শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার উদ্দেশ্য কী?
১৩ এপ্রিল ২০১৮গত ৩১ জানুয়ারি হাতিরঝিল এলাকায় বিজিএমইএ ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷ তিনজন আহত হন৷ ওই ঘটনায় সংগঠনটির অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম রমনা থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন৷ মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড়শ’ জনকে আসামি করা হয়৷ অভিযোগ করা হয়, রামপুরার আশিয়ানা নামের পোশাক শ্রমিক এবং শ্রমিক নেতারা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর এবং বিজিএমই’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যার চেষ্টা করে৷
৪ ফেব্রুয়ারি মামলার আসামিরা হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন৷ ১ এপ্রিল গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষসহ আটজন নেতা ঢাকার মহানগর হাকিম মিজানুর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন৷ কিন্তু আদালত মন্টু ঘোষের জামিন মঞ্জুর করে বাকিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷
যাঁদের কারাগারে পাঠানো হয় তাঁরা হলেন: মামলার আসামি এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মিন্টু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাজেদুর রহমান শামীম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মঞ্জুর মঈন, সংগঠনের গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জালাল হাওলাদার, আশুলিয়া থানা শাখার সভাপতি লুৎফর রহমান এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. শাহজাহান৷
গত ৫ এপ্রিল তাঁরা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন দেন৷ তাঁদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকায় তাঁরা এরইমধ্যে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷ মুক্তি পাওয়ার পর গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি এবং সংগঠনের সভাপতি মন্টু ঘোষসহ আরো কয়েকজন ঘটনার দিন ঢাকার বাইরে ছিলাম৷ তারপরও আমাদের আসামি করা হয়েছে৷ আর বিজিএমইএ ভবনের সামনে আশিয়ানা গার্মেন্টসের ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন না দিয়ে পকেট সংগঠনকে অনুমোদন দেয়ার প্রতিবাদে সমাবেশ ছিল৷ ওই গার্মেন্টসটি ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন না দিয়ে শ্রমিক নেতাদের ছাঁটাই করে এবং কারখানা বন্ধ করে দেয়৷ ওখানে শ্রমিকদের ওপর হামলা চালালে মারামারির ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু শ্রমিকদের মামলা না নিয়ে বিজিএমইএ'র মামলা নেয়া হয়৷’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা ট্রেড ইউনিয়নের রেজিষ্ট্রেশন চাওয়ায় এবং শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার জন্য আন্দোলন শুরু করায় আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়৷ তাঁরা আমাদের কারাগারে রাখতে চাইছিল, যাতে আমরা ট্রেড ইউনিয়ন ও ১৬ হাজার টাকা বেতনের দাবি নিয়ে আন্দোলন করতে না পারি৷’’
তবে মামলার বাদী বিজিএমই'র অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক মামলা করেছি কিনা সেটা আদালতেই প্রমাণ হবে৷ কারা হামলা করেছে কারা করে নাই এটা আদালতই নির্ধারণ করবে৷ তদন্ত চলছে, তদন্তেই প্রমাণ হবে৷ আমরা যে অভিযোগ করেছি তা সঠিক বলেই অভিযোগ করেছি, আমাদের অভিযোগ শতভাগ সত্য৷’’
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘‘আমরা ভিডিও ফুটেজ ধরে দুইজনকে আটক করেছিলাম৷ তবে সব আসামি হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ায় তাদের আর রিমান্ডে নিতে পারিনি৷ আমরা মামলার তদন্ত করছি৷ তবে কবে চার্জশিট দিতে পারবো তা বলা যাচ্ছে না৷’’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মামলা হত্যাপ্রচেষ্টার হলেও ঘটনা ভাঙচুরের৷’’
ডয়চে ভেলেকে জলি তালুকদার জানান, ‘‘আমরা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, আমাদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা ও ট্রেড ইউনিয়নের জন্য আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি৷ শুক্রবার ঢাকায় বড় সমাবেশ ডেকেছি প্রেসক্লাবের সামনে৷’’