শোক পালন করছে জার্মানি
২৬ মার্চ ২০১৫মঙ্গলবার বার্সেলোনা থেকে ড্যুসেলডর্ফে আসার পথে ফ্রান্সের অংশের আল্পস পর্বতমালায় বিধ্বস্ত হয় জার্মানির বিমান সংস্থা জার্মানউইংসের ৪ইউ৯৫২৫ ফ্লাইট৷ এয়ারবাসটিতে ১৪৪ জন যাত্রী এবং ৬ জন বিমানকর্মী ছিলেন৷ দুটি শিশু এবং জার্মানির একটি স্কুলের ১৬ জন শিক্ষার্থীও ছিল তাদের মধ্যে৷ আল্পসে বিমানটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গেছে তাদের জীবন৷
৭২ জন জার্মান, কমপক্ষে ৫১ জন স্প্যানিশ, ৩ জন অ্যামেরিকান এবং ৩ জন ব্রিটিশ মিলিয়ে মোট ১৮টি দেশের নাগরিক ছিল বিমানটিতে৷ সবার পরিবারেই নেমেছে শোকের ছায়া৷ জার্মানি আর স্পেন শোকে মূহ্যমান৷ দুর্ঘটনার পরের দিন, অর্থাৎ বুধবারই জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখই দুর্ঘটনাস্থলে যান৷ হেলিকপ্টার থেকে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছেন তাঁরা৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদও ছিলেন ম্যার্কেলের সঙ্গে৷ এছাড়া স্পেনে চলছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক৷
বৃহস্পতিবার নিহতদের স্বজনরাও ফ্রেঞ্চ আল্পসের কাছে গিয়ে প্রয়াত প্রিয়জনদের শেষ বিদায় জানাবেন৷ এভাবে হারানো স্বজনদের বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা সারার পরও তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন থাকবেই- কেন ঘটল এমন দুর্ঘটনা? কী কারণে অকালে হারাতে হলো প্রিয়জনদের?
প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই চলছে তদন্ত৷ ইতিমধ্যে অনুমাননির্ভর কিছু কারণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও শুরু হয়ে গেছে৷ ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা বিমানের ককপিট রেকর্ডিংয়ে দুর্ঘটনার সময় একজন পাইলটের ককপিটের বাইরে থাকার ইঙ্গিত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে এক সূত্র জানিয়েছে, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ থাকায় সেই পাইলট অনেক চেষ্টা করেও ককপিটে ঢুকতে পারেননি৷
এক জার্মান সামরিক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমসও জানিয়েছে একই তথ্য৷ সেখানে জার্মান সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘বাইরে থেকে একজন দরজায় হাল্কাভাবে আঘাত করছিলেন৷ কেউ সাড়া দেয়নি৷ তারপর জোরে আঘাত করা হলো৷ তবুও জবাব আসেনি৷ কেউ আর সাড়াই দেয়নি৷ শেষে তো বাইরে থেকে দরজা ভেঙে ফেলারও চেষ্টা করা হয়েছে৷''
জার্মানির রাষ্ট্রীয় বিমান কর্তৃপক্ষ লুফটহানসা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অন্বেষণের জন্য সব ধরণের চেষ্টাই করা হচ্ছে৷ কারণ জানামাত্রই সবাইকে তা জানানো হবে৷
এদিকে বিমান চালনা সম্পর্কিত এক বিশেষজ্ঞ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘পাইলট যদি স্বেচ্ছায় বিমানটিকে পাহাড়ের দিকে না নিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁরা (পাইলট) অজ্ঞান হয়ে থাকলে, মারা গিয়ে থাকলে বা নিজে মরার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে, কিংবা কেউ তাঁদের মরতে বাধ্য করে থাকলেই কেবল এমনটি হওয়া সম্ভব৷''
শেষ মুহূর্তে পাইলটদের কী হয়েছিল সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেননা, লুফটহানসা জানিয়েছে, ককপিটে যাঁরা ছিলেন বিমান চালনায় যথেষ্ট অভিজ্ঞ ছিলেন তাঁরা৷ তাছাড়া বিমানটিও পুরোপুরি ঠিক ছিল বলেই দাবি করছে জার্মানউইংস৷
এসিবি/জেডএইচ (এএফপি, রয়টার্স)