1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পায় না’

১০ জানুয়ারি ২০১৭

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৮ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি কুটির শিল্প রয়েছে৷ সেই শিল্পে সরকারের উদ্যোগ, সহায়তাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার৷

https://p.dw.com/p/2VYNy
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার
মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখারছবি: DW/S. Kumar

ডয়চে ভেলে: এই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সেক্টরে একটা বিশৃঙ্খলা আছে, অনেক জায়গায় অনেক নারী এই শিল্পে কাজ করছেন, এটাকে কীভাবে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব?

মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার: দেশব্যাপী যে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প আছে, তাদের নিবন্ধনের জন্য আমাদের একটা চেষ্টা আছে, কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না৷ শিল্পনগরীতে যেগুলো আছে, সেগুলোর রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে৷ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কাজ করতে হলে রেজিস্ট্রেশন লাগে, যেমন বিদ্যুৎ নিতে গেলে রেজিস্ট্রেশন লাগে, সেগুলো হচ্ছে৷ এছাড়া আমাদের কিছু লোক আছে যারা গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে বেড়ায়৷ সেভাবেও রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে৷ এর বাইরেও বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে৷ এর প্রথম অন্তরায় হলো, আমাদের কার্যক্রম জেলা পর্যায় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ৷ জেলার বাইরে আমাদের যেতে হলে সেই পরিমাণ রিসোর্স দরকার এবং প্ল্যানিংটাও সেভাবেই নিতে হবে৷ এখানে আমাদের একটা দুর্বলতা আছে৷ আর কাজের পরিবেশ, যেটা হলো, শিল্প নগরীতে যে প্লটগুলো আছে সেখানে কেউ কিছু করতে চাইলে আমাদের কাছে অনুমোদন চায়৷ আমরা তখন তাঁদের কীভাবে ভবন হবে, পানির লাইন বা সুয়ারেজ লাইন কী হবে সেটা আমরা বলে দেই৷ কিন্তু শ্রমিকরা কীভাবে কাজ করবে সেটা দেখভাল করার কাজটি আমাদের কাজের আওতায় পড়ে না৷

মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার

পুরো সেক্টরকে কীভাবে মনিটরিং বা সমন্বয় করা সম্ভব?

এসএমই সেক্টরটা এত ব্যাপক যে, এটা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আছে৷ এটাকে তো অবশ্যই একটা মনিটরিংয়ের মধ্যে আনতে হবে৷ আসলে এটার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া দরকার৷ আমাদের একটা সেমিনার হয়েছিল ২০০৫ সালে৷ সেখানে অনেক পরামর্শ উঠে এসেছিল৷ সেটার ভিত্তিতে আমাদের একটা ভালো পরিকল্পনা নিতে হবে৷ শুধু যে বিসিক এটা করবে, এমন নয়৷ সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই এটা করা দরকার, কারণ, অন্যদেরও তো জনবল আছে, সেগুলোকে কিভাবে ব্যবহার করে আমরা কীভাবে গ্রাম-উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি, সেটা দেখতে হবে৷ এটা এখনও হয়নি৷ আমাদের যে এসএমই ফাউন্ডেশন আছে, তারাও কিন্তু কাজ করে চলেছে৷ তারা, আমরা ও সিভিল সোসাইটি মিলে খুব দ্রুতই আমাদের একটা প্ল্যানিং করা দরকার৷

এটার সঙ্গে তো বিপুল সংখ্যক মানুষ, প্রচুর প্রতিষ্ঠান জড়িত৷ এর মধ্যে কত ভাগকে আপনারা আপনাদের নেটওয়ার্কিংয়ের মধ্যে আনতে পেরেছেন?

এটা নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো ধারণাও আমি দিতে পারব না, কারণ, এটার কোনো পরিসংখ্যান আমার সামনে নেই৷

আপনাদের বা এসএমই ফান্ডেশন একসঙ্গে বা পৃথকভাবে কাজ করছেন, এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কি কোনো সমন্বয় আছে? 

সাধারণ অর্থে বলা যায় সমন্বয় আছে৷ বিসিক-এর চেয়ারম্যান এসএমই ফাউন্ডেশনের সদস্য, অর্থাৎ বোর্ড মেম্বার৷ বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব) সাধারণ সম্পাদক এটার বোর্ড মেম্বার৷ আমাদের কাজ-কর্মে যাতে ডুপ্লিকেশন না হয় সেটার একটা সমন্বয় হয়৷ আর ক্রেডিট (ঋণ) যেটা তারাও দেয়, আমরাও দেই, কিন্তু এখানে ডুপ্লিকেশন যাতে না হয়, সেটা এড়ানোর কোনো মেকানিজম আমাদের নেই৷ এটার যদি একটা ডেটাবেজ থাকত, তাহলে দেখা যেত, তারা কাদের ঋণ দিচ্ছে, আমরা কাদের দিচ্ছি৷ তাহলে এই ডুপ্লিকেশনটা বোঝা যেত৷ এখন আমরা বুঝতে পারি না কে কাকে ঋণ দিচ্ছে৷ এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা যখন জেলা পর্যায়ে যান, তখন কিন্তু আমাদের অফিসের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেন৷ তারপরও ওভারল্যাপিং হচ্ছে কিনা, সেটা আমি বলতে পারব না৷

পুরো সেক্টরকে এক ছাতার নীচে আনার ব্যাপারে আপনার কী পরামর্শ?

এই সেক্টরে এতগুলো ‘প্লেয়ার' আছে যে, তাদের কিভাবে সমন্বয় করা যায় সেটাই একটা প্রশ্ন৷ আমার মনে হয়, প্রথমত আইনের দিকে দেখতে হবে৷ আমাদের যে কটেজ ইন্ডাস্ট্রি অ্যাক্ট আছে সেটা একটু দেখতে হবে৷ সেখানে তাঁত বোর্ড আছে, এসএমই ফাউন্ডেশন আছে, এনজিওরা আছে, স্কিল টেনিং দিচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর৷ আর ফান্ড আসছে বিভিন্ন দিক দিয়ে৷ কিন্তু ওদের এককভাবে পৃষ্ঠপোশকতা করার দায়িত্ব কিন্তু বিসিক-এর৷ এদের সবাইকে নিয়ে একটা পদ্ধতি বের করার চিন্তাভাবনা করতে হবে আমাদের৷ আর আইনের যে কথা বললাম, আইনে বাধ্যবাধকতা দিলে তখন কিন্তু এটা সবাইকে করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত হলো, ২০১৫ সালে আমাদের একটা বিশাল সম্মেলন হয়েছিল৷ সেখানে কিছু সাজেশন এসেছে৷ সেগুলো নিয়েও কিছু অ্যাকশন প্ল্যান করতে হবে৷ তাহলেও কাভারেজ বেড়ে যাবে এবং সমন্বয়টা বাড়বে৷ আর সাধারণভাবে তো বলাই যায়, বিসিকের অফিস যদি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নেয়া যায়, তাহলেও সমন্বয়টা বাড়বে, কারণ, এটা বড় রোল হলো বিসিকের৷ কারণ অন্যের উপর ভরসা করলে অনেক কাজ হয়, আবার অনেক কাজই হয় না৷ এভাবে আমরা ভাগাভাগি করে কিছু কাজ তো করতেই পারি৷

এই সেক্টরে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অধিকাংশই নারী৷ তাঁরা বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে, সুতা নিচ্ছে, কাপড় নিচ্ছে, তারপর ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে তাঁদের তৈরি প্রোডাক্টগুলো বেচতে বাধ্য হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে তারা কি ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে? এখানে বিসিক কি কোনো ভুমিকা রাখতে পারে?

কিছু কিছু এনজিও কিন্তু শেয়ার ট্রেড ভিত্তিতে কাজটা করে৷ ওই এনজিওগুলো লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নেয়৷ আবার দাদন পদ্ধতিতেও ঋণ দেয়া হয়৷ সেই ক্ষেত্রে এর সঙ্গে জড়িতরা ন্যায্য মজুরি যে পায় সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না৷ বিসিক এক্ষেত্রে কতটা ভুমিকা নিতে পারে? বিসিককে তো এ ব্যাপারে ম্যান্ডেট দিতে হবে৷ আমি একটু আগে যে আইনের কথা বললাম, তার কারণ আমরা সাউথ ইস্ট এশিয়া বা ইন্টার্ন রিজিয়নের যে দেশগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে স্টাডি করছি৷ সেখানে আমরা দেখলাম, বিভিন্ন দিকে প্রোটেকশনের জন্য রেগুলেশন করতে হবে৷ আইন তো আছে৷ এ কারণে আমরা এখন আইনটা রিভিউ করছি৷ বিসিক যদি পৃষ্ঠপোষক হয়, কিন্তু সাপোর্ট না পায়, তাহলে তো কাজগুলো করতে পারবে না৷ বিসিককে যদি দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে এনজিওরা কী করছে, কারা দাদন দিচ্ছে, সব কিছু মিলিয়ে আমরা প্রোটেকশন দিতে পারব৷

এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িত অবহেলিত নারীদের নিয়ে বিসিক-এর কোনো ভাবনা কি আছে?

আমরা তো আসলে নারীকে নারী বিবেচনা করি না৷ আমরা তাঁদের এন্টারপ্রেনর হিসেবে দেখি৷ এরপর তাঁকে আমরা প্রশিক্ষণ দেই৷ তাতে তিনি ক্ষুদ্রশিল্প নিয়েই কাজ করুক বা মাঝারি বা কুটির শিল্প নিয়েই কাজ করুক৷ তবে সবাইকে বিবেচনায় নিতে হবে, আমাদের ক্ষমতা কিন্তু এতদূর বাড়ানো হয়নি৷ এ কারণে তারা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন কিনা, ন্যায্য লভ্যাংশ পাচ্ছেন কিনা, তা তো আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না৷ ইদানীং যে হস্তশিল্প নীতিমালা হয়েছে, সেখানে সরকার ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে৷ এটা নিয়ে আমরা ব্যাপক একটা প্রকল্প গ্রহণ করব৷ ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ এবং সরকারের কাছেও লবিং করব যাতে আমাদের সামর্থটা বাড়ে৷ তাহলে হয়ত আমরা অচিরেই সেখানে যেতে পারব৷

বন্ধু, সাক্ষাৎকারটা কেমন লাগলো? আপনার মন্তব্য জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য