তদন্ত জালে ফের কংগ্রেস নেতা
১২ এপ্রিল ২০১৩প্রায় ৩০ বছর আগে শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় কংগ্রেস নেতা জগদীশ টাইটলারের জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই ২০১০ সালে টাইটলারের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার যে রিপোর্ট দেয়, দিল্লির আদালত তা অগ্রাহ্য করে ফের নতুন করে তদন্ত শুরু করার আদেশ দেয়৷ শিখ দাঙ্গা মামলার কফিন কবে বন্ধ হবে বলা মুশকিল৷
১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর৷ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দিল্লি ও উত্তর ভারতের কয়েকটি শহরে শিখ-বিরোধী দাঙ্গার আগুন জ্বলে ওঠে, যেহেতু ইন্দিরা গান্ধী তাঁর শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন৷ সরকার ও পুলিশ প্রশাসন প্রথমদিকে ছিল নীরব দর্শক৷ এই নীরবতা দাঙ্গায় ঘৃতাহুতির কাজ করে৷ ঐ দাঙ্গায় হতাহত হয় শিখ সম্প্রদায়ের প্রায় তিন হাজার মানুষ৷
বিভিন্ন স্তরে এই দাঙ্গায় প্ররোচনা দিয়েছিলেন বলে যেসব কংগ্রেস নেতার নাম উঠেছিল তার অন্যতম কংগ্রেস নেতা এবং কংগ্রেস সরকারের এককালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জগদীশ টাইটলার৷ কিন্তু অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়নি৷ প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের ভিত্তিতে তদন্তকারী নানাবতী কমিশনের রিপোর্টে টাইটলারের জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা বলা হয়৷ সরকার তা খারিজ করে দেন৷
টাইটলারকে পরবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিট দেয়া হয়৷ রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সেবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়৷ রাজীব গান্ধী হন প্রধানমন্ত্রী৷ শিখ দাঙ্গার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘একটা বিশাল গাছ যখন পড়ে যায়, তখন চারপাশের মাটি কেঁপে ওঠে৷''
১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা এবং ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবথেকে ন্যক্কারজনক মেরুকরণ৷ সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়ে এবং শিখ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের জিগির তুলে পুরো রাজনৈতিক ফায়দা তুলে নেয় কংগ্রেস৷
উল্লেখ্য, ৭০-এর দশকে ইন্দিরা গান্ধীর এমার্জেন্সির সময় পাঞ্জাবের শিখরা স্বশাসিত রাজ্যের দাবিতে সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করে৷ সেই আন্দোলন দমনে ৮৪-এর জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধী সেনা অভিযানের আদেশ দেন যার নাম ‘অপারেশন ব্লু স্টার'৷ অমৃতসরের শিখ ধর্মস্থান গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণমন্দির চত্বর ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ভিন্দ্রানওয়ালের ডেরা৷ মজুত করা ছিল সেখানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক সামগ্রী৷ সেনা অভিযানে নিহত হন ভিন্দ্রানওয়ালে৷ গুঁড়িয়ে দেয়া হয় তাঁর ঘাঁটি৷ ইন্দিরা গান্ধীর হত্যা ছিল তারই বদলা৷