শ্রীনগরে বিতর্কিত এনকাউন্টার, বিক্ষোভ
১৮ নভেম্বর ২০২১সোমবার রাতে শ্রীনগরের হায়দরপোরা অঞ্চলে একটি দোকানে অপারেশন চালায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, সেখানে এক পাকিস্তানি এবং এক কাশ্মীরি জঙ্গি লুকিয়ে ছিল। পুলিশ দেখেই তারা পাল্টা গুলি চালায়। পুলিশও গুলি চালাতে বাধ্য হয়। তাতেই ওই দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ দাবি করেছিল, এনকাউন্টারের সময় জঙ্গিদের গুলিতেই আরো দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ওই জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল তারা। পরে অবশ্য পুলিশ জানায়, ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয়েছে ওই দুই ব্যক্তির।
পুলিশের দাবি মানতে রাজি নয় মৃতদের পরিবার এবং স্থানীয় মানুষ। মঙ্গল এবং বুধবার দিনভর শ্রীনগরের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তারা। রাতে তাদের পুলিশ আটক করে বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দেয়। যা নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরো বাড়ে। অভিযোগ, ঘটনার পর শ্রীনগর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ওই চার ব্যক্তির মৃতদেহ কবর দিয়ে দেয় পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলার যুক্তি দিয়ে পরিবারের হাতে দেহ দেওয়া হয়নি।
মৃত ব্যক্তিদের অন্যতম মুদাসির গুল। পেশায় দাঁতের চিকিৎসক মুদাসিরের স্ত্রী জানিয়েছেন, এক পুলিশকর্মী এসে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, বিক্ষোভস্থল থেকে সরে গেলে তাদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে। পরিবার লিখিত আশ্বাস চেয়েছিল। এরপরেই বড় বড় গাড়িতে সশস্ত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিবারের লোকেদের আটক করা হয়।
আরেক মৃত ব্যক্তি আলতাফ ভাট। পেশায় ব্যবসায়ী আলতাফের মেয়ে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন তার বাবাকে মারা হলো। উত্তরে পুলিশকর্মীরা কেবল হেসেছেন।
সকলেরই অভিযোগ, ঠান্ডা মাথায় পুলিশ খুন করেছে ওই ব্যক্তিদের। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। পুলিশ অবশ্য এখনো নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনেই কথা বলছে।
এনকাউন্টারে তৃতীয় যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তার নাম আমির মাগরে। পুলিশ এই ব্যক্তিকে জঙ্গি বলে অভিহিত করেছে। আমিরের বাবার নাম আবদুল লতিফ মাগরে। ২০০৫ সালে বিশেষ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। এক জঙ্গির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পাথর দিয়ে তাকে মেরেছিলেন তিনি। যার জন্য সেনার সংশাপত্রও পেয়েছিলেন। তার বাড়ির বাইরে এখনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। ছেলেদের কীভাবে গোপনে বড় করতে হয়েছে তাকে, সে কথা এর আগেও বলেছেন তিনি। আবদুল লতিফ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ''বরাবর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। লড়াই করেছি। ছেলেদের সেই শিক্ষাই দিয়েছি। এখন আমার ছেলেকেই সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। এরপর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তাকর্মী আমাকে গুলি করেও বলবে যে, আমি সন্ত্রাসী।''
শ্রীনগরের এই এনকাউন্টার রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে উপত্যকায়। সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। পুলিশ সত্যিই ভুয়া এনকাউন্টার করেছে কি না, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এনডিটিভি)