পর্তুগালের খেলা
২১ জুন ২০১২ব্রুন হচ্ছেন পর্তুগালের এক নম্বর ভক্ত৷ নিজের দেশের একটি খেলাও মিস্ করতে রাজি নন তিনি৷ ৫৫ বছর বয়সি এই ফুটবল ভক্ত ১৯৮৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পর্তুগালের মাত্র তিনটি ফুটবল ম্যাচ দেখতে পারেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি ২৩৪ বার পর্তুগালকে খেলতে দেখেছি৷ তবে পোল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দেখতে পারিনি৷''
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আলবেনিয়ার বিপক্ষ পর্তুগালের একটি ম্যাচও মিস্ করেছেন এই ভক্ত৷ এই খেলাটা দেখতে না পারার কারণ অবশ্য ভিন্ন৷ ব্রুন জানান, আমি টিকিট কেটে ফেলেছিলাম এবং যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম৷ কিন্তু তখনই আমার স্ত্রীর একটি জরুরি অস্ত্রোপচার হয়৷ ফলে আমি তাঁর সঙ্গেই থেকে যাই৷
ফুটবল ছাড়া আরো যে দুটি জায়গায় সবচেয়ে দুর্বল ব্রুন, সেগুলো হচ্ছে নিজের স্ত্রী এবং সন্তান৷ স্ত্রীর সঙ্গে অবশ্য তাঁর পরিচয় এই ফুটবলের মাধ্যমেই৷ ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্বকাপ দেখতে গিয়ে পরিচয় তাঁর সঙ্গে, এরপর বিয়ে৷
ব্রুন কিন্তু অন্য দশটা ফুটবল ভক্তের মতো নন৷ বিশেষ করে যারা নিজের দল টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়লেই দ্রুত বাড়ির পথে রওয়ানা হয়৷ ব্রুন বরং গাড়ি চালিয়ে ফেরেন৷ যা কখনো কখনো অনেক লম্বা পথের হয়৷ টানা ছয়দিন ধরে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷ এই দেখুন, পর্তুগাল থেকে ইউক্রেন যেতে ৪,৭৮৯ কিলোমিটার পথ গাড়িতেই পাড়ি দিয়েছেন তিনি!
ব্রুন অবশ্য খেলা দেখতে গিয়ে হোটেলে থাকার বিলাসিতা করেন না৷ বরং নিজের গাড়িতেই আবাস তাঁর৷ রান্নার জন্য ছোট্ট একটা চুলা এবং শোয়ার জন্য বিছানা গাড়িতেই থাকে৷ বাকি থাকে গোসলের ব্যাপার৷ সেটা তিনি সম্পন্ন করেন, পর্তুগিজ ভক্তরা অবস্থান করছে এমন কোন হোটেলে অথবা কোন সুইমিং পুলে৷
২০১৪ সালে ব্রাজিল'এ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ৷ প্রশ্ন জাগতে পারে, সেখানে কিভাবে গাড়ি নিয়ে যাবেন ব্রুন? তিনি অবশ্য এই পরিকল্পনাও সম্পন্ন করেছেন৷ বললেন, ‘‘আমি আমার গাড়ি জাহাজে করে ক্যানাডা পাঠিয়ে দেব৷ সেখান থেকে গাড়ি চালিয়ে যাবো ব্রাজিল৷''
নিজের দেশের জাতীয় দলের খেলা দেখতে ব্রুনের এই দীর্ঘযাত্রা অধিকাংশ সময়ই আনন্দের হয়৷ অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন তিনি, অনেকে তাঁকে বাড়িতে দাওয়াত করে এবং রান্না করে৷ একবার অবশ্য বড় বিপদে পড়েছিলেন তিনি৷ দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার পথে সুদানের মরুভূমিতে পথ হারান ব্রুন এবং তাঁর এক বন্ধু৷ বন্ধু অবশ্য ছিলেন আলাদা গাড়িতে৷ কেননা, নিজের গাড়িতে তিনি একা চড়তেই পছন্দ করেন৷ যাক সেকথা, ভুল পথে গিয়ে গুন্ডাদের খপ্পড়ে পড়েন তাঁরা৷ পাক্কা কয়েকঘণ্টা কাটাতে হয় রাইফেল'এর নলের মুখে৷ পরে অবশ্য তাঁরা নিস্তার পান, সেটা সেই গুন্ডাদের রান্না করে খাইয়ে৷
পর্তুগালের সমর্থন করাটা সবসময় আনন্দের হয় না ব্রুনের জন্য৷ ২০০৪ সালে লিসবনে ইউরো কাপের ফাইনালে গ্রিসের কাছে হেরে যায় তাঁর দল৷ সেটা ছিল কার্লোস ব্রুন'এর জন্য খুব কষ্টের৷ পাক্কা তিনঘণ্টা কেঁদেছিলেন তিনি৷
ও হ্যাঁ, খেলা দেখতে এত ঘোরাঘুরির পয়সা কোথায় পান ব্রুন? এই প্রশ্ন মনে জাগছে তো? উত্তর হচ্ছে, লাগোস শহরে তিনটি দোকান আছে তাঁর৷ আয়ের উৎস এই দোকানগুলো৷
এআই / জেডএইচ (ডিপিএ)