শহরে সবজির চাষ, যেমন বার্লিনে
৬ নভেম্বর ২০১৭জার্মানির রাজধানী বার্লিন চল্লিশ লাখ বাসিন্দার একটি মহানগরী৷ সবুজ বলতে ওই পাবলিক পার্ক বা ছোটখাট খিড়কির বাগান৷ কিন্তু সেই বার্লিনেও এখন সবজির চাষ শুরু হয়েছে৷ জায়গাটা ছিল হয়তো একটা পার্কিং লট, কিন্তু সেই গাড়ি রাখার জায়গায় বড় বড় কাঠের বাক্স বসিয়ে তাতে ফুল আর শাকসবজির গাছ লাগানো হয়েছে৷ এই নতুন ফ্যাশনটির নাম ‘আর্বান গার্ডেনিং' বা শহরে বাগান৷ বার্লিনে ইতিমধ্যেই শ'খানেক এ ধরনের শহুরে বাগান গজিয়ে উঠেছে৷
সাহিত্যের ছাত্রী হানা লিজা লিন্সমায়ার বলেন, ‘‘আমরা শহরের মধ্যে এক টুকরো গ্রাম আনার চেষ্টা করেছি, এক টুকরো জমি, যা থেকে নিজের শাকসবজি পাওয়া যায়, একটা গাছ বড় করার যে মজা রয়েছে; আমরা ছোটদের নিয়েও অনেক কাজ করি, তারা জীবনে প্রথমবার দেখে যে, সবজি শুধু সুপারমার্কেটে প্লাস্টিকের প্যাকেটে আসে না, বরং এখানে মাটিতে বীজ পুঁতে, তাতে জল ঢেলে গাছটাকে বড় করে, পরে তা থেকে ফুল-ফল বা সবজি পাওয়া যায়৷''
শহরে যারা বাগান করেন, তাদের কাছে শুধু ফসলটাই নয়, বরং বাগানে অন্যদের সঙ্গে দেখাশোনাটাও একটা বড় আকর্ষণ৷ ইট-কাঠ-পাথরের মরুভূমিতে তাদের এই ‘মরুদ্যানে' আজও মানুষের সঙ্গে মানুষের আলাপ-পরিচয় হয়৷ বাগান করার টব বা জমি ব্যক্তিগতভাবে ভাড়া করা যায়, আবার অনেকে মিলেও ভাড়া করা যায়৷ সকলেই এখানে আসতে পারেন, বাগান করতে পারেন, সদস্যতার কোনো বাধানিষেধ নেই৷
হানা ব্যাখ্যা করে দিলেন, ‘‘যাদের কাছাকাছি বাড়ি, তাদের অনেকেই এখানে এসে হাত লাগান, সাহায্য করেন৷ যাদের সারাটা দিন অফিসে কম্পিউটারে বসে কাজ করতে হয়, তারা নিজের হাতে কিছু একটা করতে পেরে, বাগান করতে পেয়ে খুব খুশি হন৷''
‘বাউয়ার্নগার্টেন'
বার্লিনের ‘বাউয়ার্নগার্টেন' বা ‘খামারবাড়ির বাগান' আর একটু বেশি বাণিজ্যিক৷ এ ধরনের বাগানগুলি শহরের কোনো বড় পার্কে কিংবা শহরের উপকণ্ঠে দেখতে পাওয়া যাবে৷ পেশাদার মালিরা এখানে হাল চালিয়ে মাটি কেটে, সেচের ব্যবস্থা করে বাগানটাকে ঠিকঠাক রাখেন, সখের বাগানকারীদের পরামর্শ দেন৷ খদ্দেররা এক টুকরো বাগান ভাড়া করে, পেশাদার মালিদের পরামর্শ মতো নিজেরাই চাষ করেন৷ এ ধরনের একটি ‘শহুরে বাগানের' পরিচর্যা করা শহরের বাসিন্দাদের পক্ষেও সহজ৷ বীজ পোঁতা ইত্যাদি কাজ পেশাদারি মালিরা করেন৷ বাগানের ভাড়াটিয়া ছুটি কাটাতে গেলে মালিরাই গাছে জল দেন৷
এখানে এক টুকরো বাগানের ভাড়া বছরে ৩০০ ইউরো৷ ফসল ভালো হবে না খারাপ, তা নির্ভর করবে সখের মালির আন্তরিকতা আর পেশাদারি মালিদের হাতযশের উপর৷ লাইবনিৎস গবেষণা প্রতিষ্ঠানও প্রকল্পটি সম্পর্কে আগ্রহী৷ নগর পরিকল্পনা প্রযুক্তিবিদ ড. ইঙ্গো জাসাদা বলেন, ‘‘আর্বান গার্ডেনিং-এর ফলে খাদ্য সরবরাহের পথ ও দূরত্ব কতটা কমে যায়, সেটাই আমাদের গবেষণার বিষয়৷ অর্থাৎ পরিবহণের ব্যয় কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের উপর প্রভাবের মতো পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিকগুলিও আমরা বিচার করে দেখছি৷''
অনেকেই ‘শহুরে বাগান' করতে আগ্রহী, কাজেই আবেদনকারীদের লাইন পড়ে আছে৷ বিশেষ করে শিক্ষিত মহলে এই প্রবণতা বেশি; তাদের কাছে সস্তায় শাকসবজি যতটা না লোভনীয়, তার চেয়ে বেশি কদর টাটকা শাকসবজির স্বাদের৷ কাজেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে আইনজীবী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সকলেই শহরে বাগান করতে আগ্রহী৷