শিক্ষাই সব শক্তির উৎস
১৪ মে ২০১২২০০০ সালে জাতিসংঘ জানিয়েছে যে শিক্ষা হল মানবাধিকার৷ প্রতিটি শিশুর স্কুলে যাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ ২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে জাতিসংঘ৷ ২০১৫ আসতে আর বেশি দেরি নেই৷ প্রশ্ন জাতিসংঘ কি তার লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে?
স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যখন বেসরকারি করা হয় তখন ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল৷ ‘উই ওয়ান্ট এডুকেশন' বা আমরা শিক্ষা চাই – এই প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা রাস্তায় নেমেছিল৷ রাষ্ট্রের নজর কাড়তে চেয়েছিল এসব ছাত্র-ছাত্রী৷ শিক্ষা মানবাধিকারেরই একটি অংশ তা তারা জানাতে চেয়েছিল সবাইকে৷
জার্মান মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করছেন ক্লডিয়া লরেনশাইট৷ তিনি জানান, ‘‘প্রতিটি শিশু স্কুলে যাচ্ছে কিনা তা দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব৷ এবং বিনামু্ল্যে সেই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সবাইকে দিতে হবে৷ কে কোন দেশ থেকে এসেছে, কার ধর্ম কি সেগুলো কখনোই শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ধরণের গুরুত্ব বহন করবে না৷ এবং ঠিক এভাবেই একটি রাষ্ট্র শিক্ষা এবং মানবাধিকারকে একসঙ্গে যোগ করতে পারে৷ মানবাধিকারের ঘোষণা পত্রের প্রতি এভাবেই সম্মান দেখাতে পারে একটি রাষ্ট্র৷''
তবে একথা ঠিক যে শুধুমাত্র দরিদ্র দেশগুলো নয়, শিল্পোন্নত দেশগুলোতেও দেখা গেছে যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না৷
বিশ্বায়নের পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক শক্তি এবং প্রবৃদ্ধি – জাতিসংঘের ‘ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' সংস্থা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে যে, এই মানসিকতা গোটা বিশ্বকে পাল্টে দিয়েছে৷ এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পিছিয়ে গেছে কয়েক ধাপ এবং এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা খ্রিস্টান ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনগুলো৷ তবে সবসময়ই যে অর্থের যোগান পুরোদমে আসছে তা কিন্তু নয়৷ অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে দাতা গোষ্ঠীদের ইচ্ছানুযায়ী পড়াশোনার নিয়ম নীতি পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো৷
রাষ্ট্র হচ্ছে মদতদাতা
এই ধরণের অর্থায়ন কোন শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যায় নাকি স্থবির করে দেয় – তা হচ্ছে আরেকটি প্রশ্ন৷ কথাগুলো বলেন জার্মান কমিশন ফর ইউনেস্কোর লুৎস মোলার৷ বেসরকারি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে যে সাহায্য পাওয়া যায় তা যেন কখনো বৈষম্যমূলক কাজের সম্মুখীন না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ এর জন্য এমন একটি সংগঠন বা নিয়ম থাকা উচিত যাতে করে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা যায় কোন ধরণের বৈষম্য ছাড়াই৷
যদি শিক্ষার প্রথম শর্ত হয় একটি ভালো চাকরি তাহলে শিক্ষা যে মানবাধিকার – সেই অধিকার পূরণ সম্ভব হবে না৷ যদি কাজের জন্যই একজনকে শিক্ষা দেয়া হয় তাহলে শিক্ষা একটি হাতিয়ার ব্যতীত আর কিছু হবে না৷ কথাগুলো বলেন ক্লডিয়া লরেনশাইট৷ তিনি আরো জানান, এই শিক্ষা একজন মানুষের সৃজনশীলতা, তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সহায়তা করে না৷ তবে এর পাল্টা যুক্তিও রয়েছে৷ কোন শিক্ষা যদি কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগানো না যায় তাহলে দ্রুত সেই শিক্ষা পুরোপুরি ভুলে যাওয়া সম্ভব৷
ব্যক্তিত্বের প্রকাশ এবং বিকাশ
১৯৭০ সালে ব্রাজিলের শিক্ষাবিদ পাওলো ফ্রেইরে একই ধরণের কথা বলেছিলেন যখন তিনি নিরক্ষরতা দূর করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন৷ কেউ যদি লিখতে এবং পড়তে শিখে এবং তা যদি কোন কাজে না লাগানো যায় তাহলে সেই শিক্ষা ভুলে যাওয়া অনেক সহজ৷
লরেনশাইট বলেন, ‘‘শিক্ষা আমাদের এমন পথ দেখাবে যেখানে একজন মানুষ তার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে৷ যদি তা না হয় তাহলে মানুষ পড়াশোনাকে গুরুত্ব দেবে না৷ পড়াশোনা থেকে নিজেরাই দূরে থাকবে৷''
শিক্ষার আলোয় সবাইকে আলোকিত করতে হবে – এই দায়িত্ব বিশ্বের প্রতি মানুষের প্রতিটি সম্প্রদায়ের৷ সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷ ধনী, দরিদ্র, ধর্ম, সংঘাত – যে কোন পরিস্থিতিতে শিক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত৷
লরেনশাইট বলেন, ‘‘একটি সমাজের সবচেয়ে দূর্বল এবং দরিদ্র পরিবারের শিশুটিও যদি স্কুলে যায়, যদি শিক্ষার আলো শিশুটিকে স্পর্শ করে তাহলে বলতে হবে সেই সমাজ হচ্ছে আদর্শ সামজ৷ সেখানে মানবাধিকারের মূল্যায়ন করা হয় যথার্থভাবে৷''
প্রতিবেদন: উলরিকে মাস্ট কির্শনিং/মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ