‘শীতে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি বেড়ে যায়’
৯ জানুয়ারি ২০১৮ডয়চে ভেলে : শীতকালে মানুষের কী কী ধরনের রোগ হয়?
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ : শীতের কারণে মানুষের সাধারণ সর্দি-কাশি, অ্যাজমা বা হাঁপানি বাড়ে, ব্রঙ্কাইটিস বাড়ে, সিজন চেঞ্জের জন্য কিছু ভাইরাস জ্বর হচ্ছে৷ বিশেষ করে যাদের ব্যাথা জাতীয় রোগ আছে, বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি গিটে গিটে ব্যাথা বেড়ে যায়৷ ঠান্ডার কারণে এই রোগগুলো বেশি দেখা যায়৷ টনসিল ফুলে যায়, সাইনোসাইটিজ হয়, যেটা ছোট বাচ্চাদের বেশি দেখা যায়৷ স্কিনের কিছু রোগ বাড়ে৷ অ্যালার্জি হয়৷ চামরা শুষ্ক হয়ে যায় বলে এই রোগ বেড়ে যায়৷
এই রোগগুলো শীতকালেই কেন বেশি হয়?
যেহেতু আর্দ্রতা চেঞ্জ হয়, বাতাসে ধুলা-বালি বেশি উড়ে, তাই শীতকালে এসব রোগ বেশি হয়৷ আর ঠান্ডা লাগলে তো যে কারো কাশি বা অ্যাজমা হতেই পারে৷ এগুলো তো ঠান্ডার রোগ৷ ঠান্ডার সময়ই বেশি হয়৷ গরমকালে যে হয় না, তা নয়৷ তবে শীতকালেই বেশি হয়৷ শীতে মাসলগুলো স্টিফ হয়ে যায়৷ মাংসগুলো খিচে আসে ঠান্ডার জন্য৷ এ কারণে ব্যাথাগুলো আরো বেড়ে যায়৷
কোন বয়সি রোগী এই ধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হয়?
রোগ যে কারো হতে পারে৷ কিন্তু ছোট বাচ্চা বা বয়স্ক যারা, তাদের রোগটা বেশি হয়৷ যাদের বয়স ৬০-৭০ বছর তাদের সহ্য ক্ষমতা কমে আসে৷ ফলে তারা আক্রান্ত হন বেশি৷ বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয়৷
এবার রোগীর হার কেমন?
রোগী আমরা পাচ্ছি বিচ্ছিন্নভাবে৷ শহরে তুলনামূলক শীত কম৷ কিন্তু গ্রামে শীত আছে, কুয়াশাও আছে৷ ঢাকায় সব সময় শীত কমই থাকে৷ এখানে বেশি গাড়ি চলে, গাছপালা কম, তাই এখানে শীতও কম৷ বা অন্য শহরেও কম৷ কিন্তু গ্রামে এটা একেবারেই কম না, সেখানে ভালোই শীত পড়ে৷
এই রোগগুলো থেকে দূরে থাকতে করণীয় কী?
প্রথম কথা হলো, শীতকে প্রটেক্ট করতে হবে৷ ভালো গরম কাপড় পরতে হবে৷ বিশেষ করে বাচ্চাদের ভালো গরম কাপড় পরাতে হবে৷ মাথা ঢাকতে হবে, কানে শীত বেশি লাগে, কান ঢেকে রাখতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে, ঠান্ডা যেন না খায়, কুসুম কুসুম গরম পানি খেতে হবে৷ যে কোনো ধরনের ঠান্ডা, যেমন আইসক্রিম, কোক এগুলো খাওয়া যবে না৷ বিশেষ করে যারা বয়স্ক বা ছোট বাচ্চা, তাদের উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে৷ দুপুরের দিকে পানিতে ঠান্ডা কম থাকে৷ তখন গোসল করতে হবে৷ আর যাদের অ্যাজমা আছে, তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে চলতে হবে৷
শীতকালীন রোগ প্রতিরোধে সরকারের কী কোনো ব্যবস্থা থাকে?
সরকারের বাস্তবে কিছু করার দেখি না৷ এটা তো আবহাওয়ার ব্যাপার৷ সরকার মানুষকে সচেতন করতে প্রচারমাধ্যমকে কাজে লাগাতে পারে৷ মানুষকে সচেতন করতে পারে৷ তবে গ্রামে-গঞ্জে যারা গরীব মানুষ, সরকার তাদের শীত বস্ত্র বা কম্বল দিতে পারে৷ বিশেষ করে প্রচার বাড়াতে হবে৷
ধূলিকণা এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব বিস্তার করে?
এটা তো কিছুটা প্রভাব রাখেই৷ কারণ, শীতকালে বৃষ্টি হয় না৷ আর কনষ্ট্রাকশনের কাজ তো চলেই৷ রাস্তা খোড়া হচ্ছে, বিল্ডিং হচ্ছে, এতে ধূলিকণা তো উড়ছেই৷ এজন্য জনগনকেই সচেতন হতে হবে৷ তারা যেন ধূলিকণা এড়িয়ে চলেন৷ ইচ্ছে করলে মাস্ক পরতে পারেন৷ মুখ ঢেকে চলতে পারেন৷ বিশেষ করে বাচ্চারা ধূলাবালির মধ্যে যেন খেলাধূলা না করে৷ এছাড়া তো আর কোনো রাস্তা নেই৷
শীতকালে কি খাবারের ক্ষেত্রে কোনো সতর্কতা আছে?
খুব একটা কিছু নেই৷ তবে ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো৷ ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা খাবার না খাওয়াই ভালো৷ কোনো খাবার রান্নার পর রেখে দিলে বা ফ্রিজে রাখলে ঠান্ডা হয়, সেগুলো না খেয়ে গরম গরম খাওয়াই ভালো৷ গরম পানি খেলে আর অ্যালার্জি ফুড এড়িয়ে চললে ভালো ফল মিলতে পারে৷
ধূলিকণা থেকে বাঁচতে হলে কী করণীয়?
ধূলিকণা থেকে বাঁচতে হলে যতটা সম্ভব কম ঘোরাফেরা করতে হবে৷ তারপরও তো মানুষকে কাজ করতে হয়, ফলে যদি মাস্ক পরেন তাহলে কিছুটা উপকার পেতে পারেন৷ রাস্তা-ঘাটে সরকার চাইলে তো পানি ছিটাতে পারে৷ ধূলাবালিতে যেসব জার্ম আছে সেগুলো তাহলে অনেক মরে যায়৷
আমাদের তো পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেই?
আমাদের সরকার বা সিটি কর্পোরেশন ইচ্ছে করলে তো ছিটাতে পারে৷
এই রোগগুলো থেকে দূরে থাকতে আপনার পরামর্শ কী?
প্রথমত, এই শীত থেকে বাঁচতে হলে যথাসম্ভব গরম কাপড় পরতে হবে৷ বাইরে যেতে হলে গরম কাপড় পরে যেতে হবে৷ মাথা ঢেকে যাবে, কান ঢেকে বের হবে৷ ধূলাবালি থেকে যতদূর সম্ভব নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ আর দিনের বেলায়, বিশেষ করে দুপুরের দিকে খুব ঠান্ডা থাকে না, তখন গোসল করা ভালো৷ যাদের সুযোগ আছে, তারা গরম পানি ব্যবহার করবে৷
যাদের ঘরে শিশু আছে, তাদের প্রতি পরামর্শ?
বাচ্চাদের সুন্দর করে লেপ বা কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ঠান্ডা না লাগে৷ আবার ঘেমে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷ আর বাচ্চারা যাতে ধূলাবালিতে খেলতে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে৷ আইসক্রিমসহ অন্যান্য ঠান্ডা খাবার যেন যেন না খায়৷ আর ঠান্ডা লেগে গেলে যেন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়৷