শহরের মাঝেই চাষবাসের ব্যবস্থা
২১ অক্টোবর ২০১৫গরম প্রায় তিরিশ ডিগ্রি ! বার্লিনের ঠিক মাঝখানে এই গ্রিনহাউস৷ শশা আর লেটুস পাতার মতো সবজি চাষ হচ্ছে রাজধানীর বাসিন্দাদের জন্য৷ কোম্পানিটির দুই প্রতিষ্ঠাতার কারোরই চাষবাস জানা ছিল না৷ তাঁরা হলেন বিজনেসম্যান৷ তাঁদের আইডিয়া হল, যেখানে গজাচ্ছে, সেখানেই শাকসবজি বিক্রি করা৷
ইসিএফ ফার্মসিস্টেমস-এর সিইও নিকোলাস লেশকে বললেন: ‘‘উৎপাদনের ক্ষেত্র শহরের মাঝখানে হলে খদ্দেরদের জন্য সরাসরি উৎপাদন করা চলে৷ দূরে মাল বয়ে নিয়ে যাওয়া, হিমায়নের ব্যবস্থা করার ঝামেলা নেই৷ এককথায় সাশ্রয়ী উৎপাদন৷''
কাছের কোনো এক রেস্তোরাঁ থেকে শেফ কুক এসেছেন বাজার করতে৷ শেফ কুক-এর আজ দরকার বিশেষ করে টাটকা হার্বস, মানে তৃণগুল্ম৷ সেইসঙ্গে স্বভাবতই শশা৷ তবে খরচ পোষাতে গেলে শহরের মাঝখানে সবজির বাগান খুব ছোট হলে চলবে না৷ গ্রিনহাউসটির আয়তন আঠেরো'শো বর্গমিটার৷ তা থেকে উৎপন্ন হয় বছরে ৩৫ টন সবজি৷ এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এখানে মাছও কিনতে পাওয়া যাবে৷ পার্চ মাছগুলো আপাতত গ্রিনহাউসের পিছনে রাখা চৌবাচ্চায় বড় হচ্ছে৷ নিকোলাস লেশকে বছরে ৪০,০০০ মাছ বিক্রি করতে চান৷ মাছের চৌবাচ্চার জল দিয়ে আবার সবজিক্ষেতে সেচ দেওয়া হবে৷ নিকোলাস লেশকে বললেন: ‘‘মাছেদের বর্জ্য একটি অরগ্যানিক ফিল্টার দিয়ে নাইট্রেটে পরিণত করা হচ্ছে৷ নাইট্রেট হল গাছের সার৷ মাছের চৌবাচ্চার নাইট্রেট যুক্ত পানি গ্রিনহাউসগুলোতে নিয়ে গিয়ে সেখানকার গাছগুলোতে সেচ দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ মাছেদের বর্জ্য পানি গিয়ে গাছেদের সেচের পানি হচ্ছে৷ এর মজা হল, আমরা গাছগুলোর জন্য অরগ্যানিক সার তৈরি করছি৷''
হাইটেক কৃষি
ফল্কমার কয়টার-এর মতে ‘আর্বান ফার্মিং' বা শহরে চাষবাস ছাড়া ভবিষ্যতে কিছুই চলবে না৷ ফল্কমার ওবারহাউজেন-এর ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের গবেষক৷ এলইডি আলো সূর্যালোকের বিকল্প হতে পারে – অথচ সাধারণ বাতির চেয়ে অনেক কম কারেন্ট খায়৷ নানা ধরনের রং ও ওয়েভলেন্থ-এর আলোয় বিভিন্ন ধরনের তৃণগুল্ম গজাতে থাকে৷ শহরে সবজির চাষ ব্যবসায়িক দিক থেকেও সফল হবে বলে কয়টার-এর ধারণা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা এশিয়ায় মানুষজন এ ব্যাপারে অনেক বেশি এগিয়ে৷ ফ্রাউনহোফার গবেষণা প্রতিষ্ঠান একটি জাপানি কোম্পানির জার্মান শাখার জন্য এই এলইডি আলোক প্রণালীটি তৈরি করছে৷ ফ্রাউনহোফার সেন্টার-এর অধ্যক্ষ ফল্কমার কয়টার জানালেন: ‘‘এই সিস্টেমগুলো শুধু স্টার্ট-আপ কিংবা গার্ডেনিং সংস্থাগুলির তরফ থেকেই ডেভেলপ করা হয় নয় – জার্মানি অথবা ইউরোপে যে পরিস্থিতি, তাতে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও এ কাজে নেমেছে৷ তোশিবা কিংবা প্যানাসোনিক-এর মতো কোম্পানিগুলি এলইডি বাতি তৈরি করে থাকে৷ তাদের ঐ প্রযুক্তি আছে এবং তারা সেটা ব্যবহার করতে জানে৷''
ফেরা যাক বার্লিনে৷ ইসিএফ ফার্মসিস্টেম-এর দুই প্রতিষ্ঠাতা ইতিমধ্যেই আরো বড় করে ভাবছেন৷ তাঁরা তাদের শহুরে খামার-এর আইডিয়াটা অন্যদেরও বেচেছেন৷ গোটা পরিকল্পনার জন্য একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন৷ ভবিষ্যতে তাঁরা নিজেরাই আরো বেশি শহুরে খামারের মালিক হতে চান৷ নিকোলাস লেশকে জানালেন: ‘‘আপাতত আমরা মনোযোগ দিচ্ছি বাস্তবিক গ্রাহকদের জন্য এই ধরনের খামার গড়়ে তোলার উপর৷ আমরা শহুরে খামারের টার্নকি কনস্ট্রাকশন করে থাকি৷ ভবিষ্যতে আরো বেশিভাবে তা করতে চাই৷ শহরে একটা সুপারমার্কেটের চেন গড়ার স্বপ্ন আছে, যেখানে আমাদের নিজেদের শহুরে খামারগুলো থেকে পণ্য সরবরাহ করা হবে৷''