সংকটেও চাঙ্গা অর্থনীতি
২২ আগস্ট ২০১৩জুন মাসে একটি কোম্পানি পরিদর্শনে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের জন্য, ইউরোপের জন্য আপনারা যা করছেন, তার জন্য ধন্যবাদ৷'' আজকাল ম্যানেজারদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের সুযোগও হাতছাড়া করছেন না তিনি৷ সংকটের এই দিনে জার্মানি যে গোটা ইউরোপে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার পেছনে জার্মান শিল্পজগতের অবদান কম নয়৷ সরকার ও বিরোধী – দুই পক্ষই নির্বাচনী প্রচারে তা নিজেদের কাজে লাগাতে চায়৷
জার্মানির অর্থনীতির সমৃদ্ধির প্রায় এক-চতুর্থাংশের পেছনেই শিল্পজগতের বিশেষ অবদান রয়েছে৷ প্রায় ৮০ লক্ষ কর্মী ও শ্রমিক এই ক্ষেত্রে কাজ করেন৷ জাতীয় শিল্প সংগঠনের প্রধান উলরিশ গ্রিলো তাই গর্বের সঙ্গে এই ক্ষেত্রকে ‘জব মেশিন' বলে থাকেন৷
গোটা বিশ্বে ‘মেড ইন জার্মানি'-র কদর
বিশ্বের অন্য কোনো দেশে মাঝারি মাপের শিল্প প্রতিষ্ঠানের এমন শক্তিশালী অবস্থান নেই, যেমনটা জার্মানিতে দেখা যায়৷ তাদের বেশিরভাগই পারিবারিক মালিকানায় চলে৷ ৫০০-র কম কর্মী-শ্রমিক থাকলেই জার্মানিতে তাকে ‘মিটেলস্টান্ড' বা মাঝারি মাপের শিল্প প্রতিষ্ঠান বলা হয়৷
‘মেড ইন জার্মানি'-র কদর আজও কমেনি, বিশেষ করে উয়মান শক্তিধর দেশগুলিতে চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ গাড়ি, যন্ত্রপাতি ও রসায়ন শিল্প এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে৷ জার্মানির রপ্তানির প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ‘প্রসেসিং' বা প্রক্রিয়াজতকরণ ক্ষেত্রের ভাগে পড়ে৷ সবাই জার্মানির উদ্ভাবনী শক্তিকে সমীহ করে৷ জার্মানিতে গবেষণা ও বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবার বিকাশের ক্ষেত্রে যে অর্থ ব্যয় করা হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশই দেয় বেসরকারি শিল্প সংস্থাগুলি৷ ইউরোপের বাকি শিল্পোন্নত দেশগুলির ক্ষেত্রে এই অনুপাত বড়জোর ৭০ শতাংশ৷
এই সাফল্যের রহস্য কী? উলরিশ গ্রিলো মনে করেন, ‘‘আজ জার্মানি যে অবস্থানে পৌঁছেছে, তার পেছনে গত প্রায় ১৫০ বছরের শিল্পনীতি কাজ করছে৷ শিল্পই জার্মান অর্থনীতির সবচেয়ে মজবুত ভিত্তি ছিলো, আছে এবং থাকবে৷'' তাঁর মতে, ইউরোপের যে সব অঞ্চলে শিল্পক্ষেত্র তেমন বড় ভূমিকা পালন করে না, সে সব এলাকা দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ তিনি মনে করেন, দুর্বল শিল্পক্ষেত্র মানেই নাটকীয় মাত্রার বেকারত্ব ও সমাজের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়া৷ গোটা ইউরোপে জার্মানির শিল্পক্ষেত্রই সবচেয়ে বড়৷
বিশাল পতন, দ্রুত উত্থান
জার্মানিও প্রথম দিকে আর্থিক সংকটের কবল থেকে রক্ষা পায় নি৷ ২০০৯ সালে জার্মানির ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় ৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল৷ কিন্তু মাত্র দু বছরের মধ্যেই সে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে সংকটের আগের অবস্থায় ফিরতে পেরেছিলো৷ কাজটা মোটেই সহজ ছিল না, কারণ মনে রাখতে হবে, যে শতাব্দীর শুরুতে জার্মানিকে ‘ইউরোপের রুগ্ন পুরুষ
' বলা হতো৷ ১৯৯৮ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী ও সবুজ দলের সরকার ক্ষমতায় এসে বিশাল মাপের সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলো, যার পোশাকি নাম ছিল ‘অ্যাজেন্টা ২০০০'৷ তার আওতায় শ্রমবাজার ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলা হয়েছিলো৷ ২০০৭ সালে দুই বড় দলের ‘গ্র্যান্ড কোয়ালিশন'-ও সেই কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যায়৷ অবসর নেবার বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ করা হয়৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আজ আমাদের অবস্থা ভালো, কারণ আমরা শ্রমবাজার ও সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর সংস্কারের কাজ করেছি৷'' গত এক দশকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জার্মানি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে বলে মনে করেন জার্মান বিশেষজ্ঞ ব্যার্ট ব়্যুরুপ৷