েছি যাতে তাঁরা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন,'' বলেন ক্রিস্টিয়ান৷
ক্রিস্টিয়ানের মতোই জার্মানির বন শহরে রয়েছেন এরকম ৪৫০জন পৃষ্ঠপোষক৷ কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে জার্মানির প্রায় সাত হাজার পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাচ্ছেন অবাক করা চিঠি৷
গত জুন মাসে দুই সিরীয় শরণার্থীর খরচ বাবদ ক্রিস্টিয়ানের জন্য এসেছে ৭,২৩৯ ইউরোর ( প্রায় সাত লক্ষ বাংলাদেশি টাকা) বিল! বলা হচ্ছে, সিরীয় শিশু ও নাবালিকা কন্যাটি জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেও এই অঙ্ক মেটাতে হবে খ্রিস্টিয়ানকেই৷
আইন নিয়ে ধোঁয়াশা
২০১৬ সালের পরিবর্তিত আইন অনুসারে, শরণার্থীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তি হলেও পৃষ্ঠপোষকের ওপর থেকে আর্থিক দায়িত্বের ভার সরে না৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব বইতে হয় তিন বা পাঁচ বছর ধরেও৷
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জার্মানির শ্রম ও সমাজব্যবস্থা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় যে, এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত পৃষ্ঠপোষকদের কোনো টাকা সরকারকে দিতে হবে না৷ তবুও ক্রিস্টিয়ানের কাছে একের পর এক চিঠি আসতে থাকে৷
বন শহরের আইনজীবী লোথার মাহলবের্গ ক্রিস্টিয়ানের মতো পৃষ্ঠপোষকদের পক্ষে আদালতে লড়েন৷ তাঁর মতে, ‘‘নিজেদের আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে রেখেও এই মানুষেরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন৷ বিপজ্জনক বা বেআইনী পথের বদলে আইনসম্মতভাবেশরণার্থীদের জার্মানিতে আনতে চাইলেও সরকারএদের সাহায্যের বদলে আরো জটিলতায় ফেলছে৷''
সততার জন্য শাস্তি?
আদতে সিরীয় ফারিদ হাসান বছর কুড়ি আগে জার্মানিতে আসেন৷ নিজের আর্থিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও যুদ্ধের সময় সিরিয়া থেকে নিজ দায়িত্বে পিতা ও দুই ভাইকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন৷
ক্রিস্টিয়ানের মতো তিনিও পেয়েছেন একটি চিঠি৷ কিন্তু তাতে টাকার অঙ্ক দেখে ঘাবড়ে গেছেন হাসান৷ বর্তমানে ২,০০০ ইউরো প্রতিমাসে রোজগার করা হাসানের ওপর বর্তেছে ৮৫,০০০ ইউরো মেটানোর দায়৷
‘‘অন্যদের মতো আমার পরিবারও যদি চোরাপথে জার্মানিতে আসতো, তাহলে কিছু হতো না৷ আইন মেনে চলতে গিয়েই আমার এই দশা৷'', জানান হতাশ হাসান৷
অলিভার পিপার/এসএস/এসিবি