সংগঠিত হচ্ছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম?
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯শুধু সম্পাদক হত্যার পরিকল্পনা নয় এবিটি'র সদস্যরা ‘ইসলাম বিদ্বেষী' অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের চিহ্নিত করে তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করে আসছিল৷ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) এবিটির যে চারজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব বিষয় নিশ্চিত হয়েছে৷
৩১ জানুয়ারি উত্তরা এলাকা থেকে এবিটি'র বিশেষ সেলের যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তারা হল: শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মো. আম্মার হোসেন (২০), রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪), রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪) এবং আব্দুল মালেক (৩১)৷ তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে৷ ২৮ জানুয়ারি সাভারের আশুলিয়া থেকে এবিটি'র সদস্য আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিবকে গ্রেপ্তার করে র্যাব৷ তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ওই চারজনকে আটক করা হয়৷
শুক্রবার র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের টার্গেটে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকের সম্পাদকের নামও ছিল৷ পত্রিকায় বিয়ে সংক্রান্ত একটি হাদিস প্রকাশ করায় তাকে ‘ইসলামবিদ্বেষী' হিসেবে চিহ্নিত করে হত্যার টার্গেট করেছিল এবিটি'র সদস্যরা৷''
তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘‘তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছে সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রাহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা৷ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল তাদের৷ এজন্য তারা এরইমধ্যে অর্থ সংগ্রহ করেছে৷''
বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিরপুরে ব্লগার ও শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে৷ গণজাগরণ মঞ্চ শুরুর ১০ দিনের মাথায় তাকে হত্যা করা হয়৷ ওই হত্যা মামলায় দু'জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং এবিটি প্রধান নেতা মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীসহ ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ জসীমউদ্দীন রাহমানী এখন ওই মামলায় কারাভোগ করছেন৷ তাকে ৩১ জন অনুসারীসহ ২০১৩ সালের আগস্টে গ্রেপ্তার করা হয়৷
পুলিশ জানায় এই জঙ্গি সংগঠনটিই বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, এলজিবিটি ও ভিন্ন চিন্তার লোকজনকে হত্যার সঙ্গে জড়িত৷ তাদের হাতে এ পর্যন্ত ১০ জন নিহত হয়েছেন৷
২০১৫ সালের ২৫ মে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়৷ তখন তারা বাংলাদেশে আনসার আল ইসলাম নামে কাজ শুরু করে৷ জঙ্গি বিষয়ক রিপোর্টার এবং বাংলা ট্রিবিউনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নুরুজ্জামান লাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে কাজ শুরু করেছিল৷ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা মূল নাম আনসার আল ইসলাম নামে কাজ শুরু করে৷''
কারাগারে আটক জসীমউদ্দীন রাহমানী মূলত এই জঙ্গিগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক নেতা৷ তাদের অপারেশনাল কমন্ডার হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জিয়া৷ তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি৷ এই মেজর জিয়াই এখন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামকে সংগঠিত করছে৷''
নুরুজ্জামান লাবু জানান, ‘‘রাহমানী জেলে যাওয়ার পর পুরো সংগঠনের দায়িত্ব নেন সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক৷ বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এখন এই আনসার আল ইসলামই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ কারণ জিয়া সেনবাহিনীর কমান্ডো অফিসার ছিলেন এবং তিনি ধরা পড়েননি৷ জিয়া আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যে তথ্য পেয়েছে তা হলো, তারা ব্যক্তি টার্গেটের বাইরেও স্থাপনা টার্গেট করছে৷ তারা যে কিছু স্থাপনা রেকি করেছে তার তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে আছে৷ আর জিয়া নানা কৌশলে দলকে সংগঠিত করছে৷ তাদের স্লিপার সেলগুলো নিবিড়ভাবে কাজ করছে৷''
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ফের সংগঠিত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুক্রবার আমরা সংবাদ সম্মেলনে যে তথ্য দিয়েছি তার বাইরে আপাতত নতুন কোনো তথ্য নেই৷ তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হয়তো আরো তথ্য জানা যাবে৷''
শুক্রবার র্যাব তাদের সংগঠিত হওয়া, হামলা পরিকল্পনা এবং অর্থসংগ্রহের কথা প্রকাশ করে৷
এদিকে নিরপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার প্রবণতা সব সময়ই৷ তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা একটু কমলেই তাদের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা আরো বেড়ে যায়৷ তাই জঙ্গিবিরোধী অভিযানে কখনোই ঢিল দেয়া যাবে না৷''
তবে তিনি বলেন, ‘‘এই যে জঙ্গিরা ধরা পড়ছে তাতে প্রমাণিত হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে৷''