শহিদুল আলম কি জামিন পাবেন?
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েস শহিদুল আলমের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন৷ তবে লিখিত আদেশের অনুলিপি ছাড়া জামিন আবেদন নাকচ করার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন না তার আইনজীবীরা৷ এর আগে গত ৫ আগস্ট তাঁকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করার প্রথম দিনেই মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল৷ তখনও জামিন দেননি আদালত৷ এর পর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন ঝুলে ছিল৷
আর জামিন না পেয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশের আগেই গত সপ্তাহে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন শহিদুলের আইনজীবীরা৷ শুনানিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিব্রত হলে প্রধান বিচারপতি আরেকটি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন৷ আর সেই বেঞ্চ নিজে জামিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতকে মঙ্গলবারের ( ১১ সেপ্টেম্বর) মধ্যে জামিন আবেদনের নিস্পত্তি করার আদেশ দেন৷ মহানগর দায়রা জজ আদালত শহীদুল আলমকে জামিন না দিয়েই নিষ্পত্তি করলেন৷
শহিদুলের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ চাইলে হাইকোর্টই জামিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন৷ কিন্তু তাঁরা তা করেননি৷ তাঁদের এটা নিস্পত্তির ক্ষমতা ছিল৷আবার দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর দরকার ছিল না৷ কিন্তু তাঁরা তা করলেন৷ হাইকোর্টতো আর জামিন দিতে বলেননি৷ নিষ্পত্তি করতে বলেছেন৷এখন কী কারণে দায়রা জজ শহিদুল আলমকে জামিন দিলো না, তা জানতে আমাদের আদেশের লিখিত কপি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ আদালত জামিন বাতিলের সময় মুখে এ বিষয়ে কিছু বলেননি৷''
সারা হোসেন আরো বলেন, ‘‘এখন আমাদের আবার হাইকোর্টে জামিন আবেদন নিয়ে যেতে হবে৷ আমরা যাব৷ তবে কতদূর ঘুরতে হবে তা জানি না৷''
শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের পর৬ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দেয়া হয়৷ দায়রা জজ আদালতে মঙ্গলবার জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে৷ আদালতে প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘‘শহিদুল আলম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিত৷ নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়েছেন৷ জঘন্য অপরাধ করেছেন শহিদুল আলম৷''
সারা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, শহিদুল আলমের বক্তব্য রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে৷ কিভাবে করেছে? কেউ কি সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না? ভিন্নমত থাকবে না? তদন্তের স্বার্থে নাকি তাঁকে আটক রাখা প্রয়োজন৷ তদন্তের জন্য যা প্রয়োজন, তাতো তদন্তকারীদের হাতে আছে৷ তাঁর মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, সব কিছু৷ তিনি কি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন? তাও না৷ তিনি কি জামিন পেলে কাউকে হুমকির মুখে ফেলবেন? তাও না৷ জামিন দেয়া না দেয়া আদালতের ইচ্ছা৷ কিন্তু জামিন পাওয়াও অধিকার৷ কোন কারণে তাঁকে জামিন দেয়া হচ্ছে না, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়৷''
শহিদুল আলমের আরেকজন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আদালতকে বলেছি, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা মিথ্যা এবং সাজানো৷ কারণ, তিনি কোনো ভিডিও বা অডিও বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার দিন কোনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেননি৷ এই মামলায় তাঁকে আইনগতভাবে জামিন দেয়ায় কোনো বাধা নেই৷ তিনি আইনগতভাবে জামিন পাওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করেন৷ আদালত চাইলে দিতে পারেন৷''
এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনে করি, শহিদুল আলমকে জামিন না দেয়ায় ন্যায় বিচারের ব্যাত্যয় হচ্ছে৷ কারণ, মামলা যদি অজামিনযোগ্যও হয়, তাহলে আদালতের জামিন দেয়ার এখতিয়ার আছে৷ শহিদুল আলম একজন দেশে বিদেশে সুপরিচিত ব্যক্তি৷ তিনি পালিয়ে যাবেন, এমন ভাবা যায় না৷ আর তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা নিয়ে নানা বিতর্ক আছে৷ তাঁর বক্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা হয়েছে, এটা এখনো প্রমাণিত নয়৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত যদি তিনি বিচারে অপরাধী প্রমাণিতও হন, তাহলে তাঁকে তো শাস্তি দেয়ার সুযোগ আছে৷ তার আগেই নানা কারণ দেখিয়ে তাঁকে এতদিন আটক রাখায় তাঁর অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে আমি মনে করি৷''