1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিপ্রা, সিফাত এখনো কারাগারে

৬ আগস্ট ২০২০

মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার পর আটক তার প্রোডাকশন টিমের সদস্য স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগের তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন এখনও কারাগারে আছেন৷ একজনকে মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3gVt4
ছবি: bdnews24.com

এই তিনজন মেজর সিনহার ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রোডাকশন টিমে কাজ করতেন৷ ৩১ জুলাই রাতে যখন টেকনাফ পুলিশ চেকপোস্টে সিনহাকে গুলি করা হয় তখন তার সঙ্গে ছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাহেদুল ইসলাম সিফাত৷ পুলিশ টেকনাফ থানায় ওই হত্যার ঘটনায় যে মামলা করেছে তাতে সিফাতকে আসামি করা হয়েছে৷ সে এখন কক্সবাজার জেলা কারাগারে আছে৷ ঘটনার সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শিপ্রা রানী দেবনাথ এবং ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী তাহসিন রিফাত নূর হিমছড়ির একটি রিসোর্টে ছিলেন৷ সেই রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের দুজনকে আটক করে৷ পরে রামু থানায় শিপ্রার বিরুদ্ধে মদের বোতল রাখার অভিযোগে মাদক আইনে একটি মামলা দেওয়া হয়৷ তাহসিন রিফাত নূরকে মুচলেকা রেখে এক আত্মীয়ের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়৷

শিপ্রার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া৷ তার বাবা বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা৷ বাবা মা দুই জনই অসুস্থ৷ তারা দুই ভাইবোন৷ ভাই শুভজিত কুমার দেবনাথ কোলকাতায় পড়াশোনা করেন৷ তিনি জানান, ‘‘পুলিশ একটি হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে আমার বোনসহ অন্যদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে৷ আমার বোনকে আমি চিনি তার বিরুদ্ধে মাদকের যে মামলা দেয়া হয়েছে তা মিথ্যা৷ সে মেজর সিনহার প্রোডাকশনের পরিচালক৷ শুধু তাই নয়, এরইমধ্যে সে বাংলাদেশের বড় বড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছে৷’’

একটি সভ্য দেশে পুলিশের এই ষড়যন্ত্রে আমি হতবাক: শিপ্রার ভাই

‘‘একটি সভ্য দেশে পুলিশের এই ষড়যন্ত্রে আমি হতবাক৷ আমি আমার বোনসহ আটক সবার মুক্তি চাই৷ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার চাই,’’ বললেন তিনি৷

সাহেদুল ইসলাম সিফাত মেজর সিনহার টিমে ক্যামেরায় কাজ করেন৷ তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা৷ ঢাকায় তিনি তার খালার বাসায় থেকে পড়াশুনা করেন৷ খালা আইনজীবী৷ খালু সংসদ টিভির প্রযোজক৷ সিফাতের নানা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. এনায়েত কবির হাওলাদার৷ তিনি বলেন, ‘‘সিফাত সব সময় তার ক্যামেরার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে৷ সে কোনো অপরাধে কখনোই জড়িত ছিল না৷ কোরবানির ঈদে বাড়ি আসেনি ওই কাজের জন্যই৷ তার মতো একটি ছেলেকে হত্যা ও মাদক মামলার আসামি করা হয় কিভাবে? যারা হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ কিন্তু মিথ্যা মামলা দিয়ে সিফাতকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে৷’’

প্রত্যক্ষদর্শীরা ৩১ জুলাই রাতে মেজর সিনহাকে গুলি করার পর সিফাতের পায়ে গুলি করা কথা বললেও তার নানা জানান, ‘‘আমরা তার সাথে যোগাযোগ করেছি৷ সে মোটামুটি ভালো আছে জানিয়েছে৷ পায়ে গুলির কথা আমাদের বলেনি৷’’ টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলায় নিহত মেজর সিনহা ও সিফাত পারস্পরিক যোগসজসে চেকপোস্টে গুলির জন্য দায়ী বলে দাবি করা হয়েছে৷ থানায় হত্যা, মাদক এবং অস্ত্র আইনে মামলা করা হয় ওই রাতেই৷

স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র সানাউল কবির টিটু জানান, হিমছড়ি রিসোর্ট থেকে আটকের পর তাহসিন রিফাত নূরকে আর আত্মীয়রা ছাড়িয়ে আনেন৷ কিন্তু শিপ্রার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেওয়া হয়৷ রামু থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, ‘‘মাদক মামলায় একজনই আসামি শিপ্রা৷ আর কোনো আসামি নাই৷ সে এখন কারাগারে আছে৷’’

মিথ্যা মামলা দিয়ে সিফাতকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে: সিফাতের নানা

অন্যদিকে সিফাত কারাগারে থাকলেও এই মামলাটির ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো কথা বলতে চাননি টেকনাফ থানার নতুন ওসি এবিএমএস দোহা৷ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি৷ এরইমধ্যে মেজর সিনহা হত্যার দায়ে টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও এসআই লিয়াতক হোসেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা৷

শিক্ষার্থীদের আটকের প্রতিবাদে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন৷ তারা নিরীহ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেছেন৷ বিনা শর্তে মুক্তি না দিলে আরো কর্মসূচি দেবেন৷

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সবাই উদ্বিগ্ন এবং মর্মাহত৷ তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা যে কিভাবে শিকার্থীদের মুক্ত করবেন৷ ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম মতিউর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষার্থীরা যে এমন পরিস্থিতির শিকার হবেন তা আমরা ভাবতেও পারিনি৷ তারা সবাই মেজর সিনহার ডকুমেন্টারি প্রোডাকশন টিকে কাজ করেন৷ আমাদের এখানে পড়ালেখার ধরনটিই এরকম৷ ফলে তারা বিভিন্ন ফিল্ম, ডকুমেন্টারির কাজে যুক্ত হন৷ তাদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে৷’’

এদিকে তাহসিন রিফাত নূরকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার বা তার পরিবারের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না৷ শিক্ষার্থীরা জানান, হয়তো ভয়ে সে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে৷

সিনহার মৃত্যু বিচ্ছিন্ন ঘটনা: সেনাপ্রধান