শহরের কেন্দ্রস্থল গাড়িমুক্ত করার উদ্যোগ
২৮ জুলাই ২০২১বার্লিনে বিক্ষোভ
বার্লিনের পথে গাড়ির ভিড়ের বিরুদ্ধে সাইকেল চালকদের প্রতিবাদ চলছে৷ তারা শহরের কেন্দ্রস্থলে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে শুধু সাইকেলের জন্য আরো বেশি পথ বরাদ্দ করার দাবি জানাচ্ছে৷ এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘আমার মতে, গাড়ির জন্য যথেষ্ট অবকাঠামো রয়েছে৷ এবার সাইকেলের অবকাঠামো আরো বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং বার্লিনকে আরও সবুজ করে তুলতে হবে৷’’
গাড়ির তুলনায় বেশি সাইকেলের কারণে বিক্ষোভের সময় যানজট সৃষ্টি হয়েছে৷ গাড়ি চালকদের মত কী? যানজটে আটকে পড়া এক চালক বলেন, ‘‘আমার মতে, উভয়ের জন্যই জায়গা থাকা উচিত৷ শুধু সাইকেল চালক নয়, সবারই কিছু পাওয়া উচিত৷’’
পরিবহণের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের দাবি বাড়ছে৷ এবার এমনকি হাইওয়ের উপরেও সাইকেল নামছে৷ পুলিশ সবকিছু ঘিরে রেখেছে৷ বার্লিনের রাজ্য সরকার সেটা সম্ভব করছে৷ নতুন এক পরিবহণ কনসেপ্টের আওতায় শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক শুধু পথচারী ও সাইকেলের জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ তবে সেই লক্ষ্যে আরো পরিবর্তনের জন্য চাপ বাড়ছে৷ ‘গাড়িমুক্ত বার্লিন' অভিযানের প্রতিনিধি নিনা নোবলে বলেন, ‘‘আমরা বার্লিনকে গাড়িমুক্ত করতে গণভোটের পক্ষে৷ এই মুহূর্তে না হলেও শহরের কেন্দ্রস্থল গাড়িতে ভরে থাকে বলে আমাদের মাথায় এই আইডিয়া এসেছিল৷ বিশেষ করে শহরের কেন্দ্রস্থলে অনেক মানুষ গাড়ি চেপে ঘোরাঘুরি না করলেও তাদের জন্য বরাদ্দ জায়গা অত্যন্ত কম৷ আমাদের মতে এই বণ্টন মোটেই ন্যায্য নয়৷ তাছাড়া গাড়ি আর সময়োপযোগী নয়৷’’
মহামারির জের ধরে নতুন ভাবনাচিন্তা
বিশ্বের অনেক শহরের কেন্দ্রস্থল দ্রুত বদলে যাচ্ছে৷ আন-লিন নিয়ো নামের এক স্থপতি সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান মহামারি বহুকাল ধরে চলে আসা এক প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করছে বলে আমি মনে করি৷ পথচারীদের জন্য বরাদ্দ এলাকার মধ্য দিয়ে হেঁটে গেলে নিজেই সমস্যাগুলি দেখতে পাবেন৷’’
মানুষ ইন্টারনেটে কেনাকাটা করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ করোনা সংকটের কারণে ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সমস্যাগুলি আরো কঠিন হয়ে পড়েছে৷ বিক্রিবাটা ও পার্কিংয়ের জায়গার একটা বড় অংশ আর কাজে লাগছে না৷
যেমন ল্যুনেন শহরে একটি বিশাল বিপনি ভবন খালি পড়ে ছিল৷ ইস্পাতের কাঠামো ছাড়া বাকি সব কিছু খুলে নেওয়া হয়েছে৷ ভবনটিকে বসতবাড়িতে রূপান্তরিত করা হয়েছে৷ কিছু দোকানও রয়েছে৷ গাড়ির উপর নির্ভরতা অনেক কমে গেছে৷ আন-লিন নিয়ো বলেন, ‘‘কাজকর্ম ও বসবাসের জায়গা হিসেবে শহরকে সামগ্রিকভাবে ভাবতে হবে৷ সেটা করলে নিত্যযাত্রীর সংখ্যা আমরা কমাতে পারবো৷’’
গাড়ির গ্যারেজ ছাড়াই বার্লিনের একটি ভবন ডিজাইন করা হয়েছে৷ সেখানে দোকান, আর্ট গ্যালারি ও ফ্ল্যাট রয়েছে৷ একই ছাদের নীচে কিছু অফিসও স্থান পেয়েছে৷ ফলে কাজের জন্য দূরে যাবার প্রয়োজন নেই৷ ভবনের ভেতরে অনায়াসে উঁকি মারা যায়৷ ইচ্ছা করে ভবন কমপ্সেক্সের মাঝে মানুষের হাঁটাপথও রাখা হয়েছে৷ ভবনের বাসিন্দা ক্লাউডিয়া ফুংক বলেন, ‘‘ঘরে-বাইরের মধ্যে ফারাক কমিয়ে সবকিছু অনেক স্বচ্ছ করে তোলা হয়েছে৷ কে আসছে যাচ্ছে, কী হচ্ছে – সবকিছু দেখা যাচ্ছে৷ বারান্দার গাছ আমাকে আনন্দ দেয়৷’’
ইউরোপের একাধিক শহরে একই প্রবণতা
শহরের কেন্দ্রস্থলে মনোরম জীবনযাত্রা ও সাইকেল-বান্ধব পরিবেশ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ বহুকাল আগেই শহরের কেন্দ্রস্থলকে গাড়িমুক্ত করে কোপেনহেগেন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে৷ প্যারিসও সেই পথে এগোচ্ছে৷ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শঁজেলিজে সড়ক ও বিজয় তোরণের আশাপাশে আরও অনেক গাছ লাগিয়ে গাড়ি পরিবহণের জায়গা কমিয়ে আনা হবে৷ নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ে পাড়ার টাইমস স্কোয়্যার এলাকাকে গাড়িমুক্ত করে তোলা হয়েছে৷ ডেনমার্কের নগর পরিকল্পনাকারীরা রাস্তার উপর ক্যাফে ডিজাইন করেছেন৷
এমনকি গাড়ি কোম্পানিগুলিও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে চায়৷ ফলক্সভাগেন অটোনোমাস শাটল কার তৈরি করার পরিকল্পনা করছে৷ ট্যাক্সি হিসেবে এমন যান শহরের কেন্দ্রস্থলের উপর চাপ কমিয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ফলক্সভাগেন কোম্পানির মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান বুলমান বলেন, ‘‘ব্র্যান্ড হিসেবে আমরা গাড়ি তৈরির কোম্পানি থেকে মোবিলিটি প্রোভাইডার হয়ে উঠছি৷ আপনি কোনো গাড়ি কিনতে, লিজ নিতে, ভাড়া নিতে অথবা হয়তো শুধু ব্যবহার করতে পারেন৷ আপনি নিজে চালাবেন, নাকি শুধু গন্তব্যে পৌঁছতে চান, সেটা আমাদের বিজনেস মডেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়৷’’
আবার সাইকেলের বিক্ষোভে ফেরা যাক৷ এবার বার্লিন শহরের মাঝে হাইওয়ে নিয়ে চর্চা চলছে৷ কয়েক বছরের মধ্যে সেটির আর প্রয়োজন হবে না বলে বিক্ষোভকারীরা আশা করছেন৷
ক্রিস্টিয়ান প্রিসেসিউস/এসবি