শুধু চোখের নয়
২৪ মে ২০১৩কথায় বলে না, ‘চোখ দিয়ে যায় চেনা...?' বিশেষ করে রোগীর যদি ক্যানসার ছড়িয়ে যায় এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে, তাহলে চোখের পেছনে মেটাসটেসিস-এ ঘটনাটা প্রত্যক্ষ করতে পারেন চক্ষু চিকিৎসক৷ অন্যান্য অনেক অসুখ বিসুখের লক্ষণও ধরতে পারেন চোখের ডাক্তার৷ যেমন ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, মাল্টিপল এসক্লেরোসিস বা এমএস ইত্যাদি৷ অনেক সময় নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে এসে ধরা পড়ে এই সব রোগ৷
বাত ও লিভারের সমস্যা হলেও ধরা পড়ে চোখ দেখে৷ চোখ হলুদ হলে বোঝা যায় যকৃতের কোনো অসুখ আছে রোগীর৷ এমনকি অনেক সময় হেপাটাইটিস-এর মতো কঠিন অসুখও চোখ দেখে ধরা পড়ে৷
ডায়বেটিস হলে
পড়তে অসুবিধা হলে কেউ যদি চশমার জন্য চোখের ডাক্তারের কাছে যান, তিনি একথা শুনলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন, ‘আপনার ডায়বেটিস হয়েছে'৷ ডায়বেটিসের কারণে চোখে বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে৷ জটিলতা বৃদ্ধি পেলে চোখের দৃষ্টি একেবারে হারিয়েও যেতে পারে৷
প্রতিবেদনের বাকি অংশ পড়তে ক্লিক করুন এখানে...
ডায়বেটিসজনিত চোখের সমস্যাগুলোর মধ্যে মারাত্মক রোগ হলো রেটিনোপ্যাথি৷ এর ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি হয়৷ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে এটি ধীরে ধীরে হয়৷ আর তা না হলে রোগটি দ্রুত হয়৷ অক্ষি গোলকের সবচেয়ে পাতলা আবরণ হলো রেটিনা৷ কর্নিয়া ও লেন্সের মধ্য দিয়ে রেটিনায় আসা ছবি মস্তিষ্কে পৌঁছালে আমরা দেখতে পাই৷ ডায়বেটিসের প্রভাবে রেটিনার রক্তনালী ও কোষে সমস্যা দেখা দেয়৷ ফলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে৷ রোগী এক সময় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া চোখের ছানি, চোখে অন্তঃচাপ বৃদ্ধি বা গ্লাউকোমা, স্নায়ুজনিত রোগ ইনফেকশন, ঘন ঘন চোখের দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন ইত্যাদিও হতে পারে ডায়বেটিস হলে৷
ডায়বেটিসের কারণে জার্মানিতে প্রায় ৩০ হাজারের মতো ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন৷ এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বছরে ২০০০ জন৷ চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর বের্টল্ড সাইটৎস জানান, চিকিৎসার অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী আমাদের ক্লিনিকে আসেন৷ এর মধ্যে এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়, যাদের চোখের সমস্যা দেখে আমরা বুঝতে পারি যে, অন্যান্য অসুখের সঙ্গে এর একটা যোগাযোগ আছে৷''
স্নায়ুর রোগে
শুধু ডায়বেটিস ও উচ্চরক্তচাপই নয়, মাল্টিপল এসক্লেরোসিস-এর মতো স্নায়ুর রোগ থেকেও চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ এটি একটি স্নায়ুতন্ত্রের প্রদাহজনিত অটোইমিউন রোগ৷ অর্থাৎ শরীরের নিজের প্রতিরোধ শক্তি স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে৷ এই রোগে মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড এবং অপটিক স্নায়ু আক্রান্ত হতে পারে৷ এর ফলে ভারসাম্যের সমস্যা, কথা ও দৃষ্টির সমস্যা, ক্লান্তি ও ডিপ্রেশন দেখা দিতে পারে৷
এই অসুখের কারণে চোখের সমস্যা হলে রোগী ‘ডাবল ভিশন' দেখে৷ দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়৷ এই রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না৷ তবে সঠিক সময়ে ধরা পড়লে থেরাপি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়৷
প্রতিবেদনের বাকি অংশ পড়তে ক্লিক করুন এখানে...
বাতেও
হাড় ও মাংসপেশির রোগ বাত থেকেও চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যদিও বাত থেকে চোখের অসুখ, কথাটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করতে পারে ৷ পায়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, মাজা ও হাঁটুতে ব্যথা ইত্যাদি থেকে চোখের বিভিন্ন উপসর্গ শুরু হতে পারে৷ যেমন কর্নিয়ায় ঘা, পানি পড়া, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখে শুষ্কতা, চোখের সাদা অংশ ও রক্তনালীতে প্রদাহ ইত্যাদি৷ সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা না গেলে এই সব উপসর্গ থেকে রোগী অন্ধ হয়ে যেতে পারেন৷
সব ক্ষেত্রে পারদর্শী
এই কারণে চক্ষু চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণে চোখের সঙ্গে অন্যান্য রোগ ব্যাধির সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ চোখের চিকিৎসা শুধু ছানি অপারেশন, ও গ্লাউকোমার থেরাপিতেই সীমাবদ্ধ নয়৷ এর ব্যাপ্তিটা আরো অনেক বেশি৷ বলেন প্রফেসর ব্যার্টল্ড সাইটৎস৷ বিষয়টি অনেক রোগীই বুঝতে পারেন৷ চক্ষু চিকিৎসককে জানান কৃতজ্ঞতা৷ কেননা তাঁর কাছে না এলে আসল অসুখটি যে ধরাই পড়তো না৷ মারাত্মক পরিণতির দিকে এগিয়ে যেত৷