ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সদিচ্ছা
২২ আগস্ট ২০১৩সংকট সামলাতে আর্থিক সহায়তা
ইউরোপে আর্থিক, অর্থনৈতিক ও ঋণ সংকটের জের ধরে জার্মানিতে সংস্কার চালানোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ধাক্কা খেয়েছে৷ তার বদলে সংকটের সময়ে শুধু আগুন নেভানোর চেষ্টা দেখা গেছে৷ তবে এর ফলেও উপকার হয়েছে৷ জার্মানিতে সংকটের আঁচ লাগে নি বললেই চলে৷ সরকারি ব্যয় কর্মসূচির ফলে সামগ্রিভাবে অর্থনীতির সুবিধা হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলিও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে৷ বিরোধীরা এই সাফল্যের কৃতিত্ব নিতে চাইলেও জনগণের একটা বড় অংশ কিন্তু চ্যান্সেলর ম্যার্কেলকেই বাহবা দিচ্ছেন৷ এসপিডি দল মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করছে, যে মহাজোট সরকারে থাকার সময় তারাই ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলির জন্য আর্থিক সহায়তার মূল হোতা ছিল৷
ভবিষ্যতের দিশা
ভবিষ্যতে কোন দিশায় পাড়ি দেবে জার্মানি? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর নেই৷ কার দৃষ্টিকোণ কী, তার উপর এই পূর্বাভাষ নির্ভর করছে৷ সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলি কী? গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে কোনো শিল্পপতিকে এই প্রশ্ন করলে তিনি বলতেন, কর্মী ও শ্রমিকদের জন্য একাধিক বাধ্যতামূলক ভাতার উচ্চ ব্যয়ভার৷ ২০১৩ সালেও আমলাতন্ত্রের লাল ফিতার ফাঁস দূর হয় নি৷ বেতন ও কর নিয়ে তেমন আলোচনা হচ্ছে না৷ তার জায়গা নিয়েছে দক্ষ কর্মীর অভাব এবং জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম৷ রাজনীতি জগতের দৃষ্টিকোণ থেকে দুটিই বড় সমস্যা৷
এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছে সামাজিক ন্যয় একটা বড় বিষয়৷ সংকটের সময় বেসরকারি ব্যাংক বাঁচাতে করদাতাদের কোটি কোটি ইউরো ব্যয় করা হয়েছে৷ রাষ্ট্রকে যে বাড়তি ঋণ নিতে হয়েছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশই ‘ফাইনানশিয়াল সেক্টর'-এর সংস্কারে কাজে লাগানো হয়েছে৷ অর্থাৎ জনগণকে বঞ্চিত করে এই অর্থ শিক্ষা ও অবকাঠামোর মতো খাতে ব্যয় করা সম্ভব হয়নি৷ আজকাল জার্মানিতেও ভাঙা রাস্তাঘাট বা জীর্ণ স্কুল ভবন খুঁজতে বেশি সময় লাগে না৷
নির্বাচনের প্রচারে ন্যায়ের ডাক
চাকরিক্ষেত্রেও ন্যয়ের অভাব নিয়ে অভিযোগ বেড়ে চলেছে৷ কর্মীদের মধ্যে বেতনের ফারাক বেড়েই চলেছে৷ একটি জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী জার্মানিতে প্রতি চারজন কর্মীর মধ্যে একজনকে স্বল্প আয়ের কর্মী বলা যেতে পারে৷ অর্থাৎ অনেক মানুষ আর একটি মাত্র চাকরি করে সংসার চালাতে পারছেন না৷ অনেকে একাধিক কাজ করছেন৷ কাউকে আবার সরকারের কাছে হাত পাততে হচ্ছে৷ অনেক মানুষ মনে করেন, অন্তত খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু অর্থের প্রয়োজন, কোম্পানিগুলির অন্তত সেই মাত্রায় বেতন দেয়া উচিত৷ বিরোধী এসপিডি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী পেয়ার স্টাইনব্রুক বলেন, ‘‘কোম্পানিগুলির ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিত, সামাজিক শান্তি রক্ষা তাদের জন্য কতটা জরুরি৷ কারণ এর সঙ্গে রপ্তানির সহযোগী হিসেবে গোটা বিশ্বে তাদের সুনাম জড়িয়ে আছে৷ তা কি তারা ঝুঁকির মুখে ফেলতে চায়৷
সংস্কারের নতুন উদ্যোগ?
জার্মানির অর্থনীতি জগত এমন বার্তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে৷ শিল্প সংগঠনের প্রধান গ্রিলো অবশ্য সেই সঙ্গে মনে করেন, অর্থনৈতিক সাফল্য ছাড়া আরও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়৷ তার জন্য চাই আরও কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ৷ শিক্ষা, অবকাঠামো ও বিদ্যুত সংযোগ ব্যবস্থায় বিশাল মাত্রায় বিনিয়োগ না করলে জার্মানির অর্থনৈতিক পরবৃদ্ধি আরও কমে যাবে বলে তাঁর আশঙ্কা৷ তাঁর মতে, ‘‘গোটা ইউরোপে জার্মানিকে আদর্শ মনে করা হয়৷ ভবিষ্যতেও সেই ভাবমূর্তি অক্ষত রাখতে হলে আমাদের স্থির করতে হবে, কোন পথে আমরা এগোবো৷''